ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

বিএনপিকে নির্বাচনে আনার চেষ্টা, বিদেশিদের দৌড়ঝাঁপ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০  
আপডেট :
 ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০৮

বিএনপিকে নির্বাচনে আনার চেষ্টা, বিদেশিদের দৌড়ঝাঁপ
ছবি: সংগৃহীত

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দল যেন অংশগ্রহণ করে সেই চেষ্টাই চালাবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করতে হবে। সেই পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। আগামী নির্বাচন যাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয় সেই চেষ্টাও করবে তারা। দলের নেতাকর্মীরা বারবার জনগণের কাছে গিয়ে ভোট চাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। এজন্য বিএনপিসহ অন্যান্য সব রাজনৈতিক দল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক তা নিশ্চিত করতে চায় আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।

এদিকে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার চেষ্টা করছে বিদেশীরাও। এ লক্ষ্যে চলছে বিভিন্ন দেশের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের দৌড়ঝাঁপ। বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সংবিধানের মধ্যে থেকেই যেন নিরপেক্ষ নির্বাচন দেয়া হয় সে লক্ষ্যে একমত বিশ্বের সব দাতা রাষ্ট্র।

এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী নির্বাচন বিশ্বাস যোগ্য, সুষ্ঠু, অবাধ হবে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং নির্বাচন কমিশনকে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করবে। আমরা আগামী নির্বাচন সামনে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছি। এদিকে নির্বাচনে আসতে বিএনপিকেও চাপ দেয়া হচ্ছে বলে গোপন সূত্রে জানা গেছে। অন্যদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন নয় এ দাবিতে অনড় থাকলেও বিএনপির সাম্প্রতিক সুর একটু নরম হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

অন্যদিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিদেশি কূটনীতিকদের আনাগোনা বেড়েছে। দেশে একের পর এক সফরে আসছেন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের শীর্ষ কূটনীতিক। প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ছাড়াও ঘুরেফিরে আসছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা। আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিয়েও মতামত দিচ্ছেন বিদেশিরা।

তবে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক করছেন না তারা। ফলে নির্বাচনের আগে কূটনৈতিক তৎপরতায় দলটি পিছিয়ে পড়ছে কিনা—এমন প্রশ্ন তুলছেন বিশ্লেষকরা। অবশ্য ঢাকা সফরে আসা কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনা না হলেও বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত নন বিএনপি নেতারা। কারণ, দলটির কূটনৈতিক উইং ঢাকায় নিযুক্ত কূটনীতিকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে, দেশের সর্বশেষ মানবাধিকার ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাদের অবহিত করে, তাদের সঙ্গে নিয়মিত চা-চক্রে মিলিত হয়।

বিএনপি নেতারা বলছেন, বিএনপির অবস্থান বিদেশিদের কাছে স্পষ্ট। তাই সফর আসা কূটনীতিকদের সঙ্গে তাদের বৈঠকের দরকার নেই। দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচনের বার্তা দিতেই তারা বাংলাদেশে আসছেন। এর মধ্য দিয়ে সরকারের ওপর বরং চাপ তৈরি হচ্ছে। জানতে চাইলে বিএনপির ‘ফরেইন অ্যাফেয়ার্স কমিটি’র প্রধান ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা সরকারকে বার্তা দেয়ার জন্যই আসছেন। বাংলাদেশের জনগণের অধিকার, গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, আইনের শাসন, নিরাপত্তা-এই বিষয়গুলো আজকে বিদেশিদের কাছে পরিষ্কার। এখানে তাদের অ্যাম্বাসি আছে, মিশন আছে। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে ওরা কথা বলছেন। জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিষয়টি পরিষ্কার। এ ক্ষেত্রে বিএনপির মতামত নেয়ার তো প্রয়োজন নেই। বিএনপির অবস্থান তাদের কাছে পরিষ্কার।

এক প্রশ্নে তিনি বলেন, একটি দেশের সরকারের প্রতি আরেকটি দেশের সরকারের সমর্থন থাকতেই পারে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে তখন বিএনপি সরকারকেও ভারত সমর্থন দেবে। কান্ট্রি টু কান্ট্রি সমর্থন থাকতেই পারে, এটাই স্বাভাবিক।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশেষ উপদেষ্টা ডেরেক শোলে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের ভবিষ্যৎ কৌশল বিষয়ক বিশেষ দূত জ্যাং সুং মিন ঢাকায় আসেন। গতকাল তাদের সবাই ঢাকা ত্যাগ করেন। এর আগে গত ৮ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিশেষ উপদেষ্টা রিয়ার অ্যাডমিরাল এইলিন লউবেখার এবং ১৪ জানুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ঢাকা সফর করেন। এ ছাড়া ১০ জানুয়ারি চীনের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিন গ্যাং বাংলাদেশ সফরে আসেন।

জানা যায়, ঢাকাস্থ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বিএনপির কূটনৈতিক উইংয়ের নিয়মিত যোগাযোগের পাশাপাশি প্রয়োজনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ ছাড়া বিদেশেও দলটির কূটনৈতিক তৎপরতা রয়েছে। আমেরিকা, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কাজ করছেন। এ ছাড়া দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে অনেক নেতা নিয়মিত দেশের বাইরেও যাচ্ছেন, সেখানে দায়িত্বশীলদের সঙ্গে মিটিং করছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে বিএনপির ভিন্ন ভিন্ন নেতা কাজ করছেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত