ঢাকা, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

নির্দেশ দিয়ে আন্দোলনে নেতাকর্মীদের সক্রিয় করতে পারবে বিএনপি?

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:৩৭  
আপডেট :
 ২১ নভেম্বর ২০২৩, ১৮:৫৬

নির্দেশ দিয়ে আন্দোলনে নেতাকর্মীদের সক্রিয় করতে পারবে বিএনপি?
ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অবরোধ-হরতালের মত কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। লাগাতার এসব কর্মসূচি ঘোষণা করছে দলটি। কিন্তু বিএনপির নেতা-কর্মীদের এসব আন্দোলনে তেমন সক্রিয় উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে না। বিএনপি তাদের আন্দোলনে সাধারণ মানুষের সংশ্লিষ্টতার কথা বললেও তাদের হরতাল বা অবরোধের মত কর্মসূচি মানুষের সমর্থন আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছে বলেও বিশ্লেষকরা বলছেন।

এদিকে, বিএনপির নেতা-কর্মীদের অনেকের বিরুদ্ধেই মামলা বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। আবার কেউ কেউ আত্মগোপনেও আছেন। চলমান পরিস্থিতিতে নেতা-কর্মীদের মাঠে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে।

পরিস্থিতি পর্যলোচনা করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সন্দেহ প্রকাশ করছেন, এভাবে তাদের কতটা সক্রিয় করে তোলা যাবে, আন্দোলনের লক্ষ্য কতটা অর্জিত হবে।

২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও গ্রেপ্তারের পর থেকে একের পর এক হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। আন্দোলন সফল করতে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের আরও সক্রিয় করে তোলা ও তাদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে বিএনপির শীর্ষ মহলে।

এদিকে, বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে। ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় ৬০০ মামলা দেয়া হয়েছে। দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ‘ক্র্যাকডাউন’ চালিয়েছে বলে অভিযোগ করছে বিএনপি।

এর মধ্যেই বিএনপির মহাসচিব, জ্যেষ্ঠ নেতারাসহ একাধিক নেতা-কর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তারও করেছে। আন্দোলন দমন করার জন্য এসব গ্রেপ্তার ও সাজা দেয়া হচ্ছে বলে বিএনপি অভিযোগ করে।

২৮ অক্টোবরের সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে বিএনপির বিরুদ্ধে। ছবি: সংগৃহীত

অন্যদিকে, পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যানবাহনে আগুন ও সহিংসতার মামলা বা সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার-সাজা হওয়ায় আতঙ্কের মধ্যে আছেন অনেক নেতাকর্মীরা। অনেক নেতাকে গত কয়েক সপ্তাহে প্রকাশ্য কোন কর্মকাণ্ডে দেখা যায়নি। এসব কর্মসূচিতে বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা মিছিল বা রাস্তায় টায়ার পুড়িয়ে বিক্ষোভ প্রকাশ করা ছাড়া তেমন কোনো কার্যক্রম দৃশ্যমান ছিল না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তাদের আন্দোলনের সাথে জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণও দেখা যাচ্ছে না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক মহিউদ্দিন আহমেদের মতে, বিএনপি তাদের আন্দোলনে সাধারণ মানুষের সংশ্লিষ্টতার কথা বললেও তাদের হরতাল বা অবরোধের মত কর্মসূচি মানুষের সমর্থন আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছে।

মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপি ২০১৪-১৫ সালে এই ধরনের কর্মসূচি দিয়েও নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি, তাদের আন্দোলনও সফল হয়নি। এভাবে আন্দোলন করে লক্ষ্য কতটা অর্জন করতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও বলছেন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় নিশ্চিত করতে গ্রেপ্তারের ঝুঁকি নিয়েই নেতাকর্মীদের মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সামনের দিনগুলোতে হরতাল বা অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি নতুন ধরনের কর্মসূচি দেয়া হলে নেতাকর্মীরা আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখবে বলে ইঙ্গিত দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, গ্রেপ্তারের ঝুঁকি থাকলেও সরকারের পতন ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে আমরা বড় জমায়েত, সমাবেশের মত কার্যক্রমের মাধ্যমে আন্দোলন করলেও হরতাল, অবরোধের মত কর্মসূচি দেইনি। কিন্তু ২৮ তারিখের পর সরকার আমাদের মহাসচিব থেকে শুরু করে স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য, কেন্দ্রীয় নেতাদের আটক করে আমাদের বাধ্য করেছে অবরোধের মত কর্মসূচিতে যাওয়ার জন্য।

সারাদেশের বিএনপি নেতাকর্মীদের একটা বড় অংশ তাই আত্মগোপনে থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দাবি করেছে দলটি। বিএনপির তৃণমূলের নেতাদের অনেকেই বলছেন, এখন পর্যন্ত নানা কৌশল অবলম্বন করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ এড়িয়ে আন্দোলন চালিয়ে গেলেও ‘সময় আসলে প্রয়োজনে গণগ্রেপ্তার’ হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা রয়েছে তাদের।

অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচির সময় বাসে আগুনের ঘটনা ঘটে। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেছিলেন, গ্রেপ্তার বা মামলায় সাজা দিয়ে অনেক নেতাকে রাজনীতির মাঠ থেকে সরানো হলেও তাতে দলের অভ্যন্তরে কোন সংকট তৈরি হবে না। কারণ তারা মনে করেন দলটিতে নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা আছে এবং কেউ গ্রেপ্তার হলে বিকল্প নেতারাই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিবেন। আন্দোলন আরও জোরদার হলে সাধারণ মানুষ বেরিয়ে এসে সরাসরি অংশ নেবেন বলে তারা মনে করেন। এর মাধ্যমেই তাদের আন্দোলনের লক্ষ্য অর্জিত হবে বলে তাদের প্রত্যাশা।

তবে বিএনপি নেতারা সাধারণ মানুষের সমর্থনের কথা বললেও বাস্তব চিত্র হল, অবরোধ কর্মসূচির শুরুর দিকে রাস্তাঘাটে যান চলাচল তুলনামূলক কম দেখা গেলেও শেষ কয়েকদিনের অবরোধে অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল পরিস্থিতি। সবশেষ ১৯ ও ২০শে নভেম্বরের হরতালে দূরপাল্লার কিছু যানবাহনও ঢাকা ছেড়ে যেতে দেখা গেছে।

ঢাকা মহানগরের একজন বিএনপি নেতা বলছেন, আমরা সবাই যদি গ্রেপ্তার হয়ে যাই, তাহলে মাঠে কর্মকাণ্ড কে চালাবে? দেশে তো আসলে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করার মতো পরিবেশ নেই। এ কারণে সতর্কতা হিসেবে আমরা কিছুটা আড়ালে থাকছি, কিন্তু আমাদের আন্দোলন অব্যাহত আছে।

বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, চলমান আন্দোলনে তাদের ওপর মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় থাকার নির্দেশনা আসলেও সামনের দিনগুলোতে কর্মসূচি ঠিক কি হবে, সে বিষয়ে এখনও সুস্পষ্ট ধারণা নেই।

ময়মনসিংহের একজন বিএনপি নেতা বলছিলেন যে মাঠ পর্যায়ে আন্দোলনে সক্রিয় থাকার পাশপাশি তাদের ওপর এমন নির্দেশনা রয়েছে যেন ‘সময়মত প্রয়োজনে গণগ্রেপ্তার’ হওয়ার প্রস্তুতি থাকতে হবে। তবে কোন সময় বা কী পরিস্থিতিতে সেরকম কৌশল বেছে নেবেন তারা, স্বাভাবিকভাবেই সে বিষয়ে মন্তব্য করেননি এই নেতা।

প্রয়োজন হলে তারা আরও কঠোর কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার জন্যও প্রস্তুত রয়েছেন বলে তাদের দাবি।

এদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন নেতাকর্মীরা মাঠে সক্রিয় হলেও হরতাল বা অবরোধের মত পুরনো ধাঁচের কর্মসূচি দিয়ে দাবি আদায় করা কঠিন হবে বিএনপির জন্য। রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ মনে করছেন, নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের বিষয়টির চেয়ে আন্দোলনের নতুন কৌশল ও কর্মসূচি নির্ধারণ করা বিএনপির জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

‘২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে এই মাত্রায় মামলা হয়নি বা তাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। সেবারও কিন্তু বিএনপি আন্দোলন করে দাবি আদায় করতে পারেনি। বিএনপি ঐ নির্বাচন বর্জন ও প্রতিরোধের ডাক দিয়েছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারেনি।’

মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকার তাদের চাপে ফেলে কোণঠাসা করতে চাইবেই, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাদের হরতাল বা অবরোধের মত সনাতন কর্মসূচি থেকে বের হয়ে এসে এমন কর্মসূচি দিতে হবে যাতে জনসমর্থন আছে।

বিএনপিসহ আরো কয়েকটি দল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একদফা দাবিতে অনড় থাকলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি দল এরই মধ্যে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বেশ কিছুদিন ধরে বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে আসছেন এবং বলছেন যে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে তারা স্বাগত জানাবেন। তবে তফসিলের পর সংলাপের সম্ভাবনা তারা নাকচ করে দিয়েছেন।

বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন তারা সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

প্রসঙ্গত, ২২ ও ২৩ নভেম্বর ষষ্ঠ দফায় ৪৮ ঘণ্টার জন্য অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ২৮ অক্টোবরের পর থেকে এখন পর্যন্ত দুদিন করে পাঁচ দফা অবরোধ ও দুই দফায় তিনদিন হরতাল পালন করেছে তারা।

সূত্র: বিবিসি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত