বিয়ের কাজী এখন যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৪, ১৯:৪৮ আপডেট : ১০ জুলাই ২০২৪, ২০:২৬
সাত বছর রাজনীতিতে সক্রিয় না থেকে করেছেন ব্যবসা-বাণিজ্য। নিয়েছেন বিয়ের কাজী লাইসেন্স। পুরোদস্তুর সেই কাজী এখন জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। লবিং-তদবিরের মাধ্যমে বিএনপির সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন যুবদলে বিল্লাল হোসেন তারেকের এই পদায়নকে ঘিরে তৃণমূলে ক্ষোভ বিস্তারের পাশাপাশি চলছে হাস্য-রসাত্মক গল্প।
গত মঙ্গলবার বিএনপির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন ও রাজপথের ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত যুবদলের সুপার সিক্স কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। প্রায় ২৫ দিন পর ঘোষিত কমিটিতে রাজপথে ভূমিকা পালনকারী, ত্যাগী, নির্যাতিত আর যোগ্যদের বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত আর সিন্ডিকেটের নেতাদের দিয়েই কমিটি গঠন করেছেন বিএনপির হাইকমান্ড। এমনকি দলের নীতিনির্ধারক নেতাদের মতামতকেও পাত্তা দেয়া হয়নি এ কমিটি গঠনে। এতে হতাশ, ক্ষুব্ধ, বিস্মিত আর হতবাক হয়েছেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত কমিটিতে আব্দুল মোনায়েম মুন্নাকে সভাপতি এবং নুরুল ইসলাম নয়নকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটিতে সিনিয়র সহ-সভাপতি রেজাউল করিম পল, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক বিল্লাল হোসেন তারেক, সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান জুয়েল এবং দপ্তর সম্পাদক করা হয়েছে নুরুল ইসলাম সোহেলকে। এর মধ্যে মোনায়মে মুন্না বিগত কমিটির সাধারণ সম্পাদক, নুরুল ইসলাম নয়ন ১নং সহ-সভাপতি, রেজাউল করিম পল সহ-সভাপতি, বিল্লাল হোসেন তারেক যুগ্ম সম্পাদক, কামরুজ্জামান জুয়েল সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এবং নুরুল ইসলাম সোহেল সহ-দপ্তর সম্পাদক ছিলেন।
যুবদলের মতো সংগঠনের কেন্দ্রীয় আংশিক কমিটি ঘোষণা হলেও সারাদেশে নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়নি। পদ পাওয়া অনেক নেতাকে দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও চেনেন না বলে জানিয়েছেন।
সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক বিল্লাল হোসেন তারেকের বিষয়ে জানা যায়, ঢাকার নীলক্ষেত এলাকার সরকারি রেজিস্ট্রার কাজী লাইসেন্সধারী। গাউসুল আজম মার্কেটে অফিস রয়েছে। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের (জুয়েল-হাবিব কমিটি) সহসভাপতি এবং যুবদলের বিগত কেন্দ্রীয় কমিটির (টুকু-মুন্না) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তবে ২০১৩ -২০২০ সাল পর্যন্ত তাকে দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যায়নি।
জানা যায়, যুবদলের টুকু-মুন্না কমিটি ঘোষণার পর মুন্নার হাত ধরে এবং তার কোটায় বিল্লাল হোসেন তারেক যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক হন। এবার বিএনপির নির্বাহী সদস্য (দপ্তরে সংযুক্ত) আব্দুস সাত্তার পাটেয়ারীর সুপারিশে তারেককে যুবদলের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়ে এসেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে সাত্তার পাটোয়ারীর ওপর তারেক রহমান নির্ভর করেন বলে জানা গেছে। একই এলাকা চাঁদপুরের হওয়ায় সাত্তার পাটোয়ারীকে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-দপ্তর সম্পাদক করার পেছনে এই তারেকের অবদান ছিলো। এবার তার প্রতিদান দিতে মোটেও কার্পণ্য করেননি সাত্তার পাটোয়ারী।
অন্যদিকে, তার আপন ছোট ভাই শাহ পরান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৪-২০০৫ শিক্ষাবর্ষ ভর্তি হন। ক্যাম্পাসে সক্রিয় ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ছাত্রদলের অনেক নেতাকর্মীকে শাহ পরান নিজ হাতে নির্যাতন করতেন বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ দলীয় সুপারিশে কৃষি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার হিসাবে নিয়োগ পান শাহ পরান।
ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ছোট ভাইয়ের জড়িত থাকার বিষয়ে বিল্লাল হোসেন তারেক বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমার ছোট ভাই কখনো ছাত্রলীগ করেনি। সে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল করেছে। তৎকালীন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান বিএনপির সহ-তথ্য সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকনের সঙ্গে সে রাজনীতি করতো।
তিনি বলেন, আমি জাতীয়তাবাদী আদর্শের একজন কর্মী। ছাত্রজীবনে ছাত্রদল করেছি। তারপর যুবদল করছি। আন্দোলন-সংগ্রামে সব সময় রাজপথে থেকেছি। কমিটিতে আসার পর থেকে একটা পক্ষ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
বাংলাদেশ জার্নাল/এএইচ/এমপি