ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩১ মিনিট আগে
শিরোনাম

খুলনায় আজ প্রচারণা শেষ, সব কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৩ মে ২০১৮, ০০:১৯

খুলনায় আজ প্রচারণা শেষ, সব কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ

নানা জটিলতায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট পিছিয়ে যাওয়ায় সবার দৃষ্টি এখন খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিকে। আগামী ১৫ মে অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শেষ হচ্ছে আজ।

রবিবার মধ্য রাত থেকে প্রচারণা শেষ। এরপর শুধুই ভোটের অপেক্ষা। কিন্তু আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগ মুহুর্তে অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনকে ঘিরে চরম উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সিটি এলাকার পরিস্থিতি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে, এই সিটির ২৮৯টি ভোটকেন্দ্রের প্রায় সবকটি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এরমধ্যে ২৩৪টি কেন্দ্র অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। আর বাকি ৫৫টিকে তুলনামূলক কম ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করছে পুলিশ।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) অবশ্য এই সিটি নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। সুষ্ঠু ও অবাধ জাতীয় নির্বাচনের সক্ষমতা প্রমাণের এই সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করতে রাজী নয় সাংবিধানিক সংস্থাটি। রাজনৈতিক দল ও সাধারণ জনগণের আস্থা অর্জনের প্লাটফর্ম হিসেবেও দেখা হচ্ছে খুলনার সিটি ভোটকে।

ইসি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, যেকোনো মূল্যে খুলনা সিটি নির্বাচনকে অবাধ ও সর্বজনগ্রাহ্য করতে প্রাণান্তকর চেষ্টা রয়েছে কমিশনের। রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের মাঠে যতই জল ঘোলা করার চেষ্ঠা করুক না কেন ইসি কঠোর হাতে তা মোকাবেলা করবে। এজন্য ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ভোটের আগেই সিটি এলাকায় মোতায়েন করা হচ্ছে পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি, এপিপিএনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর প্রায় ১০ হাজার সদস্য।

এদিকে খুলনায় জয় পেতে মরীয়া হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি। তবে এই নির্বাচন নিয়ে সরকারি দল যথেষ্ট চাপের মধ্যে রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন নিয়ে সরকার প্রচন্ড রকমের চাপে পড়বে। কারণ জাতীয় নির্বাচনের আগে এটি তাদের জন্য অগ্নিপরীক্ষার মতো। পরাজিত হলে জাতীয় নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন দল সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আবার যেনতেনভাবে নির্বাচন দিয়ে নিজেদের পক্ষে জয় আনলেও জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে বিএনপি নিরাপদ অবস্থানেই রয়েছে। বিএনপি এই নির্বাচনে জয়ী হলে জাতীয় নির্বাচনের জন্য দলের নেতা-কর্মীরা শক্তি ও সাহস পাবে। মাঠের কাজ তারা নতুন করে উজ্জীবিত হবে।

এবিষয়ে নির্বাচন বিশ্লেষক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, গাজীপুরের নির্বাচন স্থগিত আইনগতভাবে হলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ চাপে পড়েছে। খুলনার দিকে সবার নজর। বিএনপির যে কোনা ফলাফলের পক্ষে নিজেদের যুক্তি তুলে ধরার সুযোগ থাকবে যা আওয়ামী লীগের থাকবে না। আবার নির্বাচন কমিশনের উপর চাপ রয়েছে নির্বাচন সুষ্ঠু করা।

আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা বলেন, গাজীপুরের নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় খুলনার উপর চাপ পড়েছে। ১৫ মে সবার দৃষ্টি থাকবে খুলনায়। তবে খুলনায় মেয়র প্রার্থী হিসেবে তালুকদার আবদুল খালেকের অবস্থান বেশ ভালো। তারপরও স্থানীয় পর্যায়ে এবং কে›ন্দ্রীয়ভাবে তার পক্ষে প্রচার প্রচারণার ক্ষেত্রে কিছু বাঁধা ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দলের সিনিয়র নেতারা বাধাগুলো দূর করার উদ্যোগ নিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে বড় দল। আর একটি বড় দলে কিছু সংকট থাকে। তবে খুলনায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে সবাই এক সঙ্গে কাজ করছে।

এদিকে বিএনপির যুগ্ম মহাসিচব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিএনপি এই নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। তবে আমরা শংকায় আছি, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হবে কি না? যদি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপির জয় কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, খুলনা সিটিতে মোট ভোটার ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯৮৬ জন ও নারী ২ লাখ ৪৪ হাজার ১০৭ জন। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ৪ হাজার ৯৭২ জন। নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ২৮৯টি। এর মধ্যে দু’টি ভোটকেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে। এ দু’টি কেন্দ্রের ১০টি বুথের দুই হাজার ৯৭৮ ভোটার ইভিএমে ভোট দেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।

সূত্র জানায়, এ নির্বাচনে ২৮৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২৩৪টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। বাকি ৫৫টিকে তুলনামূলক কম ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। তবে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা দেয়া হবে। ভোটের দিন পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও বিজিবি, এপিপিএনের প্রায় ১০ হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।

এছাড়া সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতি কেন্দ্রে থাকবে ২০ থেকে ২২ জন পুলিশ সদস্য, যার মধ্যে ১০ থেকে ১২ জন অস্ত্রধারী। এছাড়া থাকবেন র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশের মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং টিম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও আনসার দল।

জেডআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত