ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১২ মিনিট আগে
শিরোনাম

‘খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করবেন, আমি বলে দেব’

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০১৮, ১৫:৫৮  
আপডেট :
 ০৮ নভেম্বর ২০১৮, ১৬:৪৯

ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের নিয়ে রসিকতা প্রধানমন্ত্রীর

আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দ্বিতীয় দফা সংলাপে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ১১ নেতা সংলাপে নেন। এর মধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সুব্রত চৌধুরী ছাড়া সবাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিলেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী।

সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের মঙ্গলবারের জনসভার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় জনসভায় তার সম্পর্কে মাহমুদুর রহমান মান্নার বক্তব্যের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যে মান্না, ভালো লিখতে পারে বলে আমাদের দলে নিয়ে এলাম। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক বানালাম। কিন্তু আমাদের পক্ষে কোনো কথা লিখতে পারে না। এখন আবার গেছে ওই দিকে। এখন আমার বিরুদ্ধে গরম গরম বক্তৃতা করে। আহা, কী সাংঘাতিক বক্তৃতা আমার বিরুদ্ধে! বক্তৃতা দেওয়া ভালো, দাও ভালো করে দাও।

জবাবে মান্না বলেন, বক্তৃতা না দিলে আমার রাজনীতি থাকে না। শেখ হাসিনা বলেন, তাহলে তুমি আরও বক্তৃতা দাও, আরও দাও!

এক পর্যায়ে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আপনি চৌমুহনী কলেজের ভিপি ছিলেন, আমিও বদরুন্নেছা কলেজের ভিপি ছিলাম। আমার এখানে তো ছিলেন, মন্ত্রিত্বও পেয়েছিলেন। আবার ওখানে গেলেন।

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মনসুর, কত ব্রিলিয়ান্ট ছিলি। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ভারতে গিয়েছিলে, সত্য। আমি তো তোমাকে এনে ডাকসুর ভিপি করলাম। ডাকসুর ভিপি বানানোর জন্য জাসদের সঙ্গে ঐক্য করলাম। এরপর রাজ্জাক ভাইয়ের সঙ্গে বাকশাল করে আমার বিরুদ্ধে চলে গেলে। আবারও ছাত্রলীগের সভাপতি করলাম, এমপি করলাম! এখন তোর হাত-পা বড় হয়ে গেছে। একবার বাকশালে যাস, আবার বিএনপিতে যাস। এখন খালেদা জিয়ার মুক্তি চাস! তুমি তো এদিক-ওদিক ঘোর। যারা এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করে, তারা কোনোদিনই কিছু হতে পারে না।

নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এস এম আকরামকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনি তো আওয়ামী লীগ করেন। আজ ওদিকে গিয়ে বসেছেন কেন? এস এম আকরাম জানান, তিনি মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে এসেছেন। এ সময় টিপ্পনী কেটে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ও আপনিও দল পাল্টাইছেন, খুব ভালো কথা। আপনি কবে আমার দল ছাড়লেন সেটাই তো জানলাম না?

প্রধানমন্ত্রী এরপর ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে বলেন, আপনি তো ছাত্রলীগ করতেন, এখন সুবিধা যেদিকে পেয়েছেন, সেদিকে গেছেন। এ সময় ড. মোশাররফ হেসে বলেন, নেত্রী, নেত্রী, নেত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর তির্যক মন্তব্য থেকে ড. কামাল হোসেনও ছাড় পাননি। প্রবীণ এই নেতাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, চাচা আপনাকে নিয়ে তো সবকিছুই করেছি। আপনি সংবিধান বানাইছেন, সুবিধা যেখানে সেখানেই গেছেন। আপনাদের প্রোগ্রামটা খুবই মজা হয়েছে। খুবই ইন্টারেস্টিং হয়েছে।

সংলাপ শেষ হওয়ার পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদা কথা বলেন। মির্জা ফখরুল কারাগারে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভালো কথা। দেখা করতে চান, অবশ্যই দেখা করবেন। আমি বলে দেব। এ সময় উপস্থিত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের শারীরিক খোঁজখবর নেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় মির্জা ফখরুল তার শারীরিক অবস্থা জানান। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়াসহ যে কোনো প্রয়োজনে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

ব্যারিস্টার মওদুদ প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, আমার বাড়িটা নিয়ে গেলেন কেন নেত্রী? জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাড়িটা নেওয়া হতো না। আপনি জালিয়াতি করতে গেছেন কেন? আদালত বলেছে, আপনাদের বাড়ি না। বাড়িটা যদি আপনি কবি জসীমউদ্‌দীনের মেয়ের নামে লিখে দিতেন, তাহলে আমি কিছুই করতাম না। আপনি বাড়ি নিয়ে দিছেন আপনার ভাইয়ের নামে। আমাদের ফরিদপুরের মেয়ের নামে দিলে কিন্তু আমি এটা নিয়ে নাড়াচাড়া করতাম না। মওদুদ বলেন, 'তাহলে আমি এখন তার নামে ফেরত দেব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, না, না আপনাকে আর বিশ্বাস করা যায় না।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মওদুদ সাহেব ওয়ান-ইলেভেনের সময় জেলে ছিলেন। আবারও জেলে যেতে চান। মওদুদ বলেন, নেত্রী, একটা স্পেস চাই। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমন কোনো স্পেস দেব না যে অন্ধকারের লোকরা আবার আসতে পারে। অন্ধকারের লোকদের আমি আসতে দেব না। লখিন্দরের বেহুলার ছিদ্র আমি আর রাখব না। জেলে যাওয়ার শখ হলে ওগুলো নিয়ে থাইকেন। আমি জানি সহিংসতা কীভাবে মোকাবেলা করতে হয়, সেটা আমি ২০১৩-১৪ সালে বুঝেছি।' এ সময় মওদুদ বলেন, না, নেত্রী আমি ঠিক করেছি, আর কোথাও যাব না। শুধু চাই একটা স্পেস।

মাহমুদুর রহমান মান্নাও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, ও কী কথা বলবে! সকালে একটা আর বিকেলে আরেক কথা বলে। ওর সঙ্গে কী কথা বলব। সে নির্বাচন করতে চায়, করুক। এ সময় মান্না বলেন, আমি জোট ছাড়া কীভাবে নির্বাচনে আসি! জনসভায় দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে মান্না বলেন, পত্রিকায় যা লেখা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ সঠিক নয়। প্রধানমন্ত্রীর পাশে থাকা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম বলেন, আপা, মান্না তো খালেদা জিয়ার জন্য জীবন দিয়ে দিতে চাইছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মান্না তুমি এসব কথা বলেছ? কেন জীবন দিতে হবে?

জবাবে মান্না বলেন, নেত্রী, আমি জীবন দিতে চাইনি। বেশি লোক হয়ে গিয়েছিল তো, তাই...। আমি ওখানে যা বলেছি, আমার কথা পত্রিকায় মিসকোট করা হয়েছে। আমি এমন কথা বলিনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, না, খুব বেশি লোক হয়নি। টেলিভিশনে সবকিছু আছে। মান্না বলেন, নেত্রী, আমি বঙ্গবন্ধুর স্পিডটা ধরে রাখছি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব বলে লাভ হবে না। নির্বাচনে আসো। এখানে যারা আছেন, ফখরুল সাহেব ও সুব্রত চৌধুরী ছাড়া সবই আমার লোক। এ সময় মান্নাকে উদ্দেশ করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, তোমরা তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে কিছুই চাও না। দেখলাম তোমার গরম বক্তৃতা। জবাবে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমার এই বক্তব্য তো একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য। আপনারা তো সেই ব্যবস্থা করছেন না। আপনারা পাল্টা অভিযোগ করছেন। সভা-সমাবেশ থেকে গ্রেফতার করা হবে না বলেও গ্রেপ্তার-হয়রানি অব্যাহত রয়েছে।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী আবারও বলেন, আর কোনো গ্রেপ্তার-হয়রানি হবে না। গায়েবি মামলা হবে না।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে গত ১ নভেম্বর সাড়ে তিন ঘণ্টার সংলাপে সাত দফা দাবির বিষয়ে কোনো সমাধান না আসায় বুধবার ‘সীমিত’ পরিসরে দ্বিতীয় দফার এই সংলাপে বসেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। গণভবনের ব্যাংকোয়েট হলে বেলা ১১টা থেকে তিন ঘণ্টার এই সংলাপে দুই পক্ষেই ১১ জন করে অংশ নেন। ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংলাপে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দলে ছিলেন গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু; বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ; জেএসডির আসম আবদুর রব, আবদুল মালেক রতন; নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না ও এস এম আকরাম এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মো. মনসুর আহমেদ।

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন জোটের প্রতিনিধি দলে ছিলেন আওয়ামী লীগের ওবায়দুল কাদের, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আনিসুল হক, দীপু মনি ও শ ম রেজাউল করিম এবং ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত