ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

মনোনয়ন নিয়ে যা ঘটছে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে

  কিরণ সেখ

প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৯:৩৫

মনোনয়ন নিয়ে যা ঘটছে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে

মুখে স্লোগান, চোখে আগুন, হাতে ইট-পাথর ও পানির বোতল। গতকাল শনিবার এমনই দৃশ্য দেখা গেছে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয় ঘিরে। এরা সবাই ছিলেন বিএনপির মনোনয়ন না পাওয়া নেতাদের কর্মী-সমর্থক। ঘড়িতে সময় তখন বিকেল ৫ টা ১৫ মিনিট। এসময় মাইকিংয়ে পটুয়াখালী-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী শহিদুল আলম তালুকদারের নাম ঘোষণা করা হয়। ওই সময় থেকেই মনোনয়ন বঞ্চিত নেতাদের কর্মীরা হইচই-স্লোগান শুরু করে। প্রায় রাত সাড়ে তিনটার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

মনোনয়ন বঞ্চিত নেতাদের কর্মী-সমর্থকরা বিকেল সাড়ে ৫ টায় দিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান ফটক এবং কার্যারলয়ে পিছনের ফটকে লাথি মারেন, ধাক্কা দেন, ইটপাটকেল ছুড়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। বিক্ষোভকারীদের ছোড়া ইট-পাথরের আঘাতে কার্যালয়ের জানালার কাচ ভেঙে যায়। সরেজমিনে দেখা গেছে, খালেদা জিয়ার কার্যারলয়ে ঘিরে মনোনয়ন বঞ্চিত নেতাদের ব্যানার টানিয়ে রাখা হয় হয়।

মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে শাহ মোয়াজ্জেমকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি, চাঁদপুর-১ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী কারাবন্দি নেতা আনহ এহছানুল হক মিলন, চাঁদপুর- আসনে তানভীর আহমেদ, গোপালগঞ্জ-১ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী সেলিমুজ্জামান, শেরপুর আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী ফাহিম চৌধুরীর নামে ব্যানার টানানো হয়। এছাড়া নারায়নগঞ্জ-১ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য তৈমুর আলম খন্দকার, শামসুজ্জামান দুদুকে মনোনয়ন না দেওয়ার তার কর্মী-সমর্থকরাও বিক্ষোভ করে।

এদিকে রাত তখন প্রায় ৮। ওই সময় তৈমুর আলম খন্দকার মনোনয়ন নিশ্চিত হতে বিএনপি চেয়ারপারসনের অফিসের ভিতরে ছিলেন। যখন তার কর্মীরা নিশ্চিত হয় তাদের নেতা মনোনয়ন পাননি তখনই তারা বিক্ষোভ ও হৈইচৈই শুরু করে। সেময় ছাত্রদলের এক কর্মী তৈমুর আলমের হাত ধরে টেনে অফিসের ভিতরে নিয়ে যায়। এ সময় তৈমুর আলম খন্দকার মুখ ছিল বিমর্ষ।

পরে রাত ৮ টার দিকে মাইকিং বলা হয় যে, এটা কূনৈতিকদের এলাকা। এখানে কেউ বিশৃঙ্খলা করবেন না। আর আপনারা যার জন্য এটা করছেন,এতে তার কোন লাভ হবে না। বরং আরো বেশী ক্ষতি হবে। এসব করে কিছুই হবে না।

প্রায় ৫ মিনিটি পর আবারও মাইকিং বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে করে বলা হয়, আপনারা ধৈর্য ধরুন, শান্ত থাকুন। আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া কারাগারে, তারেক রহমান বিদেশে। এ অবস্থায় আপনারা সবাই ধৈর্য ধরুন। আর এটা আমাদের সবার অফিস। দয়া করে কেউ দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করবেন না।

গুলশান কার্যালয়ে থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের পথ রোধ করেন মনোনয়ন বঞ্চিতদের বিক্ষুব্ধ সমর্থকেরা। শনিবার রাত আড়াইটা থেকে তিনটা পর্যন্ত তাকে অবরোধ করে রাখেন বিক্ষুব্ধ কর্মীরা। সে সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে ফখরুলের পথ ছেড়ে দেন বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা।

এর আগে আ ন ম এহছানুল হক মিলনের সমর্থকরা নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যারলয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করে এবং অফিসের মূল ফটকে তালা মারে। পরে দুপুর ২ টায় দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তারা গুলশান কার্যাকলয়ে বিক্ষোভ করে।

অপরদিকে গতকালের ন্যায় আজও দলের মনোনয়ন না পাওয়া বিএনপির নেতাদের কর্মী-সমর্থকরা টানা রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয় ঘিরে বিক্ষোভ করছে। তবে গুলশান কার্যায়লয়ে সূত্রে জানা গেছে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতৃবৃন্দ শনিবার গভীর রাতে কার্যালয় থেকে গেছেন। সকালে আর কেউ আসেননি।

রোববার বিকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে অবস্থানরত মনোনয়নবঞ্চিত এক প্রার্থীর অনুসারীদের তোপের মুখে পড়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে বেরিয়েই তোপের মুখে পড়েন তিনি। যদিও জাফরুল্লাহ চৌধুরী তখন বলেন, তিনি বিএনপিরও কেউ নন, মনোনয়ন দেওয়াও তার বিষয় নয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে বের হলেই ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে ঘিরে ধরেন কুমিল্লা-৪ অাসনে বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত মঞ্জুরুল অাহসান মুন্সির সমর্থকরা। ওই অাসনটি বিএনপি ছেড়ে দিয়েছে ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল জেএসডিকে। সেখানে ধানের শীষ নিয়ে লড়বেন জেএসডির সাধারণ সম্পাদক অাব্দুল মালেক রতন। মুন্সির সমর্থকরা তখন রতনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। একইসঙ্গে মুন্সিকে মনোনয়ন না দিলে কুমিল্লায় বিএনপির নাম-নিশানা মুছে দেওয়ার হুমকি দেন।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলে বারবার তার পথরুদ্ধ করেন বিএনপির উচ্ছৃঙ্খল কর্মীরা। এসময় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘অামি বিএনপির কেউ নই। মনোনয়ন দেওয়া না দেওয়া তাদের দলীয় বিষয়।’

তিনি আরও বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্বার্থে অনেক কিছু করা হয়েছে। পরবর্তীতে সমন্বয় সাধন করা হবে। জোট ক্ষমতায় গেলে কাউকে চাইলে সরাসরি মন্ত্রীও বানাতে পারে। সুযোগতো অাছেই। পরে উপস্থিত মুন্সির সমর্থকরা জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সামনে থেকে সরে গেলে তিনি ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, মনোনয়ন বঞ্চিত নেতাদের কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভের কারণে গুলশান কার্যালয়ে মনোনয়ন বিতরণ বন্ধ রয়েছে। তবে উত্তরার নিজ বাসা থেকে চূড়ান্ত মনোনীতদের চিঠি দিচ্ছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত