ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

এরশাদের ‘কবিতার খাতা’

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২০ ডিসেম্বর ২০১৮, ২২:১৯

এরশাদের ‘কবিতার খাতা’

জাতীয় পার্টি যে সত্যি সত্যি বাংলাদেশের রাজনীতিতে যাত্রা পার্টির ভূমিকায় নেমেছে তা প্রমাণিত হলো আরেকবার। এরশাদ আবারও প্রমাণ করলেন, তিনি নিছক একজন রাজনৈতিক ভাড়। এরশাদ আছেন বলেই, রাজনীতিতে এখনও বিনোদন আছে। জাতীয় পার্টির মহাসচিব পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছিল রুহুল আমিন হাওলাদারকে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল মনোনয়ন বাণিজ্যের। অবশ্য মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ ছিল দলের চেয়ারম্যান এরশাদের বিরুদ্ধেও। মনোনয়নের মূল সময়টা এরশাদ পালিয়ে ছিলেন সিএমএইচে। আর মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ থেকে নিজে বাঁচতে এরশাদ বলির পাঠা বানান রুহুল আমিন হাওলাদারকে। তবে ধারণা করা হচ্ছে হাওলাদারের অপসারণটা আপসেই হয়েছিল। যাতে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা কাউকেই ধরতে না পারে। এরশাদকে ধরলে বলতেন, মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণেই তো রুহুল আমিন হাওলাদারকে বের করে দিয়েছি। আর হাওলাদারকে ধরলে তিনি বলতে পারেন, আমি তো কিছু জানি না। সব জানেন চেয়ারম্যান। আমি তো এখন দলের কেউ নই। দুই জনের এই টানা হ্যাচড়ায় বঞ্চিতই থেতে যেতেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

তবে শেষ পর্যন্ত মনে হয় আপস হয়েছে। পদ হারানোর রুহুল আমিন হাওলাদার আরো বেশি ক্ষমতা নিয়ে ফিরে এসেছেন। তার নতুন পদের নাম বিশেষ সহকারী। চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে তিনি সার্বিক সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করবেন। পদের নাম যাই হোক, জাতীয় পার্টিতে রুহুল আমিন হাওলাদারের পদমর্যাদা হবে চেয়ারম্যানের পরেই, দ্বিতীয় স্থানে। কিছুদিন আগেই মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগে অপসারণ করা হলো, যার বিরুদ্ধে তদন্তের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন নতুন মহাসচিব; সেই তাকেই কোন মুখে দলের সেকেন্ড ম্যান বানানো সম্ভব? রুহুল আমিন হাওলাদার যদি পার্টির সেকেন্ড ম্যান হন, তাহলে পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের পদমর্যাদা কী? পার্টির আরেক কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের বা নতুন মহাসচিবের পদমর্যাদা কী? এরা সবাই কি রুহুল আমিন হাওলাদারের পরে? জাতীয় পার্টি নিয়ে এমন হাজারো প্রশ্ন। কিন্তু উত্তর দেওয়ার কেউ নেই।

রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় পার্টি আসলে এরশাদের ‘যেমন ইচ্ছা লেখার কবিতার খাতা’। এরশাদের যা ইচ্ছা, তাই করেন। এখানে কোনো নিয়ম, কোনো গঠনতন্ত্র, গণতন্ত্র কিচ্ছু নেই। কিন্তু এসব প্রশ্নের জবাব দেয়ার জন্য এখন এরশাদকে পাওয়াই দায়। নির্বাচন এলেই তিনি রহস্যজনক আচরণ করেন।

তারা বলছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে এরশাদের রহস্যজনক অসুস্থতার কথা নিশ্চয়ই আপনারা ভুলে যাননি। তখন নাকি তাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সিএমএইচে নেয়া হয়েছিল। তবে এবার বোধহয় তিনি নিজেই পালানোর জন্য সিঙ্গাপুর বেছে নিয়েছিলেন।

এরশাদের যা বয়স, তাতে অসুস্থ তিনি হতেই পারেন। কিন্তু নির্বাচনের আগে আগে বারবার অসুস্থ হওয়াটা যে রাজনৈতিক তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে এরশাদ আত্মহত্যার হুমকিও দিয়েছিলেন। এবার হুট করে একদিন কার্যালয়ে এসে জানিয়ে গেলেন, তাকে বিদেশে যেতে দেয়া হচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত উদার হাতে মনোনয়ন বিলিয়ে তিনি সিঙ্গাপুরে উড়ে গেলেন। প্রতীয় নিয়ে সবাই যখন নির্বাচনী প্রচারণায় ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, তখন তৃতীয় বৃহত্তম দলের প্রধান উড়ে গেলেন সিঙ্গাপুরে।

১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর গণআন্দোলনের মুখে এরশাদের পতনের সময় কেউ ভাবেননি এই স্বৈরাচার আবার রাজনীতি করবে, ক্ষমতার সিড়ি হবে। কিন্তু এরশাদ কখনো আওয়ামী লীগ, কখনো বিএনপির সাথে জোট বেধে নিজেকে জায়েজ করে নিয়েছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কাঁধে ভর করে স্বৈরাচারের পুনর্বাসিত হয়।

আরএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত