ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

সংরক্ষিত আসনে এমপি হতে চান শাহানা

  তৌফিক ওরিন

প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০১৯, ২১:৪৯

সংরক্ষিত আসনে এমপি হতে চান শাহানা

শাহানা পারভীন। ক্যালিফোর্নিয়া মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। বেড়ে উঠেছেন রংপুরের একটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারে। রংপুরের কারমাইকেল কলেজে পড়াকালে ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত হন।

রাজনীতির পাশাপাশি পড়াশুনাও চালিয়ে যান সমান গতিতে। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ঢাকা সিটি কলেজে কিছু দিন প্রভাষক হিসেবে চাকরি করেন। ইঞ্জিনিয়ার শফিক রহমানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে স্বামীর উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনে পাড়ি জমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।

সেখানে দীর্ঘদিন অবস্থানকালে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ক্যালিফোর্নিয়া শাখায় বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তীতে ক্যালিফোর্নিয়া মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন।

১/১১ এর পরিবর্তিত পরিস্থিতে শেখ হাসিনা বিদেশে চিকিৎসা শেষে যখন দেশে ফিরতে পারছিলেন না, সেই সময় বিদেশের মাটিতে শেখ হাসিনার পক্ষে জনমত গঠনে কাজ করেছেন শাহানা পারভীন। নিজের প্রতিভা শুধু রাজনীতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেননি তিনি। একই সাথে সাংস্কৃতিক চর্চাও চালিয়ে গেছেন।

দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা এক সময় প্রবাস থেকে ফিরে আসেন শাহানা পারভীন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত হন। একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন তিনি।

সম্প্রতি বাংলাদেশ জার্নালের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন শাহানা পারভীন। সাক্ষাতকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক তৌফিক ওরিন।

বাংলাদেশ জার্নাল: আপনার রাজনীতিতে আসার গল্পটা বলবেন?

শাহানা পারভীন: রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি। তাই রাজনৈতিক পরিমণ্ডলেই আমার বেড়ে ওঠা। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে আমার বাবা, চাচা এবং বড় তিন ভাই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তবে সক্রিয় রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয়েছে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে। রংপুর কারমাইকেল কলেজে অধ্যয়নকালে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ি।

সেখানে কলেজ ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। এক সময় দেশের বাইরে চলে যাই। যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম দীর্ঘদিন। সেখানে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হই। পরবর্তীতে মহিলাদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ বাড়ানোর লক্ষ্যে ক্যালিফোর্নিয়া মহিলা আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ওই কমিটিতে আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।

বাংলাদেশ জার্নাল: রাজনীতির পাশাপাশি আর কী করছেন?

শাহানা পারভীন: আমি ছোট বেলা থেকেই সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সাথে জড়িত। রংপুর রেডিও সেন্টারের শিল্পী হিসেবে কাজ করেছি। সেখানে নাটক ও উপস্থাপনায় কাজ করেছি। বিভিন্ন টেলিভিশনে নাটক, টেলিফিল্মে অভিনয় ও প্রযোজনার সাথে জড়িত ছিলাম। এছাড়া ‘স্বপ্নের পঙক্তিমালা’ নামে আমার একটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। সামনে একুশের বই মেলায় ‘মানবতা আমাদের ঠিকানা’ শিরোনামে আরো একটি বই আসছে।

বাংলাদেশ জার্নাল: সংস্কৃতিক অঙ্গনে আপনার সমৃদ্ধ পদচারণা রয়েছে। তাহলে কেন রাজনীতিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন?

শাহানা পারভীন: মানুষের সেবা করার অন্যতম সেরা প্লাটফর্ম হচ্ছে রাজনীতি। রাজনীতিবিদরা যেভাবে মানব সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পারেন, অন্য কোনো পেশার লোকজন এতটা পারেন না। আমার পরিবারে বর্তমানে ১১জন ডাক্তার রয়েছেন। সবাই কিন্তু মানব সেবায় জড়িত। তারা মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে কাজ করছেন। একজন রাজনীতিবিদই মানুষের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে একযোগে কাজ করার সুযোগ পান। একারণেই মানুষের সাথে মিশে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে জননেত্রী শেখ হাসিনার চলার পথকে মসৃণ রাখতে কাজ করতে চাই।

বাংলাদেশ জার্নাল: সংরক্ষিত মহিলা আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য আপনি ফরম সংগ্রহ করেছেন। তো আপনি কতটুকু আশাবাদী?

শাহানা পারভীন: মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে আমি অনেক বেশি আশাবাদী। তবে বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন আমাদের অবিভাবক জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যদি আমার ওপর আস্থা রাখেন, আমাকে মনোনয়ন দেন তাহলে নেত্রীর বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাবো। যদিও আওয়ামী লীগ একটি প্রচীন এবং বৃহৎ রাজনৈতিক দল। এ ক্ষেত্রে আমাদের নেত্রীরও অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ দলের মনোনয়ন না পাওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না কে মনোনয়ন পাবেন।

বাংলাদেশ জার্নাল: যেহেতু আওয়ামী লীগ বিপুলভাবে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছে। সুতরাং আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেলেই সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারবেন। সংসদ সদস্য হিসেবে আপনি কোন কাজকে প্রাধান্য দেবেন?

শাহানা পারভীন: আমার ভেতরে কিছু বিষয় কাজ করে। যেহেতু আমি বিভিন্ন দেশে গিয়েছি, বিভিন্ন উন্নত দেশে থেকে অভিজ্ঞতা হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে আমি আমার নেত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে কাজ করে যাবো। আমাদের দেশে এখনো দুর্নীতি রয়ে গেছে। আমি যদি একটি পর্যায়ে পৌঁছাতে পারি অবশ্যই দুর্নীতিমুক্ত করতে কাজ করবো। যদিও এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ইতোমধ্যে আমাদের নেত্রী এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নিয়োজিত রয়েছেন। আমি মনে করি এটির জন্য প্রয়োজন তৃণমূল থেকে মানুষকে সচেতন করে তোলা। মানুষের হৃদয়ে প্রবেশ করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।

এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই, আমি বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছি। কোথাও আমাদের দেশের মত কমিউনিটি ক্লিনিকের কনসেপ্ট পাইনি। তখন আমার মনে হয়েছে যে এটিই তো আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা করেছেন। আমি বিদেশে কমিউনিটি বাগান দেখেছি, যেটি আমাদের দেশে এখনো চালু হয়নি। কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে এটি আমাদের দেশে করা যেতে পারে। এতে অনেক কৃষক উপকৃত হবেন।

বাংলাদেশ জার্নাল: মনোনয়ন যুদ্ধে আপনি আশানুরূপ ফলাফল না পেলে আপনার কর্মকাণ্ড কেমন হবে?

শাহানা পারভীন: আগেও বলেছি, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন অবশ্যই ভাগ্যের ব্যাপার। মনোনয়ন না পেলে আমি মন খারাপ করবো না। আমার রক্তে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মিশে আছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, আমার অবস্থান থেকে আমি সেই জায়গায় কাজ করে যাবো। আমি যখন দেশের বাইরে অবস্থান করি, সব সময়ই আমি আমার এলাকার মানুষের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি।

আমি দেশের যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে প্রায়ই দেশে আসতাম। দেশে এসে আমি বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ঘুরেছি, মানুষের সাথে কথা বলেছি। আমি মানুষকে বোঝাতাম সরকার যে উন্নয়ন করছে, গ্রামের সাধারণ মানুষ তার ফল ভোগ করছে। দেশের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা বছরের প্রথম দিনই বিনা মূল্যে পাঠ্যবই নিয়ে ঘরে ফিরছে। এটা সরকারের বিশাল অর্জন। এগুলো আমার এলাকার সাধারণ মানুষকে আমার জায়গা থেকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি।

বাংলাদেশ জার্নাল: আপনি এলাকায় বিভিন্ন সামজিক কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিন ধরে পরিচালনা করে আসছেন। কী ধরনের কাজ আপনি আপনার এলাকায় করেছেন?

শাহানা পারভীন: আমি দেশে আসার পরে আমার এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। আমি একটি বিদ্যালয়ের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য। ওই স্কুলে পরিচালনার কাজ করি। এছাড়া কুড়িগ্রামে মেঠোজন নামক গানের দল রয়েছে। সেখানেও আমি প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছি।

এছাড়া দীর্ঘ দিন ধরে আমি আমার এলাকায় শীতবস্ত্র বিতরণ করে আসছি। যদিও আগের থেকে এখন মানুষের অর্থনৈতিক অনেক উন্নতি লাভ করেছে। এটা অবশ্য আমি রাজনৈতিক কারণে না, নৈতিক দায়িত্ব থেকে এই কাজগুলো পরিচালনা করে আসছি। এছাড়া আমি কয়েকবার কুড়িগ্রামে মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করেছি। দরিদ্র মানুষের বীনামূল্যে চোখের ছানি অপারেশনের কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। তবে আমি নিশ্চয়তা দিতে পারি, আমি আমার জায়গা থেকে কখনো সরে যাবো না। আমি দেশের মানুষের জন্য কাজ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে এসেছি।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত