ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

মোকাব্বির কাণ্ডে ভাঙছে ড. কামালের গণফোরাম!

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০১৯, ২০:৩১

মোকাব্বির কাণ্ডে ভাঙছে গণফোরাম!

দলীয় নির্দেশ অমান্য করে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়া গণফোরামের মোকাব্বির খান দলের বিশেষ কাউন্সিলে অংশ নিয়েছেন। আর মোকাব্বির খানের মঞ্চে বসা নিয়ে দলের কাউন্সিলরদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এজন্য দল ছাড়ারও ঘোষণা দিয়েছেন গণফোরামের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক। এছাড়া মোকাব্বির খানের জন্য গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টুও কাউন্সিলে আসেননি বলে দলটির একটি সূত্রে জানা গেছে। তবে গণফোরাম থেকে জানানো হয় যে, মোস্তফা মহসীন মন্টু অসুস্থ বলে তিনি কাউন্সিলে আসতে পারেননি। তবে মোকাব্বিরের অংশগ্রহনের ঘটনায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন।

শুক্রবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে গণফোরামের কাউন্সিলে এসব ঘটনা ঘটেছে। কাউন্সিলের মঞ্চে ড. কামাল হোসেনের তিন আসন পর বসেন মোকাব্বির খান। ‘গণতন্ত্র উদ্ধারে জাতীয় ঐক্য তুলুন’ এই স্লোগানকে ধারণ করে গণফোরামের এই বিশেষ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়।

কাউন্সিলের সভা শুরু হওয়ার পর দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে মঞ্চে উঠেন ড. কামাল হোসেন। এসময় কামাল হোসেনের সঙ্গে গণফোরাম থেকে নির্বাচিত সাংসদ মোকাব্বির খানও মঞ্চে উঠেন। এরপর কাউন্সিলে কয়েকজন বক্তার বক্তব্য শেষে প্রথম অধিবেশন শেষ হওয়ার পর রফিকুল ইসলাম পথিক দল ছাড়ার ঘোষণা দেন।

সভা থেকে বের হওয়ার পর মোকাব্বিরের মঞ্চে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে পথিক বলেন, আমি রফিকুল ইসলাম পথিক গণফোরামের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক। দলের সকল কর্মকাণ্ডে সব সময় সম্পৃক্ত ছিলাম। আর মোকাব্বির খান যখন শপথ নিতে যান তখন দলে দুই ধরনের মত ছিল। পরে বলা হয়েছে, কার্যনির্বাহী সভায় যা সিদ্ধান্ত হবে তাই সবাই মেনে নেবে। কিন্ত ২০ তারিখের কার্যনির্বাহী সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে মোকব্বির খানকে শোকজ করা হবে। কিন্তু ২৬ তারিখেও শোকজ করা হয়নি! আজকেরটা তো দেখেছেনই।

এসময় দল ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, মোকাব্বির খান ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে গেলে বলে ‘গেট আউট,। আর বাসায় গেলে বলে সংসদে যাও। এধরণের দ্বৈত নীতির যে আচরণ, এই দলে আমি থাকবো না। এই আচরণে আমি ব্যথিত। এই দল আর আমি করবো না।

অন্যদিকে নেতাকর্মীরাও মোকাব্বির খানের উদ্দেশে বলেন, তুই ওখানে বসে আছিস কেন? তোর তো ওখানে বসার জায়গা নয়। ড. কামালের ওপরও ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলটির কেউ কেউ।

কাউন্সিলে উপস্থিত ছিলেন না দলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় উপস্থিত থাকতে পারেননি বলে জানানো হয়। মোকাব্বির খানের বিষয়ে জানতে চাইলে মন্টু বলেন, ‘ওনার (মোকাব্বির খান) ব্যাপারে আমাদের বেশির ভাগ সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন। আজ উনি কীভাবে বসলেন, তা আমাদের সভাপতিই (ড. কামাল হোসেন) বলতে পারবেন। এ জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে দুঃখিত এবং জাতির কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। মাঝপথে এসে এ রকম হোঁচট আশা করিনি। এটার একটা সুরাহা হওয়া উচিত।’

সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়ার পর গণফোরাম ও ঐক্যফ্রন্টে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিলেন মোকাব্বির। এই দলেরই আরেক নেতা সুলতান মনসুর শপথ নিয়ে দল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন। শপথ নেয়ার কারণে মোকাব্বির খানকেও বহিষ্কার করা হবে বলে মাঝে মাঝে এমন গুঞ্জন উঠলেও শেষ পর্যন্ত তার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানা যায়নি।

দল ও জোটের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়ার পর ড. কামালের সঙ্গে মোকাব্বির দেখা করতে গেলে কামাল তার পিএসসহ কয়েকজনকে বলেন, ওকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দাও। ফারদার (ভবিষ্যতে) যেন এখানে আর না দেখি।

গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে অংশ নিয়ে মাত্র ছয়টি আসনে জয় পায় বিএনপি। আর গণফোরামের দুটি মিলিয়ে ঐক্যফ্রন্ট পায় মোট আটটি আসন। নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতির’ অভিযোগ তুলে পুনর্নির্বাচনের দাবি তোলে তারা। নির্বাচিতরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবে না বলেও ঘোষণা দেওয়া হয় বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে। কিন্তু ধানের শীষ প্রতীকে ভোট করে জয়ী হওয়া গণফোরামের সুলতান মনসুর গত ৭ মার্চ শপথ নিয়ে এরই মধ্যে সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন। পরে শপথ নিয়ে গত বুধবার প্রথমবারের মতো সংসদে যোগ দেন মোকাব্বির। প্রথমবারের মতো বক্তব্যের সুযোগ পেয়ে সিলেট-২ আসনের এই সংসদ সদস্য অতি দ্রুত নতুন নির্বাচন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর সন্ধানের দাবি জানান।

এরআগে কাউন্সিলে উদ্বোধনী বক্তব্যে কামাল হোসেন বলেন, ক্ষমতার উৎস হলো জনগণ, আর কেউ না। সুতরাং আপনাদের দেখতে হবে, যারা ক্ষমতায় তারা কি দেশের স্বার্থে না কি নিজের স্বার্থে কাজ করছেন। না কি অন্য কিছু করছেন। উল্টো কিছু করলে সংগঠিত হয়ে তাদেরকে থামাতে হবে। কারণ জনগণ গণতন্ত্রের পাহারাদার। আর এই নাগরিকরা যদি দায়িত্ব পালন না করে তাহলে গণতন্ত্র স্বৈরতন্ত্রে পরিণত হতে পারে। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি জনগণের হয়ে যে রায়টা দিলেন, আমি মনে করি- সেটা চির স্মরণীয় থাকবে। আর তিনি ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখে গেলেন। এই কথা শুনে যে আপনারা যে করতালি দিলেন, এটা উনাকে জানানো হবে। ড. কামাল বলেন, পুলিশ কিন্তু দেশের মালিক না, দেশের সেবক। সংবিধান মেনে তারা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবে। আপনারা সতর্ক থাকবেন যে পুলিশ যেন তার ক্ষমতার বাইরে গিয়ে কোনো অন্যায়-অত্যাচার করতে না পারে। সুষ্ঠু গণতন্ত্র ও সংবিধানের শাসন তখনই থাকে, যখন পুলিশ তার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করে।

কাউন্সিলের শুরুতে জাতীয় সংগীতের বাজিয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ড. কামাল হোসেনসহ গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্যরা মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানের প্রথমে গণফোরাম নেতা জগলুল হায়দায় আফ্রিক শোক প্রস্তাব পাঠ করেন। ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে কাউন্সিলে গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরী, মোকাব্বির খান, ড. রেজা কিবরিয়া, রফিকুল ইসলাম পথিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত