ছাত্রদলের কাউন্সিল
আব্বাস-গয়েশ্বরের সঙ্গে সার্চ কমিটির নেতাদের দ্বন্ধ
কিরণ সেখ
প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০১৯, ০১:১৩
বিএনপির অন্যতম সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন ও কাউন্সিল নিয়ে মির্জা আব্বাস এবং গয়েম্বর চন্দ্র রায়ের সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত সার্চ কমিটির সদস্যদের মধ্যে দ্বন্ধ দেখা দিয়েছে। কারণ ছাত্রদলের চলমান সঙ্কট সমাধানের জন্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে একমাস বা দুই মাসের জন্য একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেন। এই প্রস্তাবে তারেক রহমানও একমত পোষণ করেন। তবে ছাত্রদলের কাউন্সিলের জন্য গঠিত সার্চ কমিটির নেতৃবৃন্দরা চান না মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সফল হোক। যদি তারা সফল হয় তাহলে সার্চ কমিটির নেতৃবৃন্দরা ব্যর্থ হবেন। এজন্য সার্চ কমিটির নেতৃবৃন্দ তারেক রহমানকে বুঝান যে, এই দাবি মানা যাবে না। যদি মানা হয় তাহলে সংগঠনের ভিতরে বিশৃঙ্খলা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পরবর্তীতে তারেক রহমান তার আগের সিদ্ধান্ত থেকে দূরে সরে আসেন। ফলে মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় তাদের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে চাচ্ছেন। বিএনপি ও ছাত্রদলের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত ৩ জুন নতুন কমিটি গঠনে ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে গত ১১ জুন বয়সসীমা না করে ধারাবাহিক কমিটির দাবিতে আন্দোলন নামে ছাত্রদলের বিগত কমিটির বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা।
এদিকে ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতাদের আন্দোলনের মধ্যেই গত ২৩ জুন সংগঠনটির কাউন্সিলের জন্য গঠিত সার্চ কমিটির নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা করেন, আগামী ১৫ জুলাই ছাত্রদলের নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত করা হয়েছে।
এরপর গত ২৮ জুন বিএনপির সিনিয়র নেতাদের আশ্বাসে ছাত্রদলের কাউন্সিলের তফসিল বাতিল ও মনোনয়নপত্র বিতরণ বন্ধের দাবিতে চলমান আন্দোলন দুই দিনের জন্য স্থগিত করেন সংগঠনটির বিক্ষুব্ধ নেতারা। এরপর বিক্ষুব্ধ নেতাদের আর আন্দোলন করতে দেখা যায়নি। তবে সমস্যার সমাধান হলে আবারও ছাত্রদলের নেতারা আন্দোলনে যাবে বলে জানান সংগঠনটির সাবেক সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট। কিন্তু গত ৩ জুন ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন যে, স্বার্থান্বেষী মহল এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছে।
পরবর্তীতে গত ২৯ জুন বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ছাত্রদলের চলমান সঙ্কট নিরসনে দলটির স্থায়ী কমিটির মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল একাধিকবার সার্চ কমিটির নেতৃবৃন্দ ও ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে কোন সমাধানে আসতে না পেরে তারা সরে দাঁড়াতে চাচ্ছেন বলে সূত্রে জানা গেছে।
সূত্রটি জানায়, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে দায়িত্ব দেওয়া পর তারা ছাত্রদলের সমস্যা সমাধানের জন্য একটা মীমাংসার পর্যায়ে চলে গিয়েছিলেন। তারা ছাত্রদলের চলমান সঙ্কট সমাধানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে এক মাস বা দুই মাসের জন্য একটি আহ্বায়ক কমিট গঠনের প্রস্তাব দেন। এই প্রস্তাবে তারেক রহমানও রাজি হোন। তবে সার্চ কমিটির নেতৃবৃন্দরা চান না মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সফল হোক। কারণ তারা সফল হলে সার্চ কমিটির নেতৃবৃন্দরা ব্যর্থ হবেন। এজন্য পরবর্তীতে সার্চ কমিটির নেতৃবৃন্দরা তারেক রহমানকে বুঝান যে, এই দাবি মানা যাবে না। যদি মানা হয় তাহলে সংগঠনের ভিতরে বিশৃঙ্খলা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পরে তারেক রহমান তার আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। আর মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দেখছেন যে, সার্চ কমিটির নেতৃবৃন্দরা তাদের কথা শুনছেন না বা তাদেরকে অপমান করছেন। যে কারণে তাদের সঙ্গে সার্চ কমিটির নেতৃবৃন্দদের মধ্যে দ্বন্ধ দেখা দিয়েছে।
এবিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদলের সাবেক এক নেতা বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ছাত্রদলের চলমান সমস্যার সমাধান যদি খুব শিগগির না হয় তাহলে যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে পারে।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও সার্চ কমিটির অন্যতম নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমরা একটা সমাধানের চেষ্টা করছি। তবে এখনো কোন সমাধান হয়নি। আর সমাধান হলেই আমরা কাউন্সিলের দিকে যাবো।
জানতে চাইলে ভেঙে দেওয়া ছাত্রদলের কমিটির সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ছাত্রদলের চলমান সমস্যার কোন সমাধান হয়নি। এটা এখনো আলোচনার মধ্যেই আছে। তবে যেকোনো সময় দুই পক্ষকে এক সাথে নিয়ে বৈঠক করবেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। আর সেই বৈঠকে একটা সমাধান আসতে পারে।
১৫ জুলাই ছাত্রদলের কাউন্সিল হচ্ছে না: আগামী ১৫ জুলাই জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু ছাত্রদলের চলমান সঙ্কট সমাধান না হওয়ার কারণে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী সংগঠনটির কাউন্সিল হচ্ছে না। পরবর্তীতে কবে নাগাদ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে- সেবিষয়েও কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে ছাত্রদলের সমস্যার সমাধান হলে পরবর্তীতে কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ করা হবে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, ঘোষিত তারিখে ছাত্রদলের কাউন্সিল হওয়ার কোন সুযোগ নেই।
কেএস/এনএইচ