ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

বঙ্গবন্ধু হত্যা বনাম ‘চট্টগ্রাম ষড়যন্ত্র’ মামলা

বঙ্গবন্ধু হত্যা বনাম ‘চট্টগ্রাম ষড়যন্ত্র’ মামলা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যখন সপরিবারে হত্যা করা হয়, তখন এ ঘটনার বিরুদ্ধে দেশে সে রকম বিক্ষোভ বা প্রতিবাদ চোখে পড়েনি। এ নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড পরবর্তী ঘটনাবলী নিয়ে গবেষণা করেছেন গবেষক এবং লেখক মোহাম্মদ শামসুল হক।

তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নভাবে অনেক প্রতিবাদ এবং সংগঠিত প্রতিরোধের চেষ্টা হয়েছিল। এর মধ্যে চট্টগ্রামের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধকে তৎকালীন সরকার ‘চট্টগ্রাম ষড়যন্ত্র’হিসেবে বর্ণনা করেছিল।

‘ইতিহাসের খসড়া’ নামের একটি সাময়িকীর সম্পাদক ও লেখক-গবেষক শামসুল হক বিবিসি বাংলাকে জানান, আগস্ট মাসেই চট্টগ্রামে সিটি কলেজের কিছু শিক্ষার্থী প্রতিবাদ করে মিছিল করার চেষ্টা করে। সিটি কলেজ থেকে ছাত্ররা একটি মিছিল বের করে, যা পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে শিল্পী সদরুল পাশার বাড়িতে একটি বৈঠক হয়, যেখানে সে সময়কার আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকজন চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র আক্রমণ করার পরিকল্পনা করেছিলেন।’

তবে ওই আক্রমণের সফলতা নিয়ে সন্দিহান আওয়ামী লীগের বয়োজেষ্ঠ্য নেতারা তা প্রতিহত করেছিলেন।

এ সম্পর্ক শামসুল হক বলেন, পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মৌলভী সৈয়দ, তৎকালীন ছাত্রনেতা মহিউদ্দিন আহমেদ (পরবর্তীতে চট্টগ্রামের মেয়র) এবং পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এস.এম. ইউসুফ তাদের অনুসারীদের নিয়ে প্রতিরোধ প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন।

প্রতিরোধ প্রক্রিয়া পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের দুই ধরণের চিন্তা ছিল বলে মন্তব্য করেন গবেষক শামসুল হক। শামসুল হকের ভাষায়, ‘সারাদেশের সাংসদদের একটি বড় অংশ সংগঠিত করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে সরকারের কার্যক্রমে বড় বাধা তৈরি করার পরিকল্পনা ছিল তাদের। আর দ্বিতীয়ত, ভারতে গিয়ে সেখানকার সরকারের সহযোগিতায় বাংলাদেশের সাংসদদের নিয়ে বিকল্প সরকার তৈরি করার বিষয়েও চিন্তা করেছিলেন তারা।’

‘চট্টগ্রাম ষড়যন্ত্র মামলা’র আওতায় যাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল তাদের আট থেকে নয়জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন শামসুল হক।

তিনি বলেন, ‘মামলাটির নাম চট্টগ্রাম ষড়যন্ত্র মামলা হলেও তাদের মূলত জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তারা অস্ত্র কোথায় লুকিয়ে রেখেছিল এবং মুজিব হত্যার প্রতিবাদে কী কী নাশকতা করার পরিকল্পনা ছিল তাদের? আরেকটি বিষয় জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্ব পায়, সেটি হলো তারা ভারতের সহায়তায় কী করার পরিকল্পনা করছিলেন।’

ভারতের কারণেই সফল হয়নি ওই পরিকল্পনা

শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার প্রতিবাদে ভারতের সহায়তায় সরকার বিরোধীরা যে আন্দোলন তৈরি করতে চেয়েছিলেন তা পরবর্তীতে সফল হয়নি। এ সম্পর্কে শামসুল হক জানান, ‘মৌলভি সৈয়দ যখন ভারতে ছিলেন তখন তার সাথে কাদের সিদ্দিকী এবং মহিউদ্দিন আহমেদের যোগাযোগ হয়। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী সরকারের পতন হওয়ায় ভারতে তখন এক ধরণের থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল।’

এরপর মোরারজি দেসাইয়ের নেতৃত্বে ভারতে সরকার গঠন হওয়ার পর জিয়াউর রহমান সরকারের সাথে তাদের এক ধরণের সমঝোতা হয় বলে মন্তব্য করেন শামসুল হক।

‘ঐ সমঝোতার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম ষড়যন্ত্র মামলার শীর্ষ আসামিদের আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানায় ভারত।’

তাদের বলা হয়, ১৯৭৫ পূর্ববর্তী বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আর ঐ সময়ের আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কে পার্থক্য রয়েছে। এই কারণে ভারতে আশ্রয় নেয়া বিদ্রোহকারীদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে চায় ভারত।

শামসুল হক জানান, ‘মৌলভি সৈয়দকে তার আরো কয়েকজন সহকারীসহ ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পুশ ব্যাক করানো হয়। পরবর্তীতে মৌলভি সৈয়দকে সেনাবাহিনীর হাতে হস্তান্তর করা হয় এবং তাকে সেনাবাহিনীর ইন্টারোগেশন সেল- এ নিয়ে প্রচণ্ড নির্যাতন করা হয়।’

এরপর চট্টগ্রামের বাঁশখালী থেকে মৌলভি সৈয়দের বাবাকে নিয়ে এসে তাকে সনাক্ত করে সেনাবাহিনী।

লেখক শামসুল হকের অভিমত, ‘সেনা নির্যাতনের মুখে মৌলভি সৈয়দের মৃত্যু হয়। এসব কারণেই শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলন সফলতা পায়নি।’

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত