ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

ছাত্রদলের নেতৃত্বে আসতে চায় বিবাহিতরাও

  কিরণ সেখ

প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০১৯, ১৮:৪০  
আপডেট :
 ১৯ আগস্ট ২০১৯, ২২:০৮

ছাত্রদলের নেতৃত্বে আসতে চায় বিবাহিতরাও

আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের নেতা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে। আর এই দুই পদে নির্বাচন করার জন্য প্রার্থীদের অবশ্যই অবিবাহিত হতে হবে বলে ছাত্রদলের গঠনতন্ত্রে উল্লেখ রয়েছে।

তবে গত দুই দিনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচনের জন্য ১৩ জন বিবাহিত নেতা মনোনয়নপত্র কিনেছেন। এর মধ্যে সভাপতি পদে ১০ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ৩ জন বিবাহিত নেতা মনোনয়নপত্র কিনেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রদলের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সভাপতি পদে যেসব বিবাহিত নেতারা মনোনয়ন ফরম কিনেছেন

আল মেহেদি তালুকদার (বিবাহিত), আরাফাত বিল্লাহ খান ((বিবাহিত), আজিম উদ্দিন মেরাজ (বিবাহিত), এম আর আরজ আলী শান্ত (বিবাহিত), মো. আব্বাস আলী (বিবাহিত), মাইনুল ইসলাম (বিবাহিত), বিশ্বজিৎ ভদ্র (বিবাহিত), নজরুল ইসলাম নাহিদ (বিবাহিত), সিহাবুর রহমান (বিবাহিত)।

এছাড়া ছাত্রদলের অনেক নেতাই বলছেন, হাফিজুর রহমানও বিবাহিত। তবে তার বিষয়ে আমাদের কাছে কোন তথ্য নেই।

সাধারণ সম্পাদক পদে যেসব বিবাহিত নেতারা মনোনয়নপত্র কিনেছেন

নাদিয়া পাবন পাঠান (বিবাহিত), সিরাজুল ইসলাম (বিবাহিত), মাহমুদুল আলম শাহিন (বিবাহিত)।

জানতে চাইলে হাফিজুর রহমান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমি অবিবাহিত। এতে ন্যূনতম সন্দেহ নাই। যেটা বলা হচ্ছে, সেটা শুধু মাত্র রাজৈনিতকভাবে আমাকে হেয় করার জন্য। এটা প্রার্থী বাছাই থেকে আমাকে বের করে দেয়ার জন্য অপচেষ্টা।

বিবাহিত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সিরাজুল ইসলাম বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, পদ-প্রত্যাশী এবং আমার প্রতিদ্বন্দ্বীরা এ ধরনের মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য ছড়াচ্ছে। আমি বিবাহিত নই। যারা এ অভিযোগ তুলেছে, তারা এ বিষয়ে কোনো ডকুমেন্ট দেখাতে পারবে না। আমাকে রাজনৈতি মহলে হেয় করতেই এসব প্রচার করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে প্রার্থী বাছাই কমিটির প্রধান ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমরা মনগড়া অনুযায়ী কিছু করতে পারবো না। কারণ আমাদের একটা বিধি-বিধান আছে।

যারা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী তাদের বিষয়ে বাছাই কমিটি কিভাবে খোঁজ-খবর নিচ্ছে- জানতে চাইলে মিলন বলেন, তারা নিজেদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র জমা দেবে। এর মধ্য দিয়েই আমরা তাদের সম্পর্কে জেনে যাবো।

জানতে চাইলে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, যাচাই-বাছাইয়ের মধ্যেই সব পরিস্কার হয়ে যাবে।

ছাত্রদলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুকদের অবশ্যই ২০০০ সালে এসএসসি অথবা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। প্রার্থীদের অবশ্যই অবিবাহিত হতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রত্ব আছে এমন প্রমাণপত্র অবশ্যই প্রার্থীদেরকে দাখিল করতে হবে। প্রার্থীকে ন্যূনতম স্নাতক পাশ হতে হবে এবং পাশের সার্টিফিকেটের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে। প্রমাণের জন্য সকল সার্টিফিকেটের মূল কপি প্রার্থীদেরকে নিয়ে আসতে হবে।

গত শনিবার ও রোববার ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্বে স্থান পেতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র কিনেছেন ১১০ জন। এর মধ্যে সভাপতি পদে ৪৪ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ৬৬ জন। তবে এবার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে কেবলমাত্র সাধারণ সম্পাদক পদে তিন জন নারী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

তারা হলেন, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের নাদিয়া পাঠান প্লাবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনসুরা আলম এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ডালিয়া রহমান।

ফরমের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, মনোনয়ন ইচ্ছুক প্রার্থীরা ১০০ টাকা মূল্যমানে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। প্রার্থীদেরকে কাউন্সিল-২০১৯ এর তফসিলসহ একটি ফাইল দেয়া হয়। এতে মনোনয়ন ফরম, আবেদনপত্র, প্রার্থী যোগ্যতার নিয়মাবলী, আচরণবিধি, পুনঃতফসিলের কপি, প্রত্যায়নপত্র ও ভোটার তালিকা।

ছাত্রদলের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সাবেক ছাত্রদল নেতা খায়রুল কবির খোকনের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি, ফজলুল হক মিলনের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের বাছাই কমিটি ও শামসুজ্জামান দুদুর নেতৃত্বে ৩ সদস্যের আপিল কমিটি গঠন করা হয়।

সভাপতি পদে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা

মো. মামুন খান, আমিনুল হাকিম মুন্সি, খলিলুর রহমান, আসাদুল আলম টিটু, আবু জাহান চৌধুরী হিমেল, এম আর আরজ আলী শান্ত, আল আমিন কাউসার, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন, রিয়াজ মো. তানভীর রেজা, মো. ফজলুল হক নিরব, মো. আব্বাস আলী, তানভীর আহমদ খান ইকরাম, জসিম মোল্লা, মো. এরশাদ খান, মো. এহসান মাহমুদ, মোস্তাফিজুর রহমান, মো. জুয়েল মৃধা, মাসুদ রানা, মাহমুদুল হাসান বাপ্পী, হাফিজুর রহমান, এবিএম মাহমুদুল আলম সরদার, সোলায়মান হোসাইন, মো. সুরুজ মন্ডল, মো. ইলিয়াছ, মো. আজিম উদ্দিন মেরাজ, আশরাফুল আলম ফকির লিংকন, ফজলুর রহমান খোকন, মাইনুল ইসলাম, মো. আবদুল মাজেদ, বিশ্বজিৎ ভদ্র, আল মেহেদি তালুকদার, সাজিদ হাসান বাবু, সিহাবুর রহমান, এস এম আল আমীন, আবদুল হান্নান, মো. আলী হাওলাদার, এসএম আমিনুল ইসলাম, শামীম হোসেন, মো. আল আমিন, আরাফাত বিল্লাহ খান, নজরুল ইসলাম নাহিদ, জসিম উদ্দিন, মাইনুদ্দনি মিলয় ও জামেদ ওমর করিম।

সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা

সাইদ মাহমুদ জুয়েল, মো. আলাউদ্দিন খান, এম এ কাইয়ুম, মশিউর রহমান রনি, এমদাদুল হক মজুমদার, মানসুরা আলম, মো. হামিদ সাজ্জাদ হোসেন, মো. নাঈম হোসাইন, সিরাজুল ইসলাম, মো. হাসান তানজিল হাসান, শেখ আবু তাহের, মো. তাবিবুর রহমান, এম সাখাওয়াত হোসাইন, ডালিয়া রহমান, মিজানুর রহমান সজীব, আজমীর হোসেন, আমিনুর রহমান আমিন, শাহনেওয়াজ, মুন্সি আনিসুর রহমান, আবদুল মোমেন মিয়া, নাজমুল হক হাবিব, আনিসুর রহমান সুমন, এবিএম জহিরউদ্দিন সোহেল, এন রাকীব জুয়েল, মিজানুর রহমান শরীফ, মো. ওমর ফারুক হিমেল, রিয়াদ মো. ইকবাল হোসেইন, একরামুল হাই নাঈম, ওমর ফারুক শাকিল চৌধুরী, মো. আবদুল মান্নান, মো. জামিল হোসেন, ইকবাল হোসাইন শ্যামল, মো. আবুল হাসান চৌধুরী, এএএম ইয়াহিয়া, নুরুল ইমরান মজমুদার শিশু, মো. মহিন উদ্দিন রাজু, রাকীবুল ইসলাম রাকিব, আরিফুল হক, আজিজুল হক সোহেল, রাশেদ ইকবাল খান, মো. জোবা্ইর আল মাহমুদ রিজভী, মোস্তাফিজুর রহমান, সোহেল রানা, মাজেদুল ইসলাম রুম্মন, মাহমুদুল আলম শাহিন, মো. ইউসুফ কামাল জনি, বাবুল আখতার শান্ত, মো. মিজানুর রহমান, নাদিয়া পাঠান পাবন, জাকিরুল ইসলাম জাকির, আশিকুর রহমান সুমন, মো. জহিরুল ইসলাম দিপু, মো. আল মামুন, মো. সাইদুর রহমান সোহেল, মাহতাব উদ্দিন জিমি, জুলহাস উদ্দিন, আতাউর রহমান, কেএমএস মুসাব্বির, কাজী মাজহারুল ইসলাম, মোহাম্মদ আবুল বাশার, আশরাফুল আলম ফকীর লিংকন, আসাদুজ্জামান, সাদেকুর রহমান সাদিক, আশরাফুল আলম, দেলোয়ার হোসেন, সুলায়মান হোসাইন।

গত ৩ জুন বিএনপি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ছাত্র দলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দেয়। এরপর আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে প্রত্যক্ষভোটে সভাপতি ও সাধারণ সম্পা্দক নির্বাচিত করার সিদ্ধান্ত হয়। রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছাত্র দলের অনুষ্ঠিতব্য কাউন্সিলে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেয়া হয়।

এগুলো হচ্ছে, এক. প্রার্থীদের জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রাথমিক সদস্য হতে হবে, দুই. অবশ্যই বাংলাদেশে অবস্থিত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র হতে হবে এবং তিন. কেবলমাত্র ২০০০ সাল থেকে পরবর্তীতে যেকোন বছরে এসএসসি/ সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

প্রসঙ্গত, মনোনয়ন পত্র জমাদান ১৯ ও ২০ আগস্ট, বাছাই ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ২৬ আগস্ট এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৩১ আগস্ট। প্রার্থীর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হবে ২ সেপ্টেম্বর। প্রার্থীদের প্রচারনা ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ সেপ্টেম্বর মধ্য রাত পর্যন্ত।

আগামী ৪ সেপ্টেম্বর প্রার্থীদের খসড়া তালিকা প্রকাশ, তালিকার ওপর আপত্তি ও নিষ্পত্তি ৫ ও ৬ সেপ্টেম্বর এবং চূড়ান্ত তালিকা ৭ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করা হবে। আর তফসিল অনুযায়ী প্রার্থীরা আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত ভোটের প্রচারনা চালাতে পারবেন।

আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর এই দুই পদের নেতা নির্বাচনের ভোটগ্রহন হবে। যাতে সারাদেশের ছাত্র দলের ১১৭টি সাংগঠনিক ইউনিটের ৫৮০ জন কাউন্সিলর ভোট দেবেন।

সর্বশেষ ছাত্রদলের কমিটি গঠন হয়েছিলো ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর। ওই কমিটিতে সভাপতি হিসেবে রাজীব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আকরামুল হাসানকে নির্বাচিত করা হয়।

রাজীব-আকরামের নেতৃত্বে ১৫৩ সদস্যের আংশিক কমিটি গঠন করা পর দীর্ঘদিন পরে এই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়, যাতে ৭৩৬ জনকে পদ দেওয়া হয়েছিলো।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত