ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

আদালতের নোটিশপ্রাপ্তদের পরিচালনায়ই ছাত্রদলের কাউন্সিল

  কিরণ সেখ

প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৯:৫৮

আদালতের নোটিশপ্রাপ্তদের পরিচালনায়ই ছাত্রদলের কাউন্সিল

ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিলের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত। একই সঙ্গে কাউন্সিল কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছেন। এ বিষয়ে জবাব দেওয়ার জন্য সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন আদালত। আর এজন্য বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনসহ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ১০ বিবাদীকে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়। তবে আদালতের নোটিশের জবাব না দিয়ে বুধবার ছাত্রদলের কাউন্সিল করেছে সংগঠনটি। আর এই কাউন্সিল পরিচালনাও করেছেন তারা।

ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ঢাকার চতুর্থ সহকারী জজ আদালতে গত ১২ সেপ্টেম্বর মামলা করেন সংগঠনের আগের কমিটিতে ধর্ম বিষয়ক সহসম্পাদক আমান উল্লাহ। শুনানি নিয়ে আদালত ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিলের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন। একই সঙ্গে ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিল করা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছেন। এ বিষয়ে জবাব দেওয়ার জন্য সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন আদালত। আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকনসহ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ১০ বিবাদীকে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়।

তবে কাউন্সিলের প্রথম থেকেই ছাত্রদলের এই নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকনসহ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ফজলুল হক মিলন, সহকারী রিটার্নিং অফিসার শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি এবং পোলিং অফিসার এবিএম মোশাররফ হোসেন ও সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু উপস্থিত ছিলেন।

এবিষয়ে বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আদালতের নোটিশ বিএনপি অফিসে আছে। এটা এখনো আমাদের হাতে আসেনি। আর আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে সঠিক সময়ই আমরা নোটিশের জবাব দেবো।

জানতে চাইলে বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক ও পোলিং অফিসার এবিএম মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আদালত আমাদের ১০ জনকে (যারা নির্বাচন পরিচালনার সাথে আছি) কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। সেই কারণে আমরা আদালতের প্রতি সম্মান দেখিয়ে গত ১৪ সেপ্টেম্বর কাউন্সিল করি নাই। তবে আইনে আমাদের কাউন্সিল করতে কোন বাধা নেই। যদি ওই ১০ জন এই প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত না থাকে। আর আমাদের কাউন্সিলররা বুধবার বেশিভাগ ঢাকায় ছিল। তাই গতকাল আমরা কাউন্সিল করেছি।

এদিকে ছাত্রদলের ৬ষ্ঠ কাউন্সিল গত ১৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারির কারণে ওই দিন কাউন্সিল করতে পারেনি সংগঠনটি। তবে বুধবার আনুষ্ঠানিক কোন ঘোষণা ছাড়াই কাউন্সিল করেছে ছাত্রদল। এনিয়ে সংগঠনটির নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে জল্পনা-কল্পনা চললেও এটাকে রাজনীতি কৌশল বলছেন সাবেক ছাত্রদলের নেতারা। তাদের ভাষ্য, আমাদের কাউন্সিলররা বুধবার বেশীভাগই ঢাকায় ছিল। তাই গতকাল আমরা কাউন্সিল করেছি। আর এটা একটি রাজনৈতিক কৌশল ছিল।

এবিষয়ে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, আমাদের রাজনীতি করতে হলে কৌশলী হতে হয়। আর আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহী কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগকে বলেছেন, তোমরা দু’জন পদ ছেড়ে দাও, এই দু’জনকে দাও। সুতরাং আওয়ামী লীগ পারবে আর বিএনপি পারবে না! এটা কোন আইন?

মোশাররফ হোসেন বলেন, কাউন্সিলে গোপনীয়তার কোন সুযোগ নাই। কারণ কাউন্সিলররা সবাই উপস্থিত ছিল। আর গত দুই দিনে আমাদের প্রায় ৯ জন কাউন্সিলরকে পুলিশ আটক করেছে। যদি আমরা ভেন্যুর কথা আগে উল্লেখ করতাম তাহলে তো পুলিশ আমাদেরকে ঘেরাও করে আরো আটক করতো। তাই সরকারের নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য আমরা এই কৌশল গ্রহণ করেছি।

কাউন্সিলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কাউন্সিলরদেরকে বলেছেন, কারো উপর দুর্বল হয়ে, পছন্দ এবং গ্রুপিং করে ভোট না দিয়ে যিনি যোগ্য, নেতৃত্ব দিতে পারবে এবং যিনি ত্যাগ স্বীকার করছেন তাকেই ভোট দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান।

এছাড়া ছাত্রদলের কাউন্সিল ভেন্যুর বিষয়ও নিয়ে নাটকীয়তা করেন সংগঠনটির সাবেক নেতারা। প্রথমে বলা হয় যে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়েই ছাত্রদলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত। পরে ৭ টায় দিকে জানানো হয় যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বাসায় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। এরপর সেখানেই সারা রাত ছাত্রদলের ভোট গ্রহণ, গণনা ও ফল প্রকাশ করা হয়।

জানতে চাইলে মোশাররফ হোসেন বলেন, মির্জা আব্বাসের বাসায় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে তা আগে থেকে নির্ধারিত ছিল না। গতকালই মির্জা আব্বাসের বাসায় কাউন্সিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে প্রার্থী ও কাউন্সিলরদেরকে জানিয়ে দেওয়া হয়।

কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে নতুন নেতৃত্ব পেয়েছে বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল। সংগঠনটির নতুন সভাপতি হয়েছেন ফজলুর রহমান খোকন এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ইকবাল হোসেন শ্যামল। গতকাল লন্ডনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে স্কাইপে আলোচনার পর রাতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বাড়িতে ভোটাভুটির আয়োজন করা হয়।

ছাত্রদলের কাউন্সিলে ৯ জন সভাপতি প্রার্থী এবং ১৯ জন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীর মধ্য থেকে দুই পদে দুজনকে বেছে নিতে ভোট দেন ছাত্রদলের ১১৭টি সাংগঠনিক শাখার ৫৩৪ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ৪৮১ জন। মধ্যরাতে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর গণনা শেষে ভোরে ফল ঘোষণা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।

ভোটে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে সভাপতি হয়েছেন খোকন। তিনি পেয়েছেন ১৮৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের ভোট ১৭৮। আর সাধারণ সম্পাদক পদে শ্যামল পেয়েছেন ১৩৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাকিরুল ইসলাম ভোট ৭৮।

কাউন্সিলের বিষয়ে বিএনপি নেতারা বলেন, আইনজীবীরা মত দিয়েছেন যে কাউন্সিল করায় আইনগত কোনো বাধা নেই। এর পরপরই বুধবার বিকালে নয়াপল্টনের কার্যালয়ে প্রার্থী ও কাউন্সিলরদের ডাকে এই কাউন্সিলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় সাবেক ছাত্রনেতাদের সঙ্গে স্কাইপে বৈঠক করেন লন্ডনে থাকা তারেক রহমান

কাউন্সিলের বিষয়ে বিএনপি নেতারা বলেন, আইনজীবীরা মত দিয়েছেন যে কাউন্সিল করায় আইনগত কোনো বাধা নেই। এর পরপরই বুধবার বিকালে নয়াপল্টনের কার্যালয়ে প্রার্থী ও কাউন্সিলরদের ডাকে এই কাউন্সিলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় সাবেক ছাত্রনেতাদের সঙ্গে স্কাইপে বৈঠক করেন লন্ডনে থাকা তারেক রহমান। পরে সন্ধ্যায় প্রার্থী ও কাউন্সিলরদের কাছের শাহজাহানপুরে মির্জা আব্বাসের বাড়িতে যেতে বলা হয়। কাউন্সিলর ও প্রার্থীরা কার্ড দেখিয়ে ঢোকার পর রাত পৌনে ৯টার দিকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ছয়টি বুথে ভোটগ্রহণ শুরুর আগে লন্ডন থেকে স্কাইপে যুক্ত হয়ে তারেক রহমান কাউন্সিলর ও প্রার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। ভোটগ্রহণ বিরতি ছাড়াই চলে রাত পৌনে ১টা পর্যন্ত। এরপর ভোর ৫ টায় ফল ঘোষণা হয়।

প্রসঙ্গত, ছাত্রদলের শীর্ষ নেতা নির্বাচনে ১৯৯২ সালের পর এই প্রথম ভোট হল। ওই কাউন্সিলে রুহুল কবির রিজভী সভাপতি এবং এম ইলিয়াস আলী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর সর্বশেষ কমিটি গঠন হয়েছিল ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর। ওই কমিটিতে সভাপতি ছিলেন রাজীব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আকরামুল হাসান।

কেএস/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত