ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

সক্রিয় হচ্ছেন অভিযুক্ত যুবলীগ নেতারা

  তৌফিক ওরিন

প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০১৯, ২১:৪৬  
আপডেট :
 ২১ নভেম্বর ২০১৯, ২২:৩৩

সক্রিয় হচ্ছেন অভিযুক্ত যুবলীগ নেতারা

চলমান শুদ্ধি অভিযান কিংবা ক্যাসিনো বিতর্কের কারণে সব থেকে বেশি সমালোচিত হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। সংগঠনটির শীর্ষ নেতাসহ প্রায় শতাধিক নেতার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কারণে সংগঠনটির চেয়ারম্যানসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতাকে পদচ্যুত করা হয়েছে। যুবলীগের আসন্ন কেন্দ্রীয় কংগ্রেসকে সামনে রেখে সক্রিয় হচ্ছেন বিভিন্ন ইউনিটের অভিযুক্ত যুবনেতারা।

যুবলীগের অন্যতম প্রধান সুপার ইউনিট ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবলীগ। অভিযোগ রয়েছে, এই দুটি সংগঠনের নেতাকর্মীরাই সব থেকে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত। ক্যাসিনো সম্পৃক্ততা, চাঁদাবাজি, জায়গা দখলসহ বহু অভিযোগ রয়েছে এই দুটি ইউনিটের নেতাদের বিরুদ্ধে। এমনকি মামলাও হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। যুবলীগের এই দুটি শাখায় পদ নিতে কেউ কেউ মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করেছেন। বেশ কয়েকজন যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে সম্প্রতি সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

জানা গেছে, যুবলীগের আসন্ন জাতীয় কংগ্রেসের পর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার কমিটি হতে পারে। যুবলীগের একটি পক্ষ সম্মেলনের দিন এই দুটি শাখার কামিটি গঠনেরও পক্ষে রয়েছে। তবে এ দুটি শাখার কমিটি কবে হবে সেই সিদ্ধান্ত এখনো নিতে পারেনি সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। এই দুটি শাখার কমিটি গঠনের গুঞ্জনকে কেন্দ্র করে মাঠে নেমেছেন পদ প্রত্যাশীরা। তবে সেই সঙ্গে বিতর্কিত বেশ কিছু নেতাও সক্রিয় হচ্ছেন।

ঢাকা মহানগর যুবলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা। ঢাকার রাজধানী ও নিউ রাজধানী সুপার মার্কেটে চাঁদাবাজির অভিযোগে র্যা বের হাতে আটক হয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে ছাড়াও পান তিনি। অভিযোগের বিষয়ে জানতে তিনি বলেন, আমার নামে থানায় কোন জিডি নাই, মামলা নাই। ওই দিনের পর থেকে মার্কেট কমিটিও নাই। পরবর্তীতে মার্কেটে নতুন কমিটি হয়েছে।

ক্যাসিনো সংশ্লিষ্টতা ও দখলদারির অভিযোগ রয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাত হোসেন সেলিমের বিরুদ্ধে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। অভিযোগগুলোকে মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন বলেও দাবি করেন তিনি। এ বিষয়ে সেলিম বলেন, আগামীতে আমি ভালো প্রার্থী হওয়ার কারণে এই ধরণের মিথ্যা খবর ছড়িয়েছে। এর সাথে কোন ধরণের সংশ্লিষ্টতা নেই। অভিযোগের সত্যতা থাকলে অবশ্যই আমাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হতো।

ক্যাসিনো সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের সহ-সভাপতি সরোয়ার হোসেন মনার বিরুদ্ধে। শুদ্ধি অভিযানে আটককৃত এনামুল হক আরমান এবং সাইদুর রহমান বাবুর সাথে পল্টনে একটি বিল্ডিংয়ে ক্যাসিনো পরিচালনা করতেন। সম্প্রতি তার অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। অভিযোগের বিষয়ে মনার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

ক্যাসিনো সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক মাকসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে ক্যাসিনো মালিকদের নির্দেশনায় সেখান থেকে অর্থ উত্তোলন করতেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে একই মধ্যে তার সম্পদের খোঁজে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। এ বিষয়ে জানতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

ক্যাসিনোতে অর্থ লগ্নির অভিযোগ রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সহ-সভাপতি মুরসালিক আহমেদের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি তার অবৈধ সম্পদের খোঁজে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। দুদকের তদন্তের বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সহ-সভাপতি মুরসালিক আহমেদ বলেন, এই ধরণের খবর পেয়ে আমি নিজেই দুদকে গিয়েছি। আমি স্বল্প আয়ের মানুষ, এই ধরণের অভিযোগ আমার জন্য খুবই দুঃখের। আমি সেখানে গেলে তারা আমাকে জানিয়েছেন যে, দুদকে আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই।

তিনি আরো বলেন, আমার মাত্র দুটো ব্যাংক একাউন্ট। তারা সেটারও খোজ খবর নিয়েছে, তবে কিছুই পায়নি।

ফকিরেরপুলের ইয়াংম্যানস ক্লাবের অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের সহ-সভাপতি সোহরাব হোসেন স্বপনের বিরুদ্ধে। এমন কি দুদকও তার অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের জন্য মাঠে নেমেছে। অভিযোগের জবাবে যুবলীগ নেতা স্বপন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, কে বা কারা উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে আমার বিরুদ্ধে এই ধরণের অপপ্রচার করেছে। আমি দুদকের খোঁজ নিয়েছি আমার বিরুদ্ধে এমন কোন অভিযোগ নেই।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বকুল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, এক সময় তিনি ফকিরেরপুলের ইয়াংম্যানস ক্লাবে জুয়ার আসর পরিচালনা করতেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে বকুলকে ফোন দেয়া হলে তার ব্যবহৃত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

অবৈধভাবে সম্পাদ উপার্জনের অভিযোগে শুধু যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে নয়, সব মিলিয়ে শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে সংস্থাটি। এর মধ্যে জাতীয় সংসদের হুইপসহ চারজন সংসদ সদস্য, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পাঁচ কাউন্সিলরসহ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা রয়েছেন। তবে যাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে তাদের একটি বড় অংশ যুবলীগ নেতা। সূত্র জানায়, দুদকের অনুসন্ধানের তালিকায় রয়েছেন যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির বহিষ্কৃত দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান, যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল হক সাঈদ, যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের বহিষ্কৃত সহসভাপতি এনামুল হক আরমান, যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের সহসভাপতি সরোয়ার হোসেন মনা, যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন স্বপন, যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের নির্বাহী সদস্য জাকির হোসেন, যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের সহসভাপতি মুরসালিক আহমেদ, যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক মাকসুদুর রহমান, যুবলীগ নেতা আতিয়ার রহমান দীপু, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান হোসেন খান, সদস্য হেলাল আকবর চৌধুরী, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ওরফে শফিক, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক তসলিম উদ্দিন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক কায়সার আহমেদ, যুবলীগ ঢাকা উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক তাজুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে বাপ্পী, টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক খোরশেদ আলম।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে শুদ্ধি অভিযান শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এরই অংশ হিসেবে গত ৩০ সেপ্টেম্বর অনুসন্ধান দল গঠন করে দুদক। প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) সাঈদ মাহবুব খানকে তদারক কর্মকর্তা ও পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনকে প্রধান করে সাত সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। অনুসন্ধান দলের প্রাথমিক তদন্তের ফল হিসেবে শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপ্রদর্শিত ও অবৈধ সম্পদের তথ্য হাতে পায় প্রতিষ্ঠানটি। সে তালিকা অনুযায়ী, এবার অনুসন্ধান শুরু করেছে সংস্থাটি।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত