ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

বিরলের চাষিরা ক্ষেতে ফোটাচ্ছেন ভালোবাসার গোলাপ

ঘুরছে ভাগ্যের চাকা

  সুলতান মাহমুদ চৌধুরী, দিনাজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৭:২১  
আপডেট :
 ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৮:৪২

বিরলের চাষিরা ক্ষেতে ফোটাচ্ছেন ভালোবাসার গোলাপ
বিরলের কাজীপাড়ায় গোলাপের চাষ। ছবি: প্রতিনিধি

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, বসন্ত বরণ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন দিনাজপুর বিরলের গোলাপ ফুল চাষিরা। মাত্র ৫ বছরেই জেলার বিরলের কাজী পাড়ায় ফুল চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মাত্র ৪টি গোলাপ ফুলের চাষ করেই ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে ফেলেছে গোলাপ ফুলচাষিরা।

শীতকালীন সময়ে প্রতিটি গোলাপ ফুলের বাগানে লাল গোলাপ, সাদা গোলাপ, হলুদ গোলাপ, কালো গোলাপসহ ১৪ ধরনের গোলাপের সমারোহে ভরে গেছে। প্রতিদিন গোলাপ ফুল বিক্রি করে নগদ টাকা পাচ্ছেন চাষিরা। তাই গোলাপ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন এলাকার তরুণরা।

জেলার বিরলের কাজীপাড়ায় এখন বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা এই গোলাপ ফুলের বাগানে এসে সেলফি তুলছেন। ভিডিও চিত্র ধারণ করে নিয়ে যাচ্ছেন। গোলাপ ফুলের বাগান করে সফলতা পাওয়ার পর অনেক চাষি পাশাপাশি রজনীগন্ধা, কাঠ বেলি, গাঁদা ফুলের চাষ করছেন।

কাজীপাড়ায় গোলাপ ফুলসহ অন্যান্য ফুলের চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় এই গ্রামটি এখন গোলাপ ফুলের গ্রাম হিসেবে পরিচিত। এই কাজীপাড়া গ্রামে বর্তমানে চারটি গোলাপ ফুলের বাগান রয়েছে। ফুল আবাদ করে কৃষকরা অধিক লাভের মুখ দেখছেন। গোলাপ ফুল চাষ করে স্বল্প সময়ে অধিক পরিমাণে লাভবান হওয়ায় চাষিরা এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। গোলাপ বাগান থেকে প্রতিটি গোলাপ ফুল ৪ থেকে ৫ পিস হিসেবে বিত্রিু হচ্ছে। এতে করে একজন ফুলচাষী প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকার ফুল বিক্রি করছেন।

গোলাপ ফুল চাষী রফিকুল ইসলাম জানান, ৫ বছর আগে স্থানীয় আতাউর রহমান নামের এক ফুলচাষির অনুপ্রেরণায় বিরলের কাজী পাড়ায় ৩৩ শতক জমিতে প্রথম গোলাপের চাষ শুরু করেন। এখন এই গোলাপ ফুলের চাষ করেই তিনি লাভবান হয়েছেন এবং আর্থিকভাবে স্বচ্ছলতা ফিরে পেয়েছেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকা আয় হচ্ছে। এই আয় দিয়ে আমার দুই মেয়েকে রাজশাহীতে লেখাপড়া করাচ্ছি এবং আমার পরিবার ভালভাবেই চলছে।

একই গ্রামের ফুল চাষি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ফুলের ব্যবসা করে বর্তমানে অনেক ফুলচাষি আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হয়েছেন। গোলাপের পাশাপাশি গাঁদা, রজনীগন্ধা, বেলি ও কাঠসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল আবাদ করছি।

বিরলের রবিপুর এলাকার ফুলচাষি শমশের জানান, তিনি ৮ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলক ফুলচাষ করেন। ফুলের ভালো ফলন হওয়ায় তিনি বেশ লাভবান তাতে। তিনি আগামীতে এক বিঘা জমিতে ফুলচাষের প্রস্তুস্তি নিচ্ছেন।

এলাকার মোকাররম হোসেন ও মকছেদ আলীর ভাগ্য বদলে দিয়েছে ফুল। অন্যের জমি ইজারা নিয়ে ফুল চাষ করেছেন তারা। সেই ফুল বাগান থেকে তারা বছরে আয় করছেন দুই লাখ টাকা। মকছেদ আলী বর্তমানে এক বিঘা ৮ শতাংশ জমিতে রজনীগন্ধা, গোলাপ, গাঁদা ও গাজরা ফুল চাষ করছেন। বাড়ির পাশে ৯ শতাংশ জমিতে রয়েছে গাজরা ফুল। এছাড়া মোকাররমের এক বিঘা ৫ শতাংশ কাঠা জমিতে রয়েছে গোলাপ, রজনীগন্ধা ও গাঁদা ফুল।

মকছেদ আলী বলেন, ফুল চাষে লোকসানের সম্ভাবনা নেই। ঠিকমত পরিচর্যা ও চাষ করতে পারলে প্রচুর লাভ হয়।

ফুলের বাজার দর কম-বেশি হয় জানিয়ে মোকাররম বলেন, ‘প্রতি পিস গোলাপ বিক্রি করি ৫ টাকা, রজনীগন্ধা ৬ টাকা ও গাঁদা ফুল ১ হাজার ৫০০ টাকা। প্রতিদিন দামের তারতম্য ঘটে। বিশেষ দিনগুলোতে ফুলের দাম বেশি হয়।’ প্রতিদিন ফুল কেনার জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে নগদ টাকায় জমি থেকে ফুল কিনে নিয়ে যান। ফুলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় এবং লাভজনক হওয়ায় অনেক শিক্ষিত বেকার যুবকও ফুল চাষে ঝুঁকছেন।

বিরলের রানীপুকুর ইউনিয়ন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম ফরিদ বলেন, শুধুমাত্র কাজীপাড়ায় ফুলের চাষ হচ্ছে। ফুলচাষিদের মাঠ পর্যায়ে গিয়ে ফুল চাষের বিভিন্ন পরামর্শ ও ফুলের কাটিং বিষয় নিয়ে প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষণ দেয়ায় এই গ্রামের ফুলের আবাদ ভাল হচ্ছে। ফুলের চাষ করেই চাষিরা এলাকায় বেশি পরিচিত লাভ করেছে। পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে।

দিনাজপুর বিরল কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা ইমাম বলেন, বর্তমানে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ফুল চাষিদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। ফলে এই কাজীপাড়ায় ফুল চাষে চাষিরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া ফুল চাষের জন্য দারুন উপযোগী। ধানের জেলা দিনাজপুরে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ হচ্ছে। এ ফুল চাষ করে ঘুরছে অনেক কৃষকের ভাগ্যের চাকা।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত