ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

বাগানে ফুটল ১২ জাতের ৭০ হাজার টিউলিপ

  গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৮:১৫  
আপডেট :
 ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৮:৩৪

বাগানে ফুটল ১২ জাতের ৭০ হাজার টিউলিপ
শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া পূর্ব খণ্ড গ্রামে টিউলিপের বাগান। ছবি: প্রতিনিধি

ফুল উৎপাদনে বৈশ্বিক তালিকায় বাংলাদেশের নাম হয়তো একেবারেই তলানিতে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই দেশে টিউলিপ ফুলের উৎপাদন বিস্ময় জাগিয়েছে। ষড়ঋতুর এই দেশে শীতকালের বাহারি টিউলিপ চাষে এসেছে ব্যাপক সফলতা। এ চাষ প্রতিনিয়ত সম্প্রসারণ হচ্ছে সারাদেশেই, শুরু হয়েছে বাণিজ্যিক উৎপাদনও।

২০২০ সালে প্রথমবার দেশে টিউলিপ ফুল ফুটিয়ে সারা জাগিয়েছিলেন গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া পূর্ব খণ্ড গ্রামে দেলোয়ার হোসেন ও সেলিনা হোসেন দম্পতি। এরই ধারাবাহিকতায় এবার তাদের বিশাল বাগানে ফুটেছে ১২ জাতের ৭০ হাজার টিউলিপ। বিস্তৃত জায়গা জুড়ে শুধু বাহারি রঙিন ফুলের খেলা। এ যেন দেশের বুকে এক টুকরো নেদারল্যান্ডস। টিউলিপ ফুলের বাগান দেখতে সেখানে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসছেন। তবে এবার একটু ভিন্ন পথে হাঁটছেন এ দম্পতি। তারা নির্ধারণ করেছেন তাদের বাগানের প্রবেশ ফি। এখানের টিউলিপ দর্শনে আপনাকে গুনতে হবে ১০০ টাকা।

এদিকে, শনিবার সকালে এ টিউলিপ বাগান পরিদর্শনে আসেন নেদারল্যান্ডের বাংলাদেশ হাইকমিশনের হেড অব মিশন থিজ উডস্ট্রা। তিনি বাগান দেখে উচ্ছ্বসিত হন। এ সময় তিনি বাংলাদেশে টিউলিপের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে এ ফুল চাষি দম্পতিকে ধন্যবাদ জানান।

টিউলিপ বাগান পরিদর্শনে আসেন নেদারল্যান্ডের বাংলাদেশ হাইকমিশনের হেড অব মিশন থিজ উডস্ট্রা

উদ্যোক্তাদের ভাষ্য, গত ৯ জানুয়ারি বাল্ব রূপণের পর ৩০ জানুয়ারি নাগাদ ২১ দিনের মাথায় ফুল ফোটে। এ দম্পতি ১৫ বছর ধরে ফুল ব্যবসায় জড়িত। তখন সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের মন্ত্রী, সচিব, সংসদ সদস্যসহ দেশের বিশিষ্টজনেরা বাগান পরিদর্শনে এসেছিলেন। বাংলাদেশের পরিবেশে টিউলিপ উৎপাদন দেখতে বাগান পরিদর্শনে এসেছিলেন টিউলিপের রাজধানী নেদারল্যান্ডসের বেশ কজন। এর আগে গোলাপ, জারবেরা, লিলিসহ নানা জাতের ফুল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে আসছিলেন তারা। মৌমিতা ফ্লাওয়ার্স নামে ফুল চাষের একটি প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলেন। এই প্রতিষ্ঠানের আওতায় ফুল ছাড়াও তাদের প্রকল্পে ছিল ব্যাপক আকারে স্ট্রবেরি ও জি নাইন কলার চাষ। ফুল ও ফল উৎপাদনের পাশাপাশি তারা এগুলোর বীজ স্থানীয়ভাবে কৃষকদের মধ্যে সরবরাহ ও প্রযুক্তিগত পথও দেখিয়ে দেন ।

প্রথম বছর তাদের টিউলিপ বাগানের আয়তনের ছিল মাত্র ২ শতাংশ। সফলতা পেয়ে এ বছর তাদের মোট ১ বিঘা জমিতে ৭০ হাজারের বেশি টিউলিপ ফুল চাষ করেছে। টিউলিপ ও অন্যান্য ফুল-ফলের এই প্রকল্পে কাজ করছেন ২৫ নারী ও পুরুষ। প্রতিবছর নেদারল্যান্ডস থেকে টিউলিপ ফুলের বাল্ব আমদানি করেন তারা।

উদ্যোক্তারা জানান, টিউলিপ ফুল গাছগুলো ২৮ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। এগুলো টবে সাজিয়ে রাখার জন্য আদর্শ ফুল। একেকটি গাছ থেকে একটিই ফুল পাওয়া যায়। পৃথিবীতে টিউলিপ ফুলের ১৫০টির বেশি জাত আছে। টিউলিপ ফুল চাষে সবচেয়ে সফল দেশের নাম নেদারল্যান্ডস। সেখানে এই ফুলের ব্যাপক চাষাবাদ হয়। বর্তমানে নেদারল্যান্ডস ছাড়াও অন্যান্য কয়েকটি শীতপ্রধান দেশেও টিউলিপের চাষ হচ্ছে।

উদ্যোক্তা সেলিনা হোসেন বলেন, বাংলাদেশের পরিবেশে টিউলিপ ফুল চাষ নিয়ে বেশ কয়েক বছর গবেষণা করেছেন তারা। এরপর ২০২০ সালে পরীক্ষামূলকভাবে টিউলিপ চাষে সফলতা দেখেন। পরবর্তীতে ২০২১, ২০২২ ও সর্বশেষ ২০২৩ সালে তারা ক্রমান্বয়ে ফুলটির চাষের আওতা বাড়িয়েছেন। এবছর পুরোপুরি বাণিজ্যিক উৎপাদনে নেমেছেন তারা। বাগান থেকে কেটে ফুল বিক্রির পাশাপাশি এবছর পটেও টিউলিপ বিক্রি করছেন। তিন থেকে পাঁচটি টিউলিপ গাছসহ এসব পটের দাম ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে।

দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'নেদারল্যান্ডস এখন টিউলিপ ফুল রপ্তানি করছে। আমরা চেষ্টা করলে ব্যাপকহারে এই ফুল উৎপাদন করে রপ্তানির খাতায় নাম লেখাতে পারি'। দেলোয়ার জানান, এ বছর পঞ্চগড়, যশোর, রাজশাহী, চট্রগ্রাম, বাগেরহাট, রংপুর ও জামালপুরের কয়েকটি এলাকায় তিনি টিউলিপ বাল্ব সরবরাহ করেছেন। এসব বাগানে তিনি নিয়মিত টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিচ্ছেন। তার আশা, একদিন বাংলাদেশের ফুলপ্রেমীদের আঙিনায় জায়গা করে নিবে টিউলিপ।

নেদারল্যান্ডের সহায়তার আশ্বাস: শনিবার টিউলিপ বাগান পরিদর্শনে এসে নেদারল্যান্ডের বাংলাদেশ হাইকমিশনের হেড অব মিশন থিজ উডস্ট্রা উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন, টিউলিপ বাংলাদেশের সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি করবে। নেদারল্যান্ড ও ইউরোপে এ টিউলিপের ব্যাপক বাজার রয়েছে। বাংলাদেশের নারী ও পুরুষরা এ টিউলিপ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে টিউলিপ নিয়ে বাজার তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশে টিউলিপ চাষে নেদারল্যান্ড সহযোগিতা করবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত