ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১২ মিনিট আগে
শিরোনাম

মেনিনজাইটিসের বিপদ!

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২০, ১৭:০৩

মেনিনজাইটিসের বিপদ!

দুরারোগ্য নয়, কিন্তু বাড়তে দিলে বিপদ। অল্পবিস্তর রোগেও হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করা দরকার। মেনিনজাইটিস সম্পর্কে এমনটাই পরামর্শ চিকিৎসকদের। চিকিৎসা বিজ্ঞানের দিকপাল হিপোক্রটিস এই রোগের ধরন দেখে সন্দেহ করেছিলেন। কিন্তু প্রমাণ করতে পারেননি।

পরবর্তীকালে চিকিৎসকরা একে মস্তিষ্কের ড্রপসি নাম দেন। মেডিক্যাল সায়েন্সের শুরু থেকেই রোগটা নিয়ে চিকিৎসকরা দিশেহারা হয়ে পড়তেন। অবশেষে মেনিনজাইটিস অসুখটিকে সঠিক ভাবে চিহ্নিত করে যথাযথ চিকিৎসা শুরু হয় ১৯৪৪ সালে।

অসুখটা ঠিক কী

মেনিনজিস হল আমাদের মস্তিষ্কের একদম বাইরের আবরণ। এর আবার তিনটি স্তর আছে। একদম বাইরের স্তরের নাম ড্যুরাম্যাটার, মাঝের স্তর অ্যারকনয়েড ম্যাটার আর একদম ভিতরে পায়াম্যাটার। এই তিনটে স্তরের মাঝখানে থাকে অজস্র সুক্ষ্ম রক্তজালক। কোনও ভাবে এখানে জীবাণু পৌঁছে গেলেই গোলমালের সূত্রপাত। ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ারা এখানে পৌঁছে আক্রমণ করলে মেনিনজিসের প্রদাহ হয়, তাই অসুখের নাম মেনিনজাইটিস। সংক্রমণ যদি আরও ভেতরে পৌঁছে যায়, তখন মারাত্মক বিপদের ঝুঁকি বাড়ে।

কী কী সংক্রমণ থেকে সাবধান হবেন

সর্দি-জ্বর, শ্বাসনালীর সংক্রমণ, কানের ইনফেকশন, টিবি, এইচআইভি-সহ যে কোনও সংক্রমণ থেকে মেনিনজাইটিসের ঝুঁকি থাকে। মেনিঙ্গোকক্কাস, স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনি, স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস, হিমোফিলিস ইনফ্লুয়েঞ্জি জাতীয় নানা জীবাণুরা মস্তিষ্কে পৌঁছে গিয়ে মেনিনজিসকে আক্রমণ করতে পারে। ইনফ্লুয়েঞ্জার জীবাণুরাও মেনিনজাইটিসের কারণ হতে পারে। আমাদের দেশে মেনিনজাইটিস সব থেকে বেশি হয় টিবির জীবাণু থেকে। তাই কোনও অসুখকেই তুচ্ছ বলে অবহেলা করবেন না।

কাদের ঝুঁকি বেশি

এই অসুখ যে কোনো বয়সেই হতে পারে। তবে মেনিনজাইটিসের ঝুঁকি বেশি শিশু ও বয়স্কদের। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ে। যারা দীর্ঘ দিন ডায়বিটিসে ভুগছেন, এইচআইভি সংক্রমণ আছে, কিডনি বা অন্যান্য অঙ্গ প্রতিস্থাপনের কারণে দীর্ঘ দিন ইমিউনো সাপ্রেসিভ ওষুধ খেতে হয় তাদের এই অসুখের ঝুঁকি বেশি। এ ছাড়া যারা লাগাতার কানের সংক্রমণে ভুগছেন, মাথায় চোট পেয়েছেন, শিরদাঁড়ার অসুখ আছে, সিওপিডি আছে ও একাধিক বার নিউমোনিয়ার হয় তাদের এই অসুখ হতে পারে।

প্রবল মাথার যন্ত্রণা হলে সাবধান

মাথা থাকলেই মাথা ব্যথা হয় এ আর নতুন কী! কিন্তু জ্বরের সঙ্গে ভয়ানক মাথা ব্যথা, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, বমি বমি ভাব, ঝিমিয়ে পড়া, আলো ও শব্দ শুনলে তিতিবিরক্ত হওয়া (ফটোফোবিয়া), ঘাড় নাড়ানো অসম্ভব হয়ে যাওয়া, খিটখিট করা এসবই হল মেনিনজাইটিসের উপসর্গ। অনেক সময় বাচ্চাদের মাথার নরম তালুর কাছটা উঁচু হয়ে ফুলে ওঠে। রোগটা বেড়ে গেলে খিঁচুনি হয় ও রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে। এই অবস্থায় পৌঁছনোর আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।

যে সব টেস্ট দরকার

প্রাথমিক উপসর্গ (ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, মাথার যন্ত্রণা, ফটোফোবিয়া) দেখে চিকিৎসক মেনিনজাইটিসের আঁচ করেন। সাধারন ইনফ্লুয়েঞ্জার সঙ্গে এই অসুখের পার্থক্য ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া ও পায়ের হ্যামস্ট্রিং পেশিতে ব্যথা। সন্দেহ হলে দরকার মত, এমআরআই, সিটি স্ক্যান ও লাম্বার পাংচার করে সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া রুটিন কিছু পরীক্ষাও করাতে হয়।

হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা

মেনিনজাইটিস হলে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করানো উচিত। ইন্টারভেনাস ফ্লুইডের মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিক ও অন্যান্য ওষুধ দেওয়ার পাশাপাশি রোগীকে অনবরত মনিটর করা দরকার। বাড়িতে ফেরার পর আরও কিছুদিন বিশ্রামও নিয়ে তবেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবেন। রোগ সম্পর্কে সচেতন থাকুন। নিজে থেকে ওষুধ খেয়ে রোগ জটিল করে তুলবেন না।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত