ভালো সাংবাদিকতা, খারাপ সাংবাদিকতা
ফিচার ডেস্ক
প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২১:২৯ আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২১:৪০
সাংবাদিকতার সংজ্ঞা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। বিভিন্ন ঘটনাবলী, বিষয়, ধারণা, ও মানুষ সম্পর্কিত প্রতিবেদন তৈরি ও পরিবেশন করে থাকেন সাংবাদিকরা। এই পেশায় শব্দটি দিয়ে তথ্য সংগ্রহের কৌশল ও সাহিত্যিক উপায় অবলম্বনকে বোঝায়।
মুদ্রিত, টেলিভিশন, বেতার, ইন্টারনেট, এবং পূর্বে ব্যবহৃত নিউজরিল সংবাদ মাধ্যমের অন্তর্গত।
সাংবাদিকতার যথোপযুক্ত নিয়মের ধারণা ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। কিছু দেশে, সংবাদ মাধ্যমে সরকারি হস্তক্ষেপে নিয়ন্ত্রিত হয় এবং পুরোপুরি স্বাধীন সত্তা নয়। অন্যান্য দেশে, সংবাদ মাধ্যম সরকার থেকে স্বাধীন কিন্তু লাভ-লোকসান সাংবিধানিক নিরাপত্তার আওতায় থাকে। স্বাধীন ও প্রতিযোগিতামূলক সাংবাদিকতার মাধ্যমে সংগ্রহ করার মুক্ত উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যে প্রবেশাধিকার জনগণকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যোগ দিতে সাহায্য করে।
আজ আলোচনা করব বিশ্ব বিখ্যাত কিছু খবরে নিয়ে। যা বিশ্বজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
ওয়াটারগেট কেলেংকারি: সাংবাদিকতার ইতিহাসে এটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ১৯৭২ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ওয়াশিংটনের ওয়াটারগেট কমপ্লেক্সে ডেমোক্রেটদের সদরদপ্তরে আড়ি পাতার অভিযোগ উঠেছিল। পরবর্তীতে সেই ঘটনা আড়ালের চেষ্টা করেছিল প্রেসিডেন্ট নিক্সনের প্রশাসন। ওয়াশিংটন পোস্টের দুই সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড ও কার্ল ব্যার্নস্টাইনের রিপোর্টিংয়ের কারণে কংগ্রেস ঘটনাটি তদন্ত করেছিল। পরে নিক্সন পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
ভিয়েতনাম যুদ্ধ বন্ধে সহায়ক: সাংবাদিক ওয়াল্টার ক্রোনকাইটকে অনেকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বিশ্বস্ত লোক’ মনে করতেন। ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে করা প্রতিবেদনে তিনি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধ জিততে পারবে না। তার বক্তব্য মার্কিনিদের বিশ্বাসে পরিবর্তন এনেছিল। এমনকি প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসনও নাকি বলেছিলেন, ‘যখন আমি ক্রোনকাইটের বিশ্বাস হারাই, তখন আমি মধ্যবিত্ত মার্কিনিদের বিশ্বাস হারাই।’ ক্রোনকাইটের রিপোর্টিং যুদ্ধ থামাতে সহায়ক ছিল।
শিশু হত্যার ভুয়া খবর: ১৯৯০ সালে লস অ্যাঞ্জেলস টাইমসের এক প্রতিবেদনে কুয়েতে ইরাকি সেনাদের নির্যাতনের কথা তুলে ধরা হয়েছিল। সেনারা নাকি ইনকিউবেটরে থাকা শিশুদের মেরে ফেলছে। পরে ওয়াশিংটন পোস্টও এমন তথ্য দিয়েছিল। এরপর মার্কিন কংগ্রেশনাল ককাসে একই বর্ণনা দেন ১৫ বছরের কুয়েতি মেয়ে নায়িরাহ। এসব তথ্যের ভিত্তিতে ইরাকে যুদ্ধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। পরে জানা যায়, তথ্যগুলো ভুয়া ছিলো। আর নায়িরাহ আসলে কুয়েতি রাষ্ট্রদূতের মেয়ে ছিলেন!
ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র: ইরাক যুদ্ধ শুরু করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ সে দেশে গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন। মূলধারার কয়েকটি পত্রিকাও এমন অভিযোগ তুলেছিল। নিউইয়র্ক টাইমসে প্রতিবেদন করেছিলেন জুডিথ মিলার। অবিশ্বস্ত সূত্রের বরাতে তিনি লিখেছিলেন, ‘পুরো ইরাক গণবিধ্বংসী অস্ত্রের এক বড় আধার।’ যদিও পরে এমন অস্ত্রের সন্ধান পাওয়া যায়নি। নিউইয়র্ক টাইমস তাদের রিপোর্টগুলো মানসম্মত ছিল না বলে স্বীকার করেছিল।
পানামা পেপার্স: পানামার ‘মোসাক ফনসেকা’ নামে আইন বিষয়ক এক প্রতিষ্ঠানের সাবেক কর্মচারীর তথ্যের ভিত্তিতে কর ফাঁকি দেয়া দুই লাখের বেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করেছিল ‘ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম’ আইসিআইজে। ২০১৬ সালে প্রকাশিত ঐ তালিকায় বাংলাদেশের অন্তত ৫০ ব্যক্তি ও পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছিল। তবে আইসিআইজে বলেছে, তালিকায় যাদের নাম এসেছে তারা সকলেই যে অনিয়মে জড়িত, এমন নয়।
এনএসএ-র নজরদারি: যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা এনএসএ জননিরাপত্তার জন্য যাদের হুমকি মনে করতো তাদের উপর নজরদারি করতো। কিন্তু ২০১৩ সালে জানা গেল, ডাকঘরকর্মী, প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক সবার উপর নজরদারি করছে এনএসএ। এডওয়ার্ড স্নোডেনের সহায়তায় ওয়াশিংটন পোস্ট ও গার্ডিয়ান এই তথ্য প্রকাশ করে৷ জানা যায়, জার্মান চ্যান্সেলর ম্যার্কেল, ফ্রান্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ওঁলদের মতো যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুরাও নজরদারির আওতায় ছিলেন।
বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে