১৫ বছর পর ছেলেকে খুঁজে পেলেন মা
একবছর বা দু’বছর নয়। দীর্ঘ ১৫ বছর পর ছেলেকে ফিরে পেয়েছেন মা। ছেলের খোঁজ না পেয়ে তিনি মনে করেছিলেন, ছেলেটা বোধহয় মারাই গেছে। কিন্তু সে মারা যায়নি। অবশেষে ফিরেছে মায়ের কোলে।
আবেগে আপ্লুত মা হারানো ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বলেন,‘আমিই তোমার মা। বাবা, আমি তো ভেবেছিলাম তুমি মারা গেছ।’
তখন শুকনো ছিল না ছেলের চোখও। দু হাতে মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে সে বলে, ‘গত ১৫ বছর ধরে আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করেছি, মা। এতদিন পর তোমাকে পেলাম’
ওই ছেলের নাম ইওয়ান। কিন্তু তাদের সংসারে শান্তি ছিল না। সারাদিন বাবা-মায়ের মধ্যে ঝগড়াঝাটি। কাহাতক ভাল্লাগে! এ অবস্থায় একদিন বাবা-মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। তখন বাবার সঙ্গে মালয়েশিয়ায় চলে আসে শিশু আইয়ান। তখন তার বয়স মাত্র ৬ বছর। এরপর আর মা-ছেলের যোগাযোগ নাই। মালয়েশিয়া থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া তার পক্ষে ইন্দোনেশিয়ায় ফেরা সম্ভব হয়নি। কিন্তু পর্যাপ্ত ডকুমেন্ট ছাড়া এসব জোগাড় করাও তো সম্ভব ছিল না। এদিকে ঠিকানা না থাকায় মা-ও ছেলের খোঁজ নিতে পারছিলেন না।
মাকে দেখার জন্য উতলা হয়ে পড়েছিল ইওয়ান। কিন্তু কীভাবে মায়ের সন্ধান পাবে সে, এটা জানা ছিল না তার। ইন্দোনেশিয়া যে আসবে সে উপায়ও নাই। কিন্তু মাকে দেখার জন্য ভিতরে ভিতরে অস্থির হয়ে উঠেছিল ইওয়ান। এসময় তার পাশে এসে দাঁড়ায় ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি। তারা অভিভাবসী শ্রমিকদের ওপর যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে সেখানে ইওয়ানের কথা ছিল। ওই প্রতিবেদন পড়ে বিবিসির সঙ্গে যোগাযোগ করেন তার সৎপিতা।
এ সম্পর্কে ওই ভদ্রলোক বিবিসিকে জানান, প্রতিবেদনটি পড়ার পরই তার মনে হয় এটাই তার স্ত্রীর হারানো সন্তান। কাজ থেকে ফিরলে স্ত্রীকে ঘটনাটা খুলে বলেন তিনি। তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘এটা কি তোমার ছেলে, দেখতো?’ইতিবাচক জবাব দেন ইওয়ানের মা।
এরপর তার সৎপিতা বিবিসি ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং ইউটিউবে ইওয়ানের সঙ্গে সকথা বলেন। এরপর বিবিসি আইওয়ানের মায়ের সঙ্গে দেখা করতে তার বাড়িতে যান এবং তিনিই যে ইওয়ানের হারিয়ে যাওয়া মা সে বিষয়ে নিশ্চিত হন বিবিসি প্রতিনিধি।
এরপর ইওয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার মায়ের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে বিবিসি। ইওয়ান বিবিসিকে জানায়, তার মায়ের নাম হানা এবং তার ছোট ভাইয়ের নাম আইও। ছেলে বেঁচে থাকার খবর শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন হানা। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমার মন বলছিলো আমার ছেলে এখনও বেঁচে আছে।’
ইওয়ান ৬ বছর বয়সে ইন্দোনেশিয়া ছাড়ার পর আর তাকে দেখেননি তিনি। কীভাবে দেখবেন, টেলিফোন, ঠিকানা বা মেইলিং এড্রেস কিছুই জানা ছিল না। অবশেষে ছেলের দেখা পেলেন। খোঁজ পেয়েই ছুটে এসেছেন ইন্দোনেশিয়ায়, ছেলের বাড়িতে। তার ছোট্ট ছেলে ইওয়ান এখন ২১ বছরের তরুণ। তাকে জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘ইওয়ান আমিই তোর মা। আমার প্রিয় পুত্র, তোকে কত খুঁজেছি। কিন্তু কোথাও পাইনি। আমি তোকে অনেক ভালোবাসি।’
ইওয়ানের তো বিশ্বাসই হচ্ছিলো না প্রথমে। তার মা এসেছে তার কাছে, এতদিন পর! তাই কিছুটা হতবুদ্ধি হয়ে পড়েৃছিল সে। ভাবছিল, বুঝিবা স্বপ্ন দেখছে সে। তাই মাকে জড়িয়ে ধরার সাহস হচ্ছিল না। যদি সত্যি না হয়! শেষে বুঝতে পেরে মাকে জড়িয়ে ধরে ইওয়ান। দু চোখ বেয়ে গড়েয় পড়ে আনন্দাশ্রু।
মাকে খুঁজে পাওয়ার পর এবার জন্মসনদও বের করতে পারবে আইওয়ান। সেই সনদ দেখিয়ে পাসপোর্ট আর ভিসা জোগার করাও সম্ভব হবে তার পক্ষে। আর এসব হাতে পেলেই ইন্দোনেশিয়া যেতে পারবে সে। দেখা করতে পারবে পরিবারের অন্যান্যদের সঙ্গে। ইতিমধ্যে ছোটভাইয়ের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছে আওয়ান। এখন নিজ দেশে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে ইওয়ান।
বিবিসি ভিডিও অবলম্বনে মাহমুদা আকতার