ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

করোনায় ঘরবন্দি মানুষ, পশুপাখির দখলে সড়ক

করোনায় ঘরবন্দি মানুষ, পশুপাখির দখলে সড়ক
জাপানের নারা শহরের রাস্তায় সিকা হরিন

করোনাবাইরাসে আক্রান্ত গোটা বিশ্ব। এতে বিশ্বের ১৯৯টি দেশের প্রায় সাড়ে ৭ লঅখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। করোনা ঠেকাতে বেশিরভাগ দেশই বেছে নিয়েছে লকডাউন ব্যবস্থা। ফলে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ। আর এই সুযোগে বিভিন্ন স্থানে বন্য প্রাণীদের অবাধ বিচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এমনকি তারা দখল করে নিয়েছে পার্ক আর সড়কগুলোও। অবলীলায় চলছে তাদের বংশবৃদ্ধিও। তাহলে করোনা মানুষের জন্য অভিশাপ বয়ে আনলেও অবোধ প্রাণীকুলের জন্য প্রকৃতির আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে।

নাগরিক দৃশ্যপট থেকে যে পশুপাখি বহুদিন আগে হারিয়ে গিয়েছিল তারা আবার নিজেদের জায়গা ফিরতে শুরু করেছে। মানুষের মৃত্যু বিষাদের মধ্যে যেন নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছে প্রকৃতি।

পরিবেশে কমেছে দূষণের মাত্রা। সমুদ্রসৈকতে দলবেঁধে জলকেলি করছে ডলফিন। সৈকতে নিশ্চিন্তে ডিম পাড়ছে লাখ লাখ অলিভ রিডলে কচ্ছপ। জনমানবশূন্য রাস্তায় দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে বুনো হরিণ, নীলগাই ও বিরল প্রজাতির সিভেট।

দ্য গার্ডিয়ান বলছে, করোনাভাইরাসে বিধ্বস্ত ইতালির ভেনিসের সমুদ্রতীরে বিশাল ক্রুজ শিপগুলো এখন আর এসে ভিড়ছে না। ফলে ভেনিসের ক্যানালগুলোতে আবার ডলফিন এসে খেলছে।

বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতও বন্ধ থাকায় সেখানে ঝাঁকে ঝাঁকে লাফালাফি করছে ডলফিন। জাপানের নারা শহরের জনশূন্য রাস্তায় দেখা মিলেছে বিরল শিখা হরিণের।

পানামার সান পেলিপে শহরের সমুদ্রসৈকতের তীরে ঘুরে বেড়াচ্ছে মাংসাশী প্রাণী রিকনের একটি দল। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের ওকল্যান্ডের একটি স্কুলের মাঠে টার্কি মুরগির ঝাঁককে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে।

ভারতে সাবওয়েগুলো দখলে নিয়েছে বানরের দল। ভারতের রাস্তায় গাড়িঘোড়া নেই, মানুষের চলাচল নেই, দোকানপাট বন্ধ। ফলে পশুপাখি বহু দিন পর আবার স্বমহিমায় ফিরে এসেছে।

ভারতীয় ফরেস্ট সার্ভিসের তরুণ কর্মকর্তা সুশান্ত নন্দা গত কয়েকদিন ধরে তার টুইটার থেকে অবিরত পোস্ট করে চলেছেন এমনই অসাধারণ সব ছবি, যা গোটা বিশ্বে রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে। অনুপ্রাণিত হয়ে গৃহবন্দি অনেক ভারতীয়ও তাদের ফ্ল্যাটের ব্যালকনি থেকে দুষ্প্রাপ্য প্রাণীদের আনাগোনার ছবি পোস্ট করতে শুরু করেছেন।

সুশান্ত নন্দা জানাচ্ছেন, লকডাউনের কারণে উড়িষ্যার উপকূলে অলিভ রিডলে কচ্ছপগুলো মানুষের নজর এড়িয়ে অনেক শান্তিতে ডিম পাড়তে পারছে। গহিরমাথা আর ঋষিকুল্যা সৈকতজুড়ে এবার প্রায় আট লাখ কচ্ছপ এসেছে, যার অর্থ ভারতের সমুদ্রতটে প্রায় ছয় কোটি অলিভ রিডলের ডিম।

কেরালার ওয়েস্টার্ন ঘাট পর্বত মালাবার লার্জ স্পটেড সিভেট নামের এক বিশেষ ধরনের ভামের বাসভূমি। প্রায় ৩০ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৯০ সালে এই অতিবিপন্ন প্রজাতির প্রাণীটিকে শেষবারের মতো দেখা গিয়েছিল। ধারণা করা হয়, মাত্র আড়াইশ’র মতো পূর্ণবয়স্ক সিভেট এই মুহূর্তে জীবিত আছে।

২৬ মার্চ কেরালার কালিকটের বন্ধ বাজারের মধ্যে একটি সিভেটকে রাস্তার মাঝখানে দেখা গেছে। উত্তরাখন্ড রাজ্যের দুই ব্যস্ত শহর হরিদ্বার আর দেরাদুনের বেশ কাছেই রাজাজি ন্যাশনাল পার্ক।

জনশূন্য সমুদ্রে ডলফিনের জলকেলি

লকাডাউনে সবকিছু যখন সুনসান, হাইওয়েগুলো স্তব্ধ তখন সেই অভয়ারণ্য থেকে হাঁটতে হাঁটতে একপাল বড় শিংওয়ালা হরিণ চলে এসেছিল হরিদ্বার শহরে। দেরাদুনে বাচ্চাদের ক্রিকেট খেলার মাঝে ঢুকে পড়ে তারা।

চন্ডিগড়েও এক হরিণ দলকে শহরের রাস্তা পেরোতে দেখা গেছে। দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত তিরুপতি মন্দিরে যাওয়ার পাহাড়ি রাস্তায় এখন অবাধে বিচরণ করছে চিতল হরিণের পাল।

দিল্লির সীমানাঘেঁষা শহর নয়ডার ব্যস্ততম এলাকা জিআইপি মল ও তার সংলগ্ন রাস্তা। বৃহস্পতিবার দুপুরে সেই জনশূন্য রাস্তায় একটা বিশালদেহী নীলগাইকে (অ্যান্টিলোপ) লাফিয়ে বেড়াতে দেখা গেছে।

আসাম ও অরুণাচল সীমান্তে পাসিঘাট ফরেস্ট এলাকায় দাঁতাল হাতির বিশাল এক দলকে শান্ত মনে রেললাইন পার হতে দেখা গেছে। আগে ভারতের বিভিন্ন স্থানে এরকম রেল লাইন বা সড়ক পার হতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে কত না হাতি! কিন্তু এখন আর সেই ভয় নেই।

করোনাভাইরাস অবিবেচক মানুষকে করেছে ঘরবন্দি। আর প্রকৃতিকে দিয়েছে অবাধে বেড়ে উঠার সুযোগ। নইলে স্বাভাবিক সময়ে মানুষের লোভের কারণে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি প্রকৃতি তথা অবোধ জন্তুগুলো। বিপন্ন হয়েছে জল ও স্থলের কত না প্রাণি! এবার তাদের হাত পা ছড়িয়ে নিরাপদে বংশবৃদ্ধির সুযোগ করে দিয়েছে করোনা। এই সুযোগে প্রকৃতি ফিরুক তার স্বমহিমায়, এমনটাই চান প্রকৃতি দরদী মানুষেরা।

কোথাও কেউ নেই, মনের সুখে রাস্তা পার হচ্ছে হাতির দল

সূত্র: ইন্টারনেট

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত