করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ও বাস্তবতা
ফিচার ডেস্ক
প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২০, ১০:৪০
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ছড়ানোর পাশাপাশি ছড়িয়েছে নানান সব গুজব। তবে, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় এসব গুজব ও বাস্তবতায় বেশ পার্থক্য রয়েছে। আজকের প্রতিবেদনে আলোচনা করব এমনই কিছু গুজবের বিষয়ে।
শিশুদের আশঙ্কা কি বেশি?
শিশুদের নিয়ে আলাদা করে কোনো আশঙ্কা নেই৷ যে কোনো বয়সের মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন৷ আক্রান্তদের পাঁচ জনের চারজনের ওপর এই ভাইরাস সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের মতোই প্রভাব ফেলবে৷ এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হওয়া রোগীদের বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে শিশু ও তরুণ বয়সিরা স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়েই সংক্রমণ কাটিয়ে উঠতে পারেন৷ মধ্যবয়সীরা এতে আক্রান্ত হলেও পর্যাপ্ত সেবা ও চিকিৎসায় তাদেরও সেরে ওঠার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ৷
কী খেলে ঠেকানো যাবে করোনা?
কোনো কিছু খেয়েই করোনা ঠেকানো যাবে না৷ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখার জন্য সুষম খাবার এমনিতেই প্রয়োজন৷ অনলাইনে গুজব ছড়াচ্ছে৷ কেউ রসুন খাওয়ার কথা বলছেন, কেউ ব্লিচিং বা অন্য রাসায়নিক দ্রব্যের কথা বলছেন৷ রসুনে নানা উপাদান রয়েছে যা শরীরের জন্য ভালো৷ রসুন খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ বাড়াতে তা ভূমিকা রাখতে পারে৷ তবে ব্লিচিং বা অন্য রাসায়নিক শরীরে গেলে তা করোনাভাইরাসের চেয়েও মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে৷
গরম বা ঠান্ডা পানি পান করা উচিত?
নিয়মিত পানি পান করলে শরীরের জন্য ভালো৷ কিন্তু ১৫ মিনিট পর পর গরম পানি পান করলে ভাইরাস মারা যাবে, এমন তথ্য সঠিক নয়৷ মুখে বা শরীরে একবার ভাইরাস প্রবেশ করলে কোনো খাবার বা পানীয় দিয়েই তা আটকানো যাবে না৷ শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজেই এই ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে সক্ষম৷
অ্যান্টিবায়োটিক বা কোনো ওষুধে কাজ হবে?
বাংলাদেশ জার্নালে আরো পড়তে পারেন:
> করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর আগে যা বললেন চিকিৎসক
> করোনাভাইরাস: নাগরিকরা প্রত্যেকে পাবেন ১২ শ ডলার
> বিদেশী নাগরিকদের সহযোগিতার আশ্বাস পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
> প্রাথমিক শিক্ষকদের টিফিন ফি যাবে ‘করোনা ফান্ডে’
> যে ৭ রোগ থাকলে করোনা হলে আপনার ঝুঁকি বেশি
> করোনার সচেতনতায় এমনটা কেউ করেননি আগে
> চট্টগ্রামে ছাপা পত্রিকার বিক্রি কমেছে ৯০ শতাংশ
> দেশ লকডাউন হলেও মসজিদ বন্ধ করা যাবে না
> পিপিই ছাড়া চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশনা স্থগিত
> করোনা নিয়ে গুজব ছড়ালে কঠোর ব্যবস্থা
> খুব দ্রুত করোনার ‘ওষুধ’ আনছে জাপান
> ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী করোনায় আক্রান্ত
> লকডাউনে ঘরে সুস্থ থাকার উপায়
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের জন্য কার্যকর, ভাইরাসের জন্য নয়৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে অসুস্থ শরীরে ভাইরাসের পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণও হতে পারে৷ সেসব ক্ষেত্রে চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরামর্শ দিতে পারেন৷ এখনো নভেল করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি৷ বিভিন্ন সংস্থা প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ শিগগিরই হয়তো আসবে সুখবর৷
আবহাওয়া ও তাপমাত্রার কোনো প্রভাব রয়েছে?
এ বিষয়ে এখনো বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত নন৷ পরীক্ষাগারে দেখা গেছে ৬০ থেকে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভাইরাস মারা যায়৷ কিন্তু এত উচ্চ তাপমাত্রা কোনো দেশেই থাকে না৷ অনেকে মনে করছেন গরম পানি দিয়ে স্নান করলে ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে৷ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা সবসময় জরুরি৷ কিন্তু প্রচণ্ড গরম পানি দিয়ে স্নান করলেই তা করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচাবে, এমন তথ্য সঠিক নয়৷
থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে কি করোনাভাইরাস শনাক্ত সম্ভব?
থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে শরীরে তাপমাত্রা বোঝা সম্ভব, ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চত করা সম্ভব না৷ সেক্ষেত্রে কারো শরীরে জ্বর বা অন্য উপসর্গ দেখা দেয়ার আগ পর্যন্ত তার শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি বোঝা যাবে না৷ সাধারণত ভাইরাস শরীরে ঢোকার ১ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৫ দিনের মধ্যেই তা টের পাওয়া যায়৷ তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১৪ দিনের পরও ভাইরাস শরীরে কর্মক্ষম থাকতে পারে৷
মশা বা অন্য পশুর মাধ্যমে ছড়াতে পারে?
সার্স ভাইরাস ছড়িয়েছিল এক ধরনের বেড়াল থেকে৷ মার্স ছড়িয়েছিল উট থেকে৷ নভেল করোনা ভাইরাস কিভাবে ছড়ালো বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত নন৷ ধারণা করা হচ্ছে, বাদুড় থেকে অন্য কোনো মাধ্যম হয়ে মানুষের মধ্যে এটি ছড়িয়েছে৷ তবে মশা বা অন্য কোনো প্রাণীর মাধ্যমে এটি আপনার মধ্যে ছড়াবে না৷ সতর্কতা হিসেবে মাছ-মাংস খাওয়ার আগে ভালোভাবে রান্না করতে হবে৷ অর্ধেক সিদ্ধ মাছ-মাংস বা পোচ করা ডিম থেকে যেকোনো জীবাণুই ছড়াতে পারে৷
মাস্ক কতটা জরুরি?
বাজারে মাস্কের অভাব দেখা দিয়েছে৷ মানুষের ভীতিকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীরা টাকাও কামিয়ে নিচ্ছেন৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাস্ক আপনার জন্য সবসময় জরুরি নয়৷ বাজারে পাওয়া সাধারণ মাস্ক ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচাতে পারবে না৷ বরং যারা চিকিৎসাসেবার সঙ্গে জড়িত এবং যারা এরই মধ্যে আক্রান্ত, তাদের জন্য মাস্ক সবচেয়ে বেশি জরুরি৷ তাই যাদের প্রয়োজন, তাদের মাস্ক কেনার সুযোগ করে দিন৷ এতে আপনার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কমবে৷
কিভাবে থাকবো নিরাপদ?
সবচেয়ে জরুরি হাত পরিষ্কার রাখা৷ সাবান দিয়ে হাত ভালো করে ২০ সেকেন্ড পরিষ্কার করতে হবে৷ যদি সাবান না থাকে, ব্যবহার করতে পারেন অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার৷ হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় টিস্যু ব্যবহার করে তা ডাস্টবিনে ফেলুন, হাত ধুয়ে নিন৷ অথবা হাতের কনুইয়ে মুখ ঢাকুন৷ হাতের তালুতে হাঁচি-কাশি দিলে সেখান থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে আক্রান্ত হতে পারেন অন্য়রা৷ হ্যান্ডশেক বা হাত মেলানো ও কোলাকুলি থেকেও বিরত থাকুন৷
আমি কী মারা যাবো?
করোনায় আক্রান্ত হলেই আপনি মারা যাবেন, এমন আশঙ্কা একেবারেই কম৷ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করুন৷ চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে চলুন৷ অনলাইনে যা দেখবেন, সব বিশ্বাস না করে নির্ভরযোগ্য তথ্যের সন্ধান করুন৷
বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে
আরো পড়ুন:
> করোনায় দেড় মাসের শিশুর মৃত্যু
> মাস্ক নিয়ে পশ্চিমাদের ভিন্ন ভাবনা
> ঘরে বসেই করোনার ঝুঁকি পরীক্ষা
> যে দুই ফল ঠেকাবে করোনাভাইরাস
> গরমে কী করোনাভাইরাস ধ্বংস হবে
> করোনা পরিস্থিতি তুলনামূলক নিয়ন্ত্রণে
> করোনায় সুন্দরবনের কপালে কী আছে!
> করোনা ঠেকাতে তালপাতার মাস্ক ব্যবহার
> করোনায় প্রাথমিকে ‘বার্তা’ দিবে মন্ত্রণালয়
> কোনো ধরনের জনসমাগম নয়: প্রধানমন্ত্রী
> করোনায় চিকিৎসক যুগলের অন্যন্য দৃষ্টান্ত
> করোনা একটি যুদ্ধ, আমাদের জিততে হবে
> লকডাউন না মানলে গুলি করে হত্যার নির্দেশ
> করোনাভাইরাস: সাত উপায়ে থামবে ভুল তথ্য
> মাছ বিক্রেতা নারীই বিশ্বের প্রথম করোনা রোগী!
> পুলিশের লাঠিপেটা হয়রানি, বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ
> করোনা বিষয়ে ড্যাবের স্বাস্থ্যসেবা ও হটলাইন চালু
> ঢাকার রাস্তা নিয়ন্ত্রণ করবে পুলিশ, সাথে সেনাবাহিনী