ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

মহামারির তিক্ততা কমাবে শীতের সুমিষ্ট পিঠা

  হৃদয় আলম

প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২০, ১৬:২৪  
আপডেট :
 ০৯ নভেম্বর ২০২০, ১৬:৪১

মহামারির তিক্ততা কমাবে শীতের সুমিষ্ট পিঠা

শীতে গ্রামবাংলার চিরন্তন ঐতিহ্য মেনে ঘরে ঘরে চলে পিঠা তৈরির ধুম। এই পিঠা ঘরের মানুষ তো বটেই, আত্মীয়স্বজন ও পাড়াপড়শিকে খাইয়েও আনন্দ। এরইমধ্যে শীত বরণের প্রস্তুতির পাশাপাশি জমে উঠছে পিঠার আসরগুলো। অঞ্চলভেদে ভিন্ন ভিন্ন পিঠা যেমন দেখা যায়, তেমনি নামেও রয়েছে পরিবর্তন। আর পিঠার এসব নামের বাহার, খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা যেন কিছুটা বাড়িয়েই দেয়।

হেমন্ত শীতের পূর্বাভাস দেয়। রাতের মৃদু কুয়াশা; বাতাসে শীতের হিম হিম স্পর্শ। কুয়াশার আঁচল সরিয়ে শিশিরবিন্দু মুক্তো দানার মতো দ্যুতি ছড়াতে শুরু করে ভোরের নরম রোদে। মাকড়সার জালে আটকা শিশিরমাখা ভোরের একরাশ সজীব স্বপ্ন যেন প্রকৃতি ও মানুষকে কাছে টানে। কবির ভাষায়- ‘শিউলির প্রলোভনেই হেমন্তের হাত ধরে আসে শীত। ছাতিম আর শিউলি ফুলের ঘ্রাণ ছাড়া শীতের আগমন যেন নিষ্প্রাণ, ছন্দ-গন্ধহীন।’

সংস্কৃত সাহিত্যের বরাতে বলা চলে, ভারতীয় উপমহাদেশে পিঠা খাওয়ার চল দীর্ঘদিনের। কৃত্তিবাসী রামায়ণ, অন্নদামঙ্গল, ধর্মমঙ্গল, মনসামঙ্গল, চৈতন্যচরিতামৃতসহ বিভিন্ন কাব্য এবং মৈমনসিংহ গীতিকার কাজল রেখা আখ্যানে জনপ্রিয় খাদ্য হিসেবে পিঠার উল্লেখ পাওয়া যায়। এই বইপত্রগুলো অনধিক ৫০০ বছরের পুরোনো। তবে প্রাচীন বইপুস্তকে যেহেতু পিঠা বানানো ও খাওয়ার কথা এসেছে, তাই ধরে নেওয়া যায় পিঠা খাওয়ার ঐতিহ্য বাঙালি সমাজেও অনেক প্রাচীন।

জেলা শহরের রাস্তার পাশে মাটির চুলোয় টাটকা খেজুরের রসের পিঠাসহ নানান ধরনের পিঠা পাওয়া গেলেও ঢাকা শহরে মূলত ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, চাপটি পিঠা ও তেল পিঠার আধিক্য। রাজধানীতে দোকানিরা পিঠা-প্রেমিকদের আকর্ষণ করার জন্য সরিষাসহ হরেক রকমের ভর্তার ব্যবস্থা করে থাকেন, যেন কিছুটা তৃপ্তি আসে গ্রাহকের মনে।

বছরজুড়ে ঢাকা শহরে পিঠা পাওয়া গেলেও জমিয়ে পিঠা খাওয়ার আসল সময় শীতকাল। কৃষি সংস্কৃতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ থাকা গ্রামীণ মানুষ পুরো বছর পিঠা খায় না।

হেমন্তে নতুন ধান উঠে যাওয়ার পর আসে নবান্ন। আর এর পরেই পৌষসংক্রান্তি। অর্থাৎ পৌষ মাসের শেষ দিন। পৌষের হিম হিম ঠাণ্ডায় খোলা আকাশের নিচে পাতা চুলার পাশে বসে গরমাগরম বাহারি পিঠা খাওয়া হচ্ছে —সুখী বাঙালি গার্হস্থ্য জীবনের আদর্শ দৃশ্য। যদিও যৌথ পরিবার ভেঙে যাওয়ার পর এমন দৃশ্য কম চোখে পড়ে।

রাজধানীতে এখনও শীত পুরোপুরি জেঁকে বসেনি। কিন্তু তারপরেও এরই মধ্যে জমে উঠেছে পিঠার আসর। ঢাকার গুলিস্তান, মালিবাগ, নিউমার্কেট, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজারসহ বেশ কিছু এলাকায় ঘুরে কার্যত এ দৃশ্যই চোখে পড়ে।

কথা হয় বেশ কয়েকজন পিঠা ব্যবসায়ীর সাথেও। তারা জানান, ১০-১৫ দিন আগ থেকে শুরু হয়েছে পিঠা বিক্রি। কিন্তু এখনও ততোটা জমজমাট হয়নি পিঠার আসর।

তাদের মতে, আরও কয়েকদিন পর বেশি শীত আসলে পিঠা বিক্রি বাড়বে। তবে, এখন যা বিক্রি হয় তা নিতান্তই খারাপ না।

কথা হয় কাওরান বাজারের পিঠা বিক্রেতা আরমানের সাথে। তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘শীতে সব জায়গাতেই ভাপা ও চিতই পিঠার আধিক্য থাকলেও রসের পিঠা গ্রামেই বেশি দেখা যায়। ভাপা পিঠা মূলত সকাল ও সন্ধ্যায় বিক্রি হয়। বেলা বাড়লে এ পিঠা পাওয়া যায় না। খুব ভোরে শুরু হয়ে বেলা ১০/১১টা পর্যন্ত এবং বিকালে শুরু হয়ে রাত ৯/১০টা পর্যন্ত এ পিঠা বিক্রি হয়। তবে অন্যান্য পিঠা সারাদিনই পাওয়া যায়।’

গুলিস্তানের ব্যবসায়ী লিটন জানান, তারা তিন ধরণের পিঠা বিক্রি করেন। তাছাড়া তাদের কাছে রয়েছে ১৫-২০ ধরণের ভর্তা। এ ভর্তাই মূলত ক্রেতাদের আকৃষ্ট করেন বলে জানান লিটন।

তিনি আরো বলেন, আমরা মূলত পাতিলে করে পিঠার জন্য গোলা (পিঠা তৈরির গুড়ো) নিয়ে আসি। যতক্ষণ এ গুড়ো থাকে আমরা ততোক্ষণ বিক্রি করি। তবে, সাধারণত ১০-১১টার মধ্যেই বিক্রি শেষ হয়ে যায়।

রাজন নামের অপর এক পিঠা ব্যবসায়ী বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘আমরা বিকেলে আসি ৪টার দিকে এরপর রাতে দশটা বা সাড়ে দশটা পর্যন্ত চলে পিঠা বিক্রি। লাভ যা হয় তা মোটামুটি খারাপ না। সামনে শীত বাড়লে বিক্রি আরও বাড়বে। তাছাড়া সে সময় আমরা আরও কয়েক ধরণের পিঠা আনব।’

মিরপুর এলাকায় চার বছর ধরে শীত মৌসুমে ভাপা ও চিতই পিঠা বিক্রি করছেন রহিমা বেগম। তিনি জানান, নতুন চাল, নারকেল ও খেজুরের তৈরি গুড় দিয়ে ভাপা পিঠা তৈরি করা হয়। এখন প্রতিদিন গড়ে ২০০ ভাপা পিঠা বিক্রি করেন। চিতই পিঠা অন্তত ৫০০টি বিক্রি হয়। সামনে শীত বাড়লে এর পরিমাণ আরো বাড়বে।

প্রসঙ্গত, বছরজুড়ে ঢাকা শহরে সারা বছরই পাওয়া যায় পাটিসাপটা পিঠা। এছাড়া চিতই পিঠা খাওয়ার অনুষঙ্গ সবচেয়ে বিচিত্র —গলির মোড়ের বা কোনো জনবহুল জায়গার চিতই পিঠা বিক্রেতাকে দেখলেই সেটা বোঝা যায়।

কোন এলাকার চিতই পিঠা বিক্রেতা কত পদের ভর্তা দিচ্ছে, তার ওপর তাদের খ্যাতি নির্ভর করে আজকাল। দুই–চার পদ ভর্তা তো বটেই, সতের পদের ভর্তাসহযোগে চিতই পিঠা খাবার অভিজ্ঞতা আছে কারও কারও।

বসন্তের আগমন পর্যন্ত চলে পিঠা খাওয়া। পুরনো নিয়মে মূলত মাঘ মাসে পিঠা খাওয়া শুরু হয়ে ফাল্গুনে শেষ হতো। চৈত্র মাসেও পিঠা খাওয়া হয় তবে সেটা আর স্বাদে-স্বস্তিতে জমে না!

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত