ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

একজন সাবলম্বী গৃহিণী হেনা

  আলফি শাহরীন

প্রকাশ : ১৯ মে ২০২২, ১৪:৪৮  
আপডেট :
 ১৯ মে ২০২২, ১৭:২৮

একজন সাবলম্বী গৃহিণী হেনা

নারী মানেই সংসারের কাজ, নারী কে হতে হবে সাংসারিক। এই যুগে এমন ধারনা থেকে বের হয়ে আসছে নারীরা। শুধু সাংসার এর কাজের পাশে নিজেকে গৃহিণী হিসেবে নয় বরং ঘরে বসেই নিজেকে "উদ্যোক্তা" হিসেবে সমাজে নিজের এক আলাদা পরিচয় গড়ে তুলছে তারা। অনেক গৃহিনীই এখন নিজেকে করে তুলছে সাবলম্বী। অনলাইন ব্যবসা তাদের এই পথচলা আরও সহজ করে দিয়েছে।

তেমনি এক সাবলম্বী গৃহিণী হেনার সাথে কথা হয় বাংলাদেশ জার্নালের। চলুন তার মুখেই শুনে নেই তার এগিয়ে যাওয়ার গল্প।

‘আমি হেনা আফরোজ নাভিলা। আমি একজন গৃহিণী। পাশাপাশি আমি হোমমেড খাবার নিয়ে কাজ করছি। বেকিং বক্স- Baking বক্স নামে আমার একটি ছোট অনলাইন বিজনেজ রয়েছে।

উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন বা ইচ্ছা কোনটাই শুরুতে ছিল না। খুব অল্প বয়সে পড়াশোনা ছেড়ে নিজের পছন্দের মানুষ সাথে বিয়ে করি। তারপর আর পড়াশোনা করা হয়নি। ইচ্ছা ছিলো কিন্তু সম্ভব হয়নি।

বিয়ের ৩-৪ বছর পরে একটা কন্যা সন্তান হয় তারপর একটা ছেলে সন্তান, আলহামদুলিল্লাহ। সংসার আর বাচ্চাদের নিয়েই সময় কাটছিলো। আস্তে আস্তে সংসারের খরচ বাড়তে থাকলো। কিন্তু ইনকাম ততোটা ছিলনা। যেহেতু পড়াশোনা খুব একটা করিনি তাই ইচ্ছা থাকলেও কোথাও কোন কাজ করা সম্ভব হচ্ছিলো না। এদিকে বাচ্চারাও ছোট ছিলো।

আমার মা খুব কেক খেতে পছন্দ করতেন সব সময় শুধু বলতো, ‘যদি আমি কেক বানাতে পারতাম...!’ আম্মুর মুখে থেকে এই কথাটা শুনে মনে হলো আমি চেষ্টা করি। যদি আমি ভালো কেক বানাতে পারি, আম্মুকে আমি নিজে কেক বানিয়ে খাওয়াতে পারবো। তাহলে আম্মুর আর আফসোস থাকবে না।

ইউটিউব দেখে অনেকবার নিজে নিজে চেষ্টা করেছি কিন্তু সফল হতে পারিনি। তারপর চিন্তা করলাম যে আমি ক্লাস করবো বেকিং এর উপর।

প্রথমে সাভারে একজনের কাছে আমি বেকিং ক্লাস করি কিন্তু মন মতো ফল পাইনি। অন্যদিকে ক্লাস করার জন্য অর্থের প্রয়োজন হয়। যেটা আমার খুব কষ্ট করে সংসার খরচ থেকে যোগাড় করতে হতো। তারপরে চিন্তা করলাম যে ঢাকার দিকের ক্লাসগুলো আরো উন্নত মানের। তাই আমি আর সাভারে ক্লাস না করে ঢাকার দিকে যাওয়ার চেষ্টা শুরু করলাম।

এদিকে আবার রয়েছে আমার বাচ্চারা। ছোট বাচ্চাদের রেখে কোথাও যাওয়াটাও আমার জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো। তারপরে আমি আমার শাশুড়ি আর বড় নোনাসের সহযোগিতায় নিয়ে বাচ্চাদেরকে তাদের কাছে রেখে ঢাকার দিকে গেলাম বেকিং ক্লাসের জন্য। দু-এক জায়গায় ক্লাস করার পরে আমার আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায়। তারপর আমি আর কোথাও ক্লাস করতে পারছিলাম না। তবে, নিজের অজান্তে বেকিং কাজটাকে খুব ভালোবেসে ফেললাম। খুব আগ্রহ সৃষ্টি হতে থাকলো। যে আমাকে এই কাজটা শিখতেই হবে। কিছু একটা করতেই হবে। এখন সবার কাছেই মোটামুটি পরিচিত একটি ইউটিউব চ্যানেল যার নাম ‘কুকিং বুক বাই টুম্পা’। আমার আপন বোন থাকলেও হয়তো এতো ভালোবাসা আমি পেতাম না যা এখান থেকে পেয়েছি।

২০১৯ সালে প্রথম আমি ঢাকা মিরপুর-২ এ টুম্পা মনি আপুর কাছে বেকিং এর ক্লাস করতে যাই। তারপর থেকে আমাকে আর কখনো পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখতে হয়নি। আপু আমাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। শুধুমাত্র প্রথমদিনের ক্লাসের ফি আমি দিয়েছিলাম। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত কোন ক্লাসের কোন ফি আমার কাছে থেকে কখনোই নেয়নি আপু। আমার না বলা কথাগুলো কিভাবে জানি আপু আমার চোখের দিকে তাকিয়েই বুঝে ফেলেছিলো এবং সে আমাকে বলেছিলো, তোর কোন টাকা লাগবে না আমার কাছে কাজ শিখতে হলে তুই শুধু আসবি। তারপর থেকেই আপুর সাথে সাথে থেকে আমার আত্মবিশ্বাস চলে আসলো নিজের উপরে। আমি সবসময়ই মানুষের সামনে যেতে বা কথা বলতে ভয় পাই। আপু সব সময় আমাকে সবার সামনে রিপ্রেজেন্ট করে এবং আমাকে সাহস দেয়।

সব কাজেই ছোট খাটো বাধা থাকেই। আমার বাধা বলতে শুধুমাত্র আমার সন্তানদের বাসায় রেখে ঢাকা গিয়ে কাজ শেখাটাই ছিলো। যেটাতে আমাকে অনেক সাপোর্ট দিয়েছেন আমার শ্বশুর-শাশুড়ি, উনাদের সাপোর্ট ছাড়া আমার বেকিং এবং কুকিং জগতে আসা বা কাজ করা কোনভাবেই সম্ভব ছিলো না।

ভবিষ্যতে ইচ্ছা আছে হোমমেড খাবার নিয়ে একটা দোকান খোলার। আমি আমার সন্তানদের যেভাবে স্বাস্থ্যকর খাবার নিজে বাসায় তৈরি করে খাওয়াচ্ছি। আমি চাই সব শিশুরাই এরকম স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করুক আমার সেই দোকানের মাধ্যমে।’

বাংলাদেশ জার্নাল/এএস/এসএস

  • সর্বশেষ
  • পঠিত