ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

তারানা হালিমের সঙ্গে একদিন...

  আজমেরি হক বাঁধন

প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০১৮, ১৬:৩৬  
আপডেট :
 ১২ নভেম্বর ২০১৮, ১৯:২২

তারানা হালিমের সঙ্গে একদিন...

৫ অক্টোববর, ২০১৮। আমি তারানা আপুর সঙ্গে বিটিভির নারী ও শিশু উন্নয়নমূলক এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলাম।

আমি সবসময় নারী এবং শিশুদের উন্নয়নে কাজ করতে আগ্রহী। তাই তারানা আপু আমাকে ওই অনুষ্ঠানের কথা বলতেই আমি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যাই। আমাদের বেলা ১টায় সেখানে যাওয়ার কথা থাকলেও আমি সাড়ে ১২টার দিকেই পৌঁছে যাই। বাড়িটাতে প্রবেশ করার পর মনে হলো আমি যেন একটি চলচ্চিত্রের দৃশ্যে প্রবেশ করেছি। বাড়িটা খুব সুন্দর করে সাজানো গুছানো ছিলো। সেখানে প্রচুর লোকজন ছিলো এবং তারানা আপু নিজ হাতে তাদের স্ন্যাকস আর ড্রিংকস সার্ভ করছিলেন। এতটাই অমায়িক তিনি! আমরা দুপুর ১টার দিকে রওয়ানা হলাম এবং বনানী গেলাম। তিনি গাড়ি থেকে নেমে এসে নিজ হাতে আমাদের সবাইকে স্ন্যাকস দিলেন। তিনি সেখানকার প্রত্যেককে স্ন্যাকস দিলেন। এমনকি বাদ পড়েনি অন্য গাড়ির লোকজনও। এরপর আমরা যাত্রা শুরু করলাম।

সারা রাস্তা তিনি তার ছেলের কথা বলছিলেন। আমার শুনে খুব ভাল্লাগছিলো। কারণ কেবল আমিই একমাত্র মা নই যে সন্তানের চিন্তায় অস্থির। পৃথিবীর সব মা-ই তার সন্তানদের নিয়ে চিন্তা করে। পৃথিবীতে মায়ের স্থান কেউ নিতে পারবে না।

আমরা অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলেছিলাম। আপু ‘বঙ্গবধূ’ আর আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে তৈরি চলচ্চিত্র ‘হাসিনা এ ডটার্স টেল’ নিয়েও কথা বলেছেন, যা আগামী ১৬ নভেম্বর মুক্তি পাচ্ছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী তার পরিবারকে কতটা ভালোবাসা ও সমর্থন দিয়েছেন সে নিয়েও কথা বলেন তিনি। গাড়িতে আরো দুইজন ভদ্রমহিলা ছিলেন; মেমি আপু আর পূনম আপু। গল্প করতে করতে আমরা টাঙ্গাইল পৌঁছে গেলাম। অনেক মানুষ তারানা আপুকে স্বাগত জানানোর অপেক্ষায় ছিল এবং আমরা দূর থেকেই তাদের দেখতে পাচ্ছিলাম। আপু ভেন্যু থেকে ১/২ কিলোমিটার আগেই নেমে গেলেন। বাকি রাস্তা হেঁটেই গেলেন। আর আমরা রইলাম গাড়িতে।

ঠিক সময়ে প্রোগ্রাম শুরু হলো। হাজার হাজার মানুষ সেখানে উপস্থিত ছিল। বাচ্চারা আমাদের সামনে বসেছিল। আমরা তাদের খাবার দিয়েছিলাম। যখনই খাবার দেওয়া হত আপু উঠে দাঁড়িয়ে শিশুদের সেগুলো দিতেন। সবাই নারী উন্নয়ন নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন; আমরা কী পরিবর্তন করতে পারি এবং আমাদের কী করা উচিত। সবার শেষে বক্তব্য রাখেন তারানা আপু এবং সবাই মুগ্ধ হয়ে তা শুনছিল। তারপর ডিনারের সময় হলো।

ডিনার শেষ করার পর তারানা আপুর সঙ্গে দেখা করার জন্য অনেক মানুষ আসলো। সবার একটাই ইচ্ছা ‘নৌকা মার্কা’। একজন বলল, ‘আপা নৌকা মার্কা নিয়ে আসেন। টাকা নিয়ে চিন্তা কইরেন না। আমরা সব বিক্রি করে দিব।’ আরেকজন বলল, ‘আমরা জমি বিক্রি কইরা দিব।’ আমি দেখছিলাম, ভাবছিলাম মানুষ তাকে কতটা ভালোবাসে! কী অবিশ্বাস্য ভালোবাসা! কী মায়া!

এরপর বিদায় জানানোর সময় আসলো। আমরা বাড়ি ফিরতে শুরু করলাম । গাড়িতে আমরা আবার আলাপ শুরু করলাম। আসার পথে আপুকে একবার নামাজ আদায় করতে দেখলাম। নামাজ শেষে তিনি ফের টাঙ্গাইলের লোকজনের কথায় ফিরে গেলেন। এক পর্যায়ে তিনি বললেন-‘আমার না এই মানুষগুলোর জন্য অনেক মায়া হয়ে গেছে!’ বলতে বলতে তার চোখে পানি চলে এলো। বাইরে থেকে আসা আলোতে আমি তা স্পষ্ট দেখতে পেলাম, যদিও তখন গাড়ির ভিতরটা অন্ধকার ছিল। তিনি আরো বললেন, তিনি ওই মানুষগুলোর উন্নতির জন্য আরো বেশি কিছু করতে চান, আল্লাহ চাইলে এবং সে সুযোগ দিলে তিনি তা করে দেখাবেন।

আপু, আমি সবসময় আপনাকে একজন বড় তারকা হিসেবে জানতাম যিনি অসম্ভব প্রতিভাবান, যিনি পড়াশুনা, নাচ, সঙ্গীত-এ সবকিছুতেই প্রথম ছিলেন। কিন্তু এই বিশেষ দিনে আপনার সম্পর্কে আমার নতুন ধারণা হলো। আপনি একজন মমতাময়ী মা, একজন সফল নেতা এবং সৎ মানুষ । আমি শুধু মুগ্ধ আপনার মত একজন ব্যক্তিত্বের সাক্ষাৎ পেয়ে, যিনি এত সম্মান আর মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করেন। আপু, আজ আপনাকে দেখে আমি অনেক সাহস, আত্মবিশ্বাস এবং সৎ থাকার প্রেরণা পেলাম। সত্যি বলতে কি, সততার চেয়ে বড় কোনো শক্তি নেই!

ম্যাম, আপনাকে আমার সহস্র সালাম! আপনার মত মানুষ যদি আমাদের দেশ শাসন করে, তাহলে আর কোন দুর্নীতি থাকবে না। আমি বিশ্বাস করি, আমরা নারীরা যখন আমাদের দাবি নিয়ে সোচ্চার হব তখনও আপনাকে আমাদের পাশে পাবো যখন। আমার দোয়া ও ভালোবাসা সবসময় আপনার সাথে থাকবে।

আপু, আমাদের আপনার মত একজন ব্যতিক্রমী মানুষ দরকার। আমরা আপনার মত একজন নেতা চাই! আপনার এলাকার মানুষের ভালোবাসা আপনাকে তাদের জন্য কিছু করার সুযোগ দিবে, ইনশাল্লাহ।

লেখক: মডেল ও অভিনেত্রী

অনুবাদ: মাহমুদা আকতার

বাংলাদেশ জার্নাল/কেআই/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত