ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

কেমন ছিল সুলতান সুলেমানের শেষ জীবন?

কেমন ছিল সুলতান সুলেমানের শেষ জীবন?

১৫৬৬ সালে বৃদ্ধ বয়সে অস্ট্রিয়া ক্যাম্পেইনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন মুসলিম বিশ্বের অন্যতম প্রতাপশালী শাসক সুলতান সুলেমান খান। যাকে বলা হয় ‘সুলাইমান দ্যা ম্যাগনিফিসেন্ট’। চরম অসুস্থ থাকা সত্বেও যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি।

ওই ক্যাম্পেইনে যাবার আগে তিনি তার পূর্বপুরষ আব আইয়ুব আল আনসারির কবর জিয়ারতে যান। এরপর ১৫৬৬ সালের ২০ এপ্রিল ২৯ তিনি ইস্তাম্বুল ত্যাগ করেন।

তখন তার পরনে ছিল শুভ্র পোষাক। ঘোড়ায় চেপে বসলেন তিনি। সামনে-পেছনে ছিল সৈন্যদের বহর। যদিও তার শরীর তেমন চাঙা ছিল না। যুদ্ধে যাওয়ার পথেই তিনি ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে ঘোড়া থেকে নামিয়ে বিশেষ বাহনে তুলেন তার প্রধানমন্ত্রী ( উজিরে আজম) সুকুল্লু মেহমেত পাশা। এই অবস্থাতেই তিনি হাঙ্গেরির দক্ষিণাঞ্চলের যিগেটভারে পৌঁছান। সৈন্যদের মনোবল যাতে না টলে সে জন্য সুলতানের অসুস্থতার খবর গোপন রাখা হয়।

তবে এই সময়ই সৈন্যদের মধ্যে সুলতানের স্বাস্থ্য নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। তাদের মনোবল ঠিক করতে যিগেটভারে ঘোড়ায় চেপে সৈন্যদের সামনে হাজির হন সুলেমান। যিগেটভারে যুদ্ধ (যা ইতিহাসে সিজ অব যিগেটভার নামে পরিচিত) শুরু হয় ১৫৬৬ সালের ৭ আগস্ট। তবে যুদ্ধে অংশ নিতে পারেননি সুলতান। অসুস্থতা তীব্র আকার ধারণ করায় তিনি যুদ্ধে অংশ নিতে ব্যর্থ হন। নিজের তাঁবুতে বসেই যুদ্ধ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন তিনি। কঠিন যুদ্ধের পরও যিগেটভারের দখল নিতে পারছিলেন না তিনি। কথিত যে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হতে দেখে তিনি হাত তুলে দোয়া করেছিলেন, ‘এই দুর্গ আমার হৃদয় জ্বালিয়ে দিয়েছে, আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছি এটি আগুনে জ্বলবে’। এরপরই নাকি যিগেটভার শহরের দখল নিয়েছিলেন তিনি।

তবে সুলেমানের বাহিনী তখনও দুর্গের দখল নিতে পারেনি। প্রতিপক্ষের সেনারা নিজেদের দুর্গে আশ্রয় নেয়। নিজেদের শহরে নিজেরাই আগুন জ্বালিয়ে দেয়। অটোম্যান সেনারা দুর্গেল দখলে মরিয়া হয়ে উঠলেও নিকোলা-৭ এর নেতৃত্বাধীন শক্তিশালী বাহিনীকে হটাতে পারছিল না। সুকুল্লু মেহমেত পাশা নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। অবশেষে সেপ্টম্বরের ৫ তারিখে তারা দুর্গ দখলে সক্ষম হন।

এর ঠিক দুদিন পরই আকস্মিক মারা যান সুলতান সুলেমান। উজিরে আজম সুকুল্লু মেহমেত পাশা সুলেমানের মৃত্যুর খবর গোপন রাখেন। এই সময়ে অটোম্যান রাজ্যের জীবীত একমাত্র উত্তরসূরি ছিলেন শাহজাদা সেলিম। তিনি কুতাহয়া সানজাকে ছিলেন। তিনি সেখান থেকেই পিতার মৃত্যু সংবাদ পান।

অবশেষে ৪২ দিন সুলতানের মৃত্যুর খবর গোপন রাখার পর তার শেষকৃত্যের আয়োজন করেন হয়। শাহজাদা সেলিম সিংহাসনে আরোহণ করেন। মৃত্যুর সময় সুলেমানের বয়স ছিল ৭২ বছর। ৪৬ বছর সিংহাসনে থাকার পর তার মৃত্যু হয়। অটোম্যান সুলতানদের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। ওই সময়কে বলা হয় অটোম্যানদের স্বর্ণযুগ। সুলতান সুলেমান প্রকৃতপক্ষে দীর্ঘদেহী ও গোলাকার চেহারার অধিকারী ছিলেন। মুহুব্বি নামে কবিতা লিখতেন তিনি। বলা হয় তিনি, তার্কিশ বাদেও আরবী, ফার্সি, ও সালভিচ ভাষাও জানতেন। সূত্র-ডেইলি সাবাহ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত