ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

প্রতিদিন ২শ ভিখারিকে বিনামূল্যে চা খাওয়ান তিনি

প্রতিদিন ২শ ভিখারিকে বিনামূল্যে চা খাওয়ান তিনি

চায়ের রেসিপিতে নেই কোনও বিশেষত্ব। গড়পড়তা সাধারণ মানের চা। একইরকম উপকরণ –জল, দুধ, চিনি, চা পাতা। কিন্তু কী করে বিখ্যাত হলেন এই বৃদ্ধ চা বিক্রেতা? তার আবেগ আর সমবেদনা দিয়ে। তার বানানো চায়ে মিশে থাকে ‘ভালোবাসা’। মানুষকে উজাড় করে ভালোবাসতে জানেন তিনি। ৭৩ বছর ধরে রাস্তার ভিখারি, ক্ষুধার্ত, দীন দরিদ্রকে খাওয়াচ্ছেন নিজের টাকা খরচ করে।

প্রতিদিন ভোর তিনটের সময় উঠে দোকানে যান। দোকানের ঝাঁপ খোলেন যখন তার মধ্যেই খদ্দেরদের লাইন পড়ে যায়। চা বানাতে শুরু করেন। সাড়ে চারটের মধ্যে তৈরি হয়ে যায় তার বিখ্যাত ‘কড়ক মশলা চা’ আর তা দিয়েই দিন শুরু করে দেন অনেকেই।

বিগত ৭৩ বছর ধরে প্রতি দিনের এমনই রুটিন গুলাব সিং জি ধিরাওয়াতের। ইনি ভারতের জয়পুরের সবচেয়ে জনপ্রিয় চা-ওয়ালা। মির্জা ইসমাইল রোডের ওপর গণপতি প্লাজার সরু পার্কিং লেনের ভেতরে তার এই চায়ের দোকানঃ ‘গুলাব জি চায়ওয়ালে’।

১৯৪৬ সাল থেকে চালাচ্ছেন এই চায়ের দোকান, এত বছর ধরে রোজ গরম ধোঁয়া ওঠা মশলা চা বিক্রি আসছেন তিনি। এখন আবার সিঙ্গারা আর বন পাউরুটিও পাওয়া যায় ওই দোকানে। গুলাবজির চা এক চুমুক খেলেই নাকি এই ঐতিহাসিক শহরটার সত্যি কারের নির্যাস আস্বাদন করা যায়। গুলাবজি বলেন ‘আমার চায়ে তো আলাদা কিছুই নেই। সাধারণ ভাবে যা যা জল, দুধ, চিনি, চা পাতা এসব দিয়েই চা বানাই আমি। কিন্তু অন্যরা বলে এতে নাকি ভালোবাসা মেশানো থাকে’।

গুলাবজির দোকান মানে গরম গরম চায়ের সঙ্গে দেদার আড্ডা। এই দোকানেরও আছে এক নিজস্ব ইতিহাস। গর্বিত এই বৃদ্ধ বলেন, ‘আমি যখন প্রথম ব্যবসা শুরু করব বলে ভাবলাম, কেউ সমর্থন করেনি। জমিদার রাজপুত পরিবারের ছেলে আমি। এই কাজ আমার বংশের মর্যাদা নষ্ট করবে এমন ভাবল পরিবারের লোকজন। তাই পাশ থেকে সরে গেল সবাই। দূরত্ব তৈরি হল আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে। তাঁদের সামাজিক মান মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হত আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখলে। কিন্তু আমি যা স্থির করেছিলাম তাতেই অটল রইলাম। আজ তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছে। আমাকে অনুসরণ করে এখন তারাই।’

১৯৭৪ সালে মাত্র ১৩০ টাকা দিয়ে দোকান বানিয়ে শুরু করেছিলেন ব্যবসা। এখন দিনে আয় হয় ২০,০০০ টাকা। ২০ টাকায় চায়ের সঙ্গে মেলে টা-ও। প্রতিদিন প্রায় ৪০০০ এর ওপর খদ্দের হাজির হয় চা জলখাবার খেতে। ‘মানুষজন বয়স নিয়ে বড় হইচই করে। কিন্তু আমার জন্য এ কিছুই নয়। অলস মানুষরাই বয়সের দোহাই দিয়ে ঘরে বসে থাকে। কিন্তু একটা ঠিকঠাক জায়গায় পৌঁছনোর জন্য যে সারা জীবন লড়াই করেছে, তার কাছে প্রতিটি কাজের দিনই আশীর্বাদের মত। যতদিন শরীরে দেবে ততদিনই কাজ করে যাব আমি’।

গুলাবজির কাছে তার দোকান শুধু জীবিকার সংস্থান নয়, এ তার অস্তিত্বের অংশ। প্রতিদিন সকাল ৬টায় আর দুপুর বারোটায় দোকানের সামনে ভিখারিরা ভিড় করে। গুলাবজি তাদের বিনা পয়সায় চা সিঙ্গারা, পাউরুটি মাখন খাওয়ান। ‘আমরা সবাই শুধুমাত্র নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত থাকি। কিন্তু মৃত্যুর সময় মানুষের ভালোবাসা, আশীর্বাদ আর আনন্দ বই কিছুই সঙ্গে করে নিয়ে যাই না আমরা তাই নিজের আনন্দের জন্যই আমি এসব করি। শেষ নিঃশ্বাস ফেলার আগে অবধি করে যাব’ জানান প্রৌঢ় চা বিক্রেতা।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত