সিলেটে বিখ্যাত যারা
ফিচার ডেস্ক
প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০১৯, ১৫:১০ আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০১৯, ১৯:৪৪
সিলেট বিভাগ বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত একটি প্রশাসনিক অঞ্চল, যা সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ- এই চারটি জেলা নিয়ে গঠিত। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পূর্ব থেকেই (অর্থাৎ পাকিস্তান আমল থেকেই) সাবেক সিলেট জেলা ছিলো চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত। পরবর্তীকালে চারটি জেলা নিয়ে বাংলাদেশের ষষ্ঠ বিভাগ সিলেট গঠিত হয়।
প্রাচীন গ্রন্থাদিতে এ অঞ্চলের (সিলেট বিভাগ) বিভিন্ন নামের উল্লেখ আছে।
হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে শিবের স্ত্রী সতী দেবির কাটা হস্ত (হাত) এই অঞ্চলে পড়েছিলো। যার ফলে ‘শ্রী হস্ত’ হতে শ্রীহট্ট নামের উৎপত্তি বলে হিন্দু সম্প্রদায় বিশ্বাস করেন। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের ঐতিহাসিক এরিয়ান লিখিত বিবরণীতে এই অঞ্চলের নাম ‘সিরিওট’ বলে উল্লেখ আছে।
ইসলামের ভিত্তিতে হযরত শাহ্ জালাল (রা.) যখন সিলেটে আসেন তখন তার শত্রুরা তাকে পাথর বা শিল দ্বারা আগলে ধরে ধরে, তখন হযরত শাহ্ জালাল (রা.) আল্লাহ্ তায়ালার উসিলায় বলেন ‘শিলা হাট’ (অর্থ্যাৎ ‘পাথর সরে যা’)। এই থেকেই নাম করণ করা হয় ‘শিলা হাট’। আস্তে আস্তে বানানকে সহজ করতে করতে ‘শিলহাট’, ‘সিলহেট’, ‘সিলেট’ নামকরণ করা হয়।
সিলেট বহু বিখ্যাত লোকের জন্মস্থান। হাসন রাজা, মেজর জেনারেল এম এ রব, রাজা গিরিশচন্দ্র রায়ের মতো অনেক বিখ্যাত লোকের জন্মস্থান সিলেট। আজ পরিচিত হবো এমনই কিছু বিখ্যাত ব্যক্তিদের সাথে।
গিরিশ চন্দ্র রায়রাজা গিরিশ চন্দ্র রায় সিলেটের প্রথম রায়বাহাদুর ও একমাত্র রাজা খেতাব প্রাপ্ত ব্যক্তি। শিক্ষার প্রসারকল্পে গিরিশ চন্দ্রের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বৃটিশ সরকার ১৮৯৫ সালে তাকে রায়বাহাদুর ও ১৮৯৯ সালে রাজা উপাধিতে ভূষিত করেন।
সিলেট রায়নগরের বিখ্যাত জমিদার দেওয়ান মানিকচাঁদের পুত্র মুরারীচাঁদের সন্তানহীনা কন্যা ব্রজ সুন্দরী দেবী, গিরিশ চন্দ্রকে দত্তক নিয়েছিলেন। এভাবে তিনি রায়নগরের জমিদার মুরারীচাঁদের বিশাল সম্পত্তির মালিক হন। নিজে নিরক্ষর হলেও শিক্ষার প্রসারে তিনি তার সমস্ত বিত্ত-সম্পদ ব্যয় করেন। তিনি সিলেটের তথা আসামের প্রথম কলেজ এম.সি. কলেজ ১৮৯২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া তিনি সিলেট মুরারোচাঁদ কলেজ এবং ১৮৮৬ সালে রাজা গিরিশ চন্দ্র হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।
হাসন রাজাঅহিদুর রেজা বা দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরী (ছদ্মনাম) বাংলাদেশের একজন মরমী কবি এবং বাউল শিল্পী। তার প্রকৃত নাম দেওয়ান হাসন রাজা। হাছন রাজার জন্ম ১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর (৭ পৌষ ১২৬১) সেকালের সিলেট জেলার সুনামগঞ্জ শহরের নিকটবর্তী সুরমা নদীর তীরে লক্ষণছিরি (লক্ষণশ্রী) পরগণার তেঘরিয়া গ্রামে।
মেজর জেনারেল এম এ রবমেজর জেনারেল এম এ রব, মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড, বাংলাদেশের প্রথম সেনাবাহিনী প্রধান ও সাবেক সংসদ সদস্য।
শাহ আবদুল করিমউস্তাদ শাহ আবদুল করিম কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী, সুরকার, গীতিকার ও সঙ্গীত শিক্ষক। তিনি বাউল সঙ্গীতকে অনন্য উচ্চাতায় নিয়ে গেছেন। কর্মজীবনে তিনি পাঁচ শ’র উপরে সংগীত রচনা করেছেন। শাহ আবদুল করিম ইব্রাহিম আলী ও নাইওরজানের ঘরে ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
আগা মোহাম্মদ বেগসিলেটে ব্রিটিশ বিরুধী আন্দলোনের সংগঠক ও নেতৃত্বদাতা।
সৈয়দ মোস্তফা কামালসৈয়দ মোস্তফা কামাল লেখক, ঔপন্যাসিক, গবেষক, ঐতিহাসিক। সৈয়দ মোস্তফা কামালের জন্ম ২৫ শে জানুয়ারি ১৯৪৩ ইংরেজি সনে, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার মসাজান গ্রামে।
দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফদেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ, দার্শনিক, সাহিত্যিক ও সমালোচক। তিনি সুনামগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন।
শ্রীচৈতন্যদেবশ্রীচৈতন্যদেব একজন হিন্দু সন্ন্যাসী এবং ষোড়শ শতাব্দীর বিশিষ্ট বাঙালি ধর্ম ও সমাজ সংস্কারক।
দুর্বিন শাহদুর্বিন শাহ বাংলাদেশের একজন মরমী গীতিকবি, বাংলা লোক সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষ্যকার, বাউলসাধক। তিনি ১৩২৭ বঙ্গাব্দের ১৫ কার্তিক (১৯২০ খ্রিস্টাব্দ এর ২ নভেম্বর) ছাতকের সুরমা নদীর উত্তর পারে নোয়ারাই গ্রামের তারামনি টিলায় জন্মগ্রহণ করেন।
আরকুম শাহশাহ আরকুম আলী একজন আধ্যাত্মিক সাধক ও সূফী। তার জন্ম ১৮৭৭ সালে সিলেটে।
এ-ছাড়াও এ জেলায় জন্মগ্রহণকারী অন্যান্য প্রখ্যাত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন :রামকানাই দাশ
সুষমা দাস
রফিক উদ্দিন আহমেদ (বিজ্ঞানী)
শিতালং শাহ (গিতিকার)
গজনফর আলী খান
হেমাঙ্গ বিশ্বাস
সুহাসিনী দাস
খান বাহাদুর এহিয়া চৌধুরী
মৌলভী আবদুল করিম
গোবিন্দ চন্দ্র দেব
রাধারমণ দত্ত
এনামুল হক মোস্তফা শহীদ
আরো অনেক গুনি লোকের জন্মস্থান সিলেট। যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখে দেশের উন্নতির জন্য কাজ করে গেছেন। তাদের কথা জাতি দীর্ঘদিন শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করবে।
বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে