ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩১ মিনিট আগে
শিরোনাম

ঘরের টাকায় শহর পরিষ্কার!

ঘরের টাকায় শহর পরিষ্কার!

অন্ধ্রপ্রদেশের তরুণী ইঞ্জিনিয়ার তেজস্বী পোদাপতি তার মাইনের ৭০% ব্যয় করেন দু’টি শহর পরিচ্ছন্ন রাখার কাজে। শহর দু’টিকে পোস্টার মুক্ত করারও প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের বিবিধ স্তর থেকে এসেছে বাধা। কিন্তু তবু নিজের বিশ্বাসে আর কাজে অটল থেকেছেন তিনি।

বি-টেক’এর শেষ বছরে সংবাদ পত্রে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে তিনি পড়েন, অন্ধ্রপ্রদেশের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া শহর প্রকাশম জেলার অঙ্গোল। এ জায়গা যে তারই জন্মভূমি । এই খবরে স্বাভাবিকভাবেই ব্যথিত ও বিচলিত হন তার মত সংবেদনশীল এক জন মানুষ।

‘শুধুমাত্র সরকারের ওপর সব দোষ না চাপিয়ে আমি নিজেও কিছু করার সিদ্ধান্ত নিলাম আমার শহরের উন্নয়নের জন্য। গবেষণা চলাকালীন আমি বেশ বুঝতে পারলাম, অপরিচ্ছন্নতা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ আমার শহরের পিছিয়ে পড়ার একটি বড় কারণ। বেঙ্গালুরুর দ্য আগলি ইন্ডিয়ান ইনিশিয়েটিভ-এর ব্যাপারে আমি আগেই শুনেছিলাম। এটি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যারা রাস্তাঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজ করে। এ রকম আমার অঙ্গোলেও যদি ভাবা যেত ! কিন্তু এ কাজের জন্য তো বিস্তর লোকবল চাই। কোথা থেকে পাব এত স্বেচ্ছাসেবক?’ এমন ভেবে ভেবে যখন সারা হচ্ছিলেন এই পরিবেশ-বান্ধব তরুণী, তখন বাবা তাকে সমর্থন করলেন, দিলেন আশ্বাস। বন্ধুদের কাছে প্রস্তাব নিয়ে যেতে ৮০%-ই গররাজি হল। বাবা বললেন, ‘কেউ কেউ তো রাজি হয়েছে, এই-ই ঢের’।

২০১৫ সালের ১৫ই অক্টোবর ড. এ পি জে আবদুল কালামের জন্মদিনে ১০ জন সঙ্গী নিয়ে অঙ্গোলের একটি উদ্যান পরিষ্কার করার কাজে নেমে পড়লেন তেজস্বী। যাত্রা শুরু করল ‘ভূমি ফাউন্ডেশন’। প্রথম প্রথম লোকজন তাকে আর তার এ হেন কর্মকাণ্ড নিয়ে হাসি ঠাট্টা, ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করত। কিন্তু তিনি তো ‘তেজস্বী’। কাজেই উত্তর দিলেন। কাজ চালিয়ে যেতে লাগলেন এক গভীর বিশ্বাসে ! শহরের দেয়ালে দেয়ালে, গাছে গাছে টাঙানো সমস্ত পোস্টার, ফ্লায়ার খুলে নেওয়া হল, জঞ্জালের স্তূপ সরানো হল, রাস্তাঘাটের চেহারা বদলে গেল কিছু মানুষের পরিশ্রমে আর উদ্যমে। তেজস্বীর নেতৃত্বে। শুরু হল ‘ওয়ান গোল, ক্লিন অঙ্গোল’ প্রকল্প ।

একটাই লক্ষ্য, প্রিয় অঙ্গোলকে পরিচ্ছন্ন, সুন্দর করে তোলা। অনেক বছর ধরে যে উদ্যানগুলি নোংরা পুতিগন্ধময় হয়ে পড়েছিল, একে একে সব পরিষ্কার হল। যারা ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করত, তারাই এখন প্রশংসা করে শহর পরিচ্ছন্ন করার এই প্রয়াসকে।

প্রথম দিকে এই কাজে তার বাবা অর্থ সাহায্য করতেন তাকে। ‘কিন্তু চাকরি পাওয়ার পর থেকে আমি নিজেই নিজের মাইনে থেকে টাকা দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনি। আমার আয়ের ৭০% অর্থ এই কাজেই ব্যয় করি আমি’ জানিয়েছেন এই অনন্যা।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত