ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩১ মিনিট আগে
শিরোনাম

চলে গেলেন সাহিত্যিক নবনীতা সেন

  কলকাতা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০১৯, ০৯:২৫  
আপডেট :
 ০৮ নভেম্বর ২০১৯, ০৯:৩১

চলে গেলেন সাহিত্যিক নবনীতা সেন

বিশিষ্ট বাঙালি কবি ও সাহিত্যিক নবনীতা দেবসেন আর নেই। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭.৩৫ মিনিট নাগাদ দক্ষিণ কলকাতার হিন্দুস্থান পার্কে নিজ বাসভবন ‘মার ভালবাসা’য় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।

দীর্ঘদিন ক্যনসারে ভুগছিলেন তিনি, সাথে ছিল বার্ধক্যজনিত রোগও। শারীরিক অসুস্থতার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে বাইরেও খুব একটা বের হতেন না। বাড়িতেই চলছিল তার চিকিৎসা।

তার মৃত্যুর খবর শুনেই দক্ষিণ কলকাতার হিন্দুস্থান পার্কের বাসভবনে ভিড় জমান ভক্ত, অনুরাগী ও যাদবপুরের শিক্ষার্থীরা। তার বাড়ির সামনে উপস্থিত হন তৃণমূল সাংসদ মালা রায়, তৃণমূল নেতা নির্বেদ রায়, কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার, সিপিআইএম নেতা রবীন দেব। যদিও প্রয়াত নবনীতা দেব সেনের বাড়ির কারও সাথেই কথা বলতে পারেননি তারা।

তবে নবনীতা দেবসেনের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার তার মরদেহ বাড়িতেই শায়িত রাখা হবে। শেষকৃত্যের ব্যাপারে শুক্রবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

নবনীতা দেবসেনের প্রয়াণে শোক জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনার্জি। এক টুইটে তিনি লেখেন ‘বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ নবনীতা দেব সেনের প্রয়াণে আমি খুবই মর্মাহত। একাধিক পুরস্কার প্রাপ্ত এই লেখিকার অনুপস্থিতি তার গুণমুগ্ধ শিক্ষার্থী ও শুভাকাঙ্খীরা অনুভব করবেন। তার পরিবার ও গুণমুগ্ধদের প্রতি আমার সমবেদনা।’

শোক প্রকাশ করে বিশিষ্ট সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘নবনীতা দেবসেনের চলে যাওয়াটা আমার ব্যক্তিগত ও বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে অপূরণীয় ক্ষতি। কারণ তিনি এত প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ ছিলেন যে সেটি আর কারো মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তিনি যাতে হাত দিয়েছে তাতেই সোনা ফলেছে। আমি তার লেখার খুব ভক্ত ছিলাম। তার মতো রসবোধ সম্পন্ন লেখক খুব কম আছে।’

গত মাসের শেষ দিকে নবনীতা দেবসেনের বাড়িতে গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নোবেলজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জি।

১৯৩৮ সালের ১৩ জানুয়ারী জন্মগ্রহণ করেন নবনীতা। তার পিতার নাম নরেন্দ্র দেব, মাতা রাধারানী দেবী। তারাও দুজনেই ছিলেন কবি। স্বাভাবিক ভাবেই সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশে তিনি বড় হয়েছেন। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক ও যাদবপুর কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও মাস্টার্স করেন তিনি। ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষনা করেন। পড়াশোনা করেছেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়েও। ১৯৭৫-২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপক ও বেশ কিছুকাল বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর ছিলেন।

১৯৫৯ সালে প্রথম কবিতার বই ‘প্রথম প্রত্যয়’ প্রকাশিত হয় তার। ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস ‘আমি অনুপম’। কবিতা, প্রবন্ধ, রম্যরচনা, ভ্রমণকাহিনী, উপন্যাস মিলে তার প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ৩৮। আত্মজীবনী মূলক রম্যরচনা ‘নটী নবনীতা’ গ্রন্থের জন্য ১৯৯৯ সালে সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন তিনি। বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ২০০০ সালে পদ্ম পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।

প্রসঙ্গত, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের স্ত্রী ছিলেন নবনীতা। ১৯৫৯ সালে তাদের বিয়ে হয়। তাদের দুই কন্যা অন্তরা দেব সেন ও নন্দনা সেন। বড় মেয়ে অন্তরা সাংবাদিক ও সম্পাদক। অন্যদিকে ছোট কন্যা নন্দনা অভিনেত্রী ও সমাজকর্মী। ১৯৭৬ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়।

সাবেক স্ত্রীর মৃত্যুতে বিদেশ থেকে অমর্ত্য সেন ফোনে কলকাতার এক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন ‘তার সঙ্গে দেখা করতে পারলে ভাল হতো। আমি তার অভাব অনুভব করবো। মানুষ তার অভাব বহুদিন মনে রাখবে।’

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত