১৯৯৪ থেকে ২০১৯
অ্যামাজনের সেকাল-একাল
হৃদয় আলম
প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০১৯, ২০:১০ আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০১৯, ১৫:৪৬
২৫ বছর আগে গ্যারেজে গড়ে ওঠা অ্যামাজন আর আজকের অ্যামাজনের মধ্যে বহু পার্থক্য রয়েছে। প্রথমদিকে অ্যামাজন ছিলো ছোট একটি বইয়ের দোকান। অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস ১৯৯৪ সালের ৫ জুলাই ওয়াশিংটনের সিয়াটল শহরে অল্প কয়েকজন কর্মী নিয়ে একটি পরিত্যক্ত গুদামে শুরু করেছিলেন অ্যামাজনের পথচলা। যা আজ বিশ্বের সবচেয়ে বড় অনলাইন শপিং সেন্টার। ছোট থেকে বড় সব ধরণের পণ্যই পাওয়া যায় অ্যামাজনে। লোগোর মাধ্যমে নিজেদের বিশেষত্বই বোঝায় অ্যামাজন। A to Z লোগোটা যেন ক্রেতার মুখের হাসিকেই ইঙ্গিত করে।
অ্যামাজনের নাম শুরুতেই অ্যামাজন ছিলোনা। শুরুতে ‘ক্যাডাব্রা’ নামে যাত্রা শুরু করে অ্যামাজন। এরপর দ্বিতীয়বারে ‘রিলেন্টলেস’ নামে অ্যামাজনের আত্মপ্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হলে এর নামকরণ করা হয় অ্যামজন।
অ্যামাজনের জন্ম
১৯৯৪ সালের ৫ জুলাই জেফ বেজোস ও তার স্ত্রী ম্যাকেনজি বেজোস একটি বইয়ের দোকান চালু করে ওয়াশিংটনের সিয়াটলে। ওই শহরটি শিক্ষার জন্য বেশ নামকড়া ছিলো। তাছাড়া ছোট আকারের ব্যবসার জন্য টাক্সও ধার্য ছিলোনা ওখানে। শুরুতে জেফ নিজের কাছে থাকা ১০০০০ ডলার বিনিয়োগ করেন অ্যামাজনে। জেফ এবং তার অল্প সংখ্যক কর্মীরা খুব সকালে কাজ শুরু করতেন। তারা তাদের অর্ডারগুলো সংগ্রহ করতেন এবং পণ্য কিনে ক্রেতার ঘরে পৌঁছে দিতেন। এভাবে প্রথম মাসেই অ্যামাজন যুক্তরাষ্ট্রসহ ৪৫টি দেশে অনলাইনে ২০ হাজার ডলার বা ১৬ লাখ টাকার বই বিক্রি করে। ওই সময়টাতে অনলাইনে বইয়ের এমন বিক্রি ছিলো অভাবনীয়।
এরপর ১৯৯৭ সালে ১৮ ডলার দামে শেয়ার বিক্রির মধ্য দিয়ে প্রকাশ্যে আত্মপ্রকাশ করে অ্যামাজন।
দ্বিতীয় বিতরণ কেন্দ্র উদ্বোধন
দিন দিন চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৯৯৭ সালের ১৮ নভেম্বর অ্যামাজন নিউ ক্যাসলে দ্বিতীয় বিপণী কেন্দ্র চালু করে। এর মাধ্যমে কোম্পানিটি আশপাশের শহরগুলোর ক্রেতার সাথে সংযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা করে।
গানের জগতে প্রবেশ
ব্যবসার প্রসারের সাথে সাথে ১৯৯৮ সালে অ্যামাজন সিডি এবং ডিবিডি বিক্রি শুরু করে। এটি অনলাইনে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার গানের তালিকা নিয়ে শুরু করে। যেখান থেকে ক্রেতা তার পছন্দের গান বাছাই এবং কিছু অংশ শুনে পছন্দের সিডিটি কিনতে পারতেন।
অ্যালেক্সা
১৯৯৯ সালে অন্য ওয়েবসাইটের রেটিং দেখানোর ওয়েবসাইট অ্যালেক্সা কিনে নেয় অ্যামাজন। যা এখন র্যাংকিং দেখানোর জন্য বিশ্বে জনপ্রিয়।
জামা-কাপড় বিক্রি শুরু
অ্যাম্যাজন ২০০২ সালের সাত নভেম্বর প্রায় ৪০০ কাপড় কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয় এবং তাদের কাপড় অনলাইনে বিক্রি শুরু করে। বইয়ের বাইরে এ সময়টাতে অ্যামাজনে বিক্রি শুরু হয় বিভিন্ন ধরণের ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, খেলনা ও রান্নার সামগ্রী।
ওয়েব হোস্টিং ব্যবসা চালু
২০০৩ সালের ১০ জুন বাড়তি আয়ের জন্য ওয়েব হোস্টিং ব্যবসা চালু করে অ্যামাজন। এটি অন্য ই-কমার্স সাইটগুলোকে লাইসেন্স প্রদানসহ হোস্টিংয়ের ব্যবস্থা করতে থাকে। অ্যামাজন থেকে সে সময় হোস্টিং সেবা নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিলো বর্ডার ডট কম এবং টার্গেট ডট কম।
১৫ বছর পর আজ ডোমেইন নিবন্ধন এবং হোস্টিং সরবারহের অন্যতম একটি বৃহৎ কোম্পানি অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিস।
চীনে প্রবেশ
২০০৪ সালের আগস্টের ১৯ তারিখ ৭৫ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে অ্যামাজন কিনে নেয় সে সময়কার চীনের সবচেয়ে বড় অনলাইনে বই ও ইলেকট্রনিক পণ্য বিক্রির অনলাইন মার্কেট ‘জোয়ো’। এরপর এর নাম পরিবর্তন করে ‘অ্যামাজন চাইনিজ’ করা হয়। কিন্তু এতে তেমন লাভ হয়নি অ্যামাজনের। ২০১৮ সালের এক জরিপে দেখা যায় জোয়ো যেখানে অনলাইনে মাত্র ০.৭ শতাংশ পণ্য বিক্রি করতে সক্ষম সেখানে আলিবাবা বিক্রি করে ৫৮.২ শতাংশ।
কিন্ডেল বিক্রি শুরু
২০০৭ সালের ১৯ নভেম্বর ডিজিটাল মাধ্যমে বই পড়ার যন্ত্র ‘কিন্ডেল’ বাজারে আনে অ্যামাজন।
সিয়াটেলে মূল অফিস নির্মাণ
২০০৭ সালের ২১ ডিসেম্বর আলোচনার মধ্যে দিয়ে অ্যামাজন তাদের মূল অফিস সিয়াটেলে বানানোর সিদ্ধান্ত নেয়। যখন শহরটাতে সবে উঁচু উঁচু ভবন গড়ে উঠতে শুরু করেছিল। অ্যামাজন যে ভবনটি নিয়েছিল তাতে প্রায় ৪০০০০ কর্মী কাজ করতে সক্ষম হয়।
জুতা বিক্রির ওয়েবসাইট উদ্বোধন
২০০৯ সালের ২২ জুলাই ৯০০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে সমস্ত জুতাসহ জুতা বিক্রি ওয়েবসাইট ‘জ্যাপোস’ কিনে নেয় অ্যামাজন। এরপর এটিতে বিনা খরচে নষ্ট পণ্য ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করে অ্যামাজন।
দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট ক্রয়
২০১৩ সালের ৫ আগস্ট ১৪০ বছরের পুরোনো পত্রিকা দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট কিনে নেয় বেজোসের মালিকানাধীন কোম্পানি ন্যাশ হোল্ডিং। এর মূল্য ধরা হয় ২৫০ মিলিয়ন ডলার।
হোল ফুড
২০১৬ সালে ১৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে গ্রোসারি কোম্পানি হোল ফুডকে কিনে নেয় অ্যামাজন। এ সময় শুধু এর মালিকানাই পরিবর্তন করা হয়। এর নাম পরিবর্তন করা হয়নি। গ্রোসারি শপ হোল ফুডে মূলত দৈনন্দিন জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও খাবার বিক্রি করা হয়।
এক টিলিয়নের মার্কেটে অ্যামাজন
২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে টিলিয়নের মাইলফলক স্পর্শ করে অ্যামাজন। সর্বপ্রথম টিলিয়নের মাইলফলক স্পর্শ করে আমেরিকান বহুজাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপল। বিশেষজ্ঞদের মতে সবার আগে দুই টিলিয়নের মাইলফলকে পৌঁছাবে অ্যামাজন।
অ্যামাজনের ২৫ বছর
২০১৯ সালের ৫ জুলাই ২৫ বছর পার হওয়ার পর অ্যামাজনের ৬ লাখ ৪৭ হাজার ৫ শ কর্মী রয়েছে। প্রায় ২৮৮.৪ মিলিয়ন স্কয়ার ফিটের রিয়েল স্টেটের ব্যবসা এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় অর্ধেক অনলাইন খুচরা বাসের অ্যাকাউন্টে রয়েছে অ্যামাজনের।
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই অ্যামাজনের পণ্য বিকিকিনি রয়েছে। প্রাকৃতিক বিশাল আমাজন অরণ্যের মতোই তথ্যপ্রযুক্তি জগতের বিস্ময় অ্যামাজন ডটকম।
জেফ বেজোস
অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা ও বিশ্বের শীর্ষ ধনী, ৮ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের সম্পদের অধিকারী জেফ্রি বেজোসের (জেফ বেজোস) জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬৪ সালের ১২ জানুয়ারি নিউ মেক্সিকোতে।
জেফের বাবা মায়ের দাম্পত্য সম্পর্ক ভালো ছিলোনা। একপর্যায়ে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে গেলে বেজোস তার নানা বাড়িতে বড় হতে শুরু করেন। এরপর তার মা বিয়ে করেন মিগুয়েল মাইক বোজোসকে। যখন জেফের বয়স ছিলো মাত্র চার বছর। একপর্যায়ে সৎ বাবার পদমর্যাদায়ই ব্যবহার করা শুরু করেন জেফ। জেফের পরিবার ততোটা দরিদ্র ছিলোনা। তার মায়ের পরিবার প্রায় ২৫ হাজার একর জমির মালিক ছিলো।
ছোটবেলা থেকে জেফের আগ্রহ ছিলো বিজ্ঞানের প্রতি। আর তিনি ছোটবেলাতে নিয়মিত নানান ধরণের বিজ্ঞানের প্রতিযোগীতায় অংশও নিতেন।
১৯৮৬ সালে তড়িৎ প্রকৌশল ও কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেন জোফ। এরপর জোফ বেশ কিছু কোম্পানির হয়ে কাজ শুরু করেন। তিনি কোম্পানিগুলো কম্পউটার নেটওয়ার্ক তৈরির কাজ করতেন। সর্বশেষ ১৯৯৪ সালে জোফ বেজোস প্রতিষ্ঠা করেন অ্যামাজন ডট কম। আর এরপরের ইতিহাস কারোই অজানা নয়!
বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে