ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২০ মিনিট আগে
শিরোনাম

মিশরে গরমকালের বউ

মিশরে গরমকালের বউ
ছবি-সংগৃহীত

মুসলিম পুরুষদের শর্ত সাপেক্ষে চার স্ত্রী গ্রহণের বিধান রয়েছে ইসলাম ধর্মে। তাই বলে কেবল গ্রীস্মকালের জন্য বিয়ে করার কথা কে কবে শুনেছে। শুনুন আর নাই শুনুন, এই অদ্ভুদ বিয়ের চল রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ মিশরে। অর্থের লোভ দেখিয়ে মিশরের শত শত কিশোরীকে সাময়িক বিয়ে করে থাকেন ধনী দেশগুলো থেকে আগত পর্যটকরা। দেশটিতে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক নিষিদ্ধ হওয়ায় নিজেদের যৌন চাহিদা মেটাতে এমন সাময়িক বিয়ে করছেন দেশটিতে বেড়াতে আসা বিদেশি পর্যটকরা। এসব মেয়েরা দেশটিতে ‘গ্রীষ্মকালীন বউ’ হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে।

২০০৮ সালের গ্রীষ্মকালের একদিন। হুরাইরার বয়স তখন কেবল ১৫ বছর। দরজা খুলেই বাইরে এক পুরুষকে তার বাবা ও সৎ মায়ের সঙ্গে কথা বলতে দেখল সে। তার সামনেই হলো সব কথাবার্ত। মাত্র দে়ড় লাখ টাকা যৌতুকের বিনিময়ে সৌদি আরব থেকে আসা সেই ব্যক্তিটি তাকে বিয়ে করে নেয়। ওই বিয়ের বয়স ছিলো মাত্র ২০ দিন। এই বিয়ের মাধ্যমে ক্রমাগত ধর্ষণের শিকার হতে হয়ে হুরাইরাকে। এরপর গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষ। হুরাইরাকে আবার বাবা-মায়ের কাছে ফেরত দিয়ে নিজ দেশে ফেরত চলে যান ওই সৌদি নাগরিক। আর কখনও সে ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হয়নি হুরাইরার।

মিশরে যৌনকর্মীদের আরেক নাম ‘গ্রীষ্মকালীন স্ত্রী’। তাদেরই একজন হুরাইরাও। প্রতি বছরই উপসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ থেকে এমন ‘স্ত্রী’বেছে নিতে মিশরে আসেন পর্যটকেরা। এর বিনিময়ে মেয়ের পরিবারকে যে অর্থ দেয়া হয় তা তাদের জন্য অনেক কিছু।

সে দিনের স্মৃতিচারণ করে হুরাইরা বলেন, সবকিছু খুব লোভনীয় লাগছিল। আমার পরিবার আমাকে নতুন কাপড় আর উপহারের লোভ দেখায়। লোভে পড়ে আমিও রাজি হয়ে যাই। আমি তখন খুব ছোট ছিলাম৷’

হুরাইরার পরিবার তার বিয়ের যৌতুকের টাকায় একটি ফ্রিজ আর ওয়াশিং মেশিন কিনেছিলো।

হুরাইরার বয়স এখন ২৮। এর মধ্যে তার আরো আটবার বিয়ে হয়েছে। নিজের অতীত নিয়ে তিনি লজ্জিত এবং নিজের আসল নামও প্রকাশ করতে চান না। বাইরে বের হলে নিজেকে সবসময় আড়াল করে রাখেন কালো নেকাবে। তিনি বলেন, ‘আমি তখন খুব সহজ সরল ছিলাম, ভালোবাসায় বিশ্বাস করতাম। বিয়ের প্রথম রাত খুব ভয়াবহ ছিল। এরপর থেকে আমি মানসিক সমস্যায় ভুগি।’

কিন্তু এরপরও এই বিয়ের সংস্কৃতি থেকে বের হতে পারেনি হুরাইরা। কেননা দারিদ্রতার কারণে বার বার মেয়েকে চোর করে বিয়ে দিয়েছেন তার বাবা। মিশরে এমন হুরাইরা একজন নয়, বহু। আর সঠিক আইন না থাকায় অপরাধীদের সাজা দেয়াও সম্ভব হচ্ছে না। হয়তো কোনো দালালকে ধরা হলো। তাকে শাস্তি দেয়া হলো ১৮ বছর। কিন্তু কদাচিৎ দু একজনকে শাস্তি দিয়ে কি আর এসব অপরাধ বন্ধ করা যায়। তাই মিশরে বিয়ের নামে অবাধে চলছে পতিতাবৃত্তি। আর দেশটিতে এ ধরনের বিয়ে সহজলভ্য হওয়ায় সৌদি আরব, কুয়েত ওমানের মত মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে ছুটে আসছে পুরুষেরা। আর লোভে পড়ে তাদের ফাঁদে পা দিচ্ছে হুমায়রার মতো সরল আর অল্পবয়সী মেয়েরা।

হুরাইরা এখন বাবা ও সৎ মায়ের সঙ্গেই আছেন। সত্যিকারের বিয়ের জন্য মনে মনে একজন সত্যিকার প্রেমিক পুরুষের সন্ধান করছেন হুরাইরা৷ কিন্তু হুরাইরার সে আশা পূরণ হওয়ার সম্ভবনা নেই বললেই চলে। কেননা মিশরে ‘গ্রীষ্মকালীন স্ত্রী'দের খুবই খারাপ চোখে দেখা হয়। মিশরের রক্ষণশীল সমাজের কোনো পুরুষই এমন মেয়েকে বিয়ের যোগ্য মনে করে না। তাই ফের হয়তো কোনো বিদেশি পর্যটকের সঙ্গে আরেক বার গ্রীস্মকালীন বিয়েতে রাজি হতে হবে হুমায়রাকে।

সূত্র: ডয়েচে ভেলে

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত