শেখ হাসিনার নেতৃত্বের বিকল্প নেই: খালিদ মাহমুদ
তৌফিক ওরিন
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ২০:৪৪ আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ২০:৫৪
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। বর্তমানে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। খালিদ মাহমুদ ১৯৭০ সালের ৩১ জানুয়ারি দিনাজপুর জেলার বোঁচাগঞ্জ উপজেলার ধানতলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আবদুর রউফ চৌধুরী সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মা রমিজা রউফ চৌধুরী।
বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ প্রয়াত আব্দুর রউফ চৌধুরীর একমাত্র পুত্র খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে উঠে এসেছেন। ছাত্রজীবনে তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্র রাজনীতি শেষ করে তিনি আওয়ামী লীগের মূল রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। এ সময় তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সান্নিধ্য লাভ করেন। ২০০১-০৬ সময়ে তিনি সুধা সদনে বসে শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করতেন। জরুরি অবস্থার সরকারের সময় শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন তিনি।
দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার স্নেহধন্য খালিদ মাহমুদ ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে দিনাজপুর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। টানা তিনবার নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য এবারই প্রথম মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। দায়িত্ব পেয়েছেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর। এই মন্ত্রণালয়ে পূর্ণমন্ত্রী না থাকায় একাই তিনি সামলাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রণালয়ের কাজ। একই সাথে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবেও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
সাম্প্রতিক আওয়ামী লীগের কাউন্সিলসহ দলীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ জার্নালের সাথে কথা বলেছেন খালিদ মাহমুদ। সেই আলাপে উঠে এসেছে আসন্ন সম্মেলনের বিভিন্ন দিক। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বাংলাদেশ জার্নালের নিজস্ব প্রতিবেদক তৌফিক ওরিন
বাংলাদেশ জার্নাল: আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন আগামী ২১ ও ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সম্মেলনের প্রস্তুতি কতটুকু?
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী: সম্মেলন প্রস্তুতি পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে। সম্মেলনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে ১২টি উপ কমিটি গঠন করা হয়েছে। সম্মেলকে সফল করতে কমিটিগুলোর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ জার্নাল: আওয়ামী লীগ প্রতিটি সম্মেলনে দেশের জনগণকে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়ে থাকে। এবারের সম্মেলন থেকে কী ধরণের বার্তা পেতে যাচ্ছে?
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী: আওয়ামী লীগের সম্মেলন হতে যাচ্ছে; এর দিকে শুধু রাজনীতিবিদরা নন, সারাদেশের মানুষ তাকিয়ে আছে। রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক, জাতীয়, ভূ-রাজনীতি; সকল বিষয়েই আমাদের বার্তা থাকবে। সেটার জন্য ২০ ও ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আওয়ামী লীগের যেহেতু সম্মেলন হচ্ছে দেশের মানুষের এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বের প্রত্যাশা মেটানোর যে সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নেয়া দরকার, কাউন্সিলে সেই সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপই আসবে।
বাংলাদেশ জার্নাল: আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মধ্যদিয়ে নেতাকর্মীরা কোন পরিবর্তন দেখবে কিনা?
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী: আমরা তো পরিবর্তনের দিকেই যাচ্ছি। দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের পরিবর্তন প্রতিনিয়তই হচ্ছে। প্রতিদিনই আমাদের দেশ এগিয়ে যাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে। আমরা তো একটি টার্গেট দিয়েছি। আমরা গ্রাজুয়েশনের মধ্যে রয়েছি। ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমাদের এভাবে রাখতে হবে, ২০৪১ সালে উন্নত দেশ এবং পরবর্তীতে ডেল্টাপ্লান বাস্তবায়ন। সেই লক্ষ্য পূরণ করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগেরই একমাত্র সক্ষমতা রয়েছে। এটি অন্য কোন রাজনৈতিক দলের নাই। আওয়ামী লীগ একটি দেশপ্রেমিক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভিত্তিক একটি রাজনৈতিক দল। যে বৈশিষ্টটা অন্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে নাই।
বাংলাদেশ জার্নাল: রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগেই আভ্যন্তরিণ গণতন্ত্রের চর্চা করতে দেখা যায়। কোন ধরণের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে দলের নেতাকর্মীদের মতামতকে প্রধান্য দেয়া হয়। আসন্ন সম্মেলন থেকে সাংগঠনিক জেলার সংখ্যা বৃদ্ধির কোন সম্ভবনা রয়েছে কিনা?
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী: সাংগঠনিক জেলা বাড়ানোর কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে যেগুলো সিটি কর্পোরেশন হয়েছে সেগুলো মহানগর হবে। আমাদের ইতিমধ্যে একটা সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে যে বিভাগীয় শহরগুলোই মহানগর হবে। যদি ফরিদপুর বিভাগ হয় তাহলে ফরিদপুরে একটি জেলা বাড়বে।
বাংলাদেশ জার্নাল: আসন্ন সম্মেলনে সংগঠনিক পদ বৃদ্ধির কোন সম্ভবনা রয়েছে কিনা? কাউন্সিলকে সামনে রেখে আপনারা এমন কোন প্রস্তাব করেছেন কিনা?
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী: এটা তো কাউন্সিলরদের সিদ্ধান্ত। কাউন্সিল অধিবেশনে এই ধরণের সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন হয়। আমাদের গঠনতন্ত্র সাব কমিটিতে যেসব বিষয় আলোচনা হয়েছে এমন কোন প্রস্তাবনা নাই। প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক পদের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, এটা গতবারও আলোচনা হয়েছিল; তবে এটা গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
বাংলাদেশ জার্নাল: এবারের সম্মেলনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কেমন নেতৃত্ব উপহার পেতে যাচ্ছেন?
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী: বাংলাদেশের মানুষের চিন্তা-ভাবনা, প্রাপ্তি, চাহিদা সব কিছু মিলিয়েই নেতৃত্ব আসবে। এই মুহূর্তেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বের বিকল্প শুধু আওয়ামী লীগে নয়, বাংলাদেশেই নেই। কাজেই নেতৃত্বের ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত রয়েছি। এটা পরিবর্তনের চিন্তা আমরা করছি না। এই ধরণেই নেতৃত্ব শুধু দলগত বিষয় নয়, এটা দেশের মানুষের সৌভাগ্য।
বাংলাদেশ জার্নাল: দলের সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন হবে কিনা?
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী: সাধারণ সম্পাদক নেতৃত্ব না। নেতা হচ্ছেন সভানেত্রী। সভানেত্রী সাধারণ সম্পাদক পদে যাকে পছন্দ করবেন সেই হবেন। এই রকম যোগ্য নেতা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে অনেক আছে। উনি (শেখ হাসিনা) যাকে পছন্দ করবেন তিনিই হবেন। নেতা শেখ হাসিনা, এখানে বিকল্প নেতা বানানোর সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ জার্নাল: একটু অন্য প্রসঙ্গে যেতে চাই। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এমনকি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে বিষয়টি নিয়ে একটি উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানববন্ধনও করেছেন। সামগ্রিকভাবে বিষয়টি কিভাবে দেখছেন।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী: আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ দল। এখানে অনেক জায়গায় অনেক গ্রুপিং রয়েছে। কাদা ছোড়াছুড়িও অনেক ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। এইগুলো আমরা আমলে নিচ্ছি না। আমাদের কনসেপ্টটা পরিষ্কার। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিশ্বাস করে, স্বাধীনতা বিশ্বাস করে, দেশ বিরোধী কোন কর্মকাণ্ডে জড়িত নয়, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের সাথে কোন সংশ্লিষ্টতা নেই; এই ধরনের যে কোন মানুষের আওয়ামী লীগ করার সুযোগ রয়েছে। অনুপ্রবেশকারী তারাই যারা স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করে না, যাদের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে; যারা নিজেকে রক্ষা করার জন্য আওয়ামী লীগে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করছে, তারাই অনুপ্রবেশকারী।
আমরা দল করার ক্ষেত্রে কাউকে ব্যারিকেড দিতে পারিনা। ব্যারিকেড অপরাধীদের জন্য, ভালো মানুষের জন্য আওয়ামী লীগে রাস্তা সব সময় উন্মুক্ত রয়েছে।
বাংলাদেশ জার্নাল: অনুপ্রবেশকারীদের একটি তালিকার খণ্ডখণ্ড বেশ কিছু অংশ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টিকে কি বলবেন?
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী: সেই তালিকাটি অনুপ্রবেশকারীর তালিকা না। সেই তালিকাটি হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে এদের মধ্যে কারা অনুপ্রবেশকারী রয়েছেন। তাদেরকে চিহ্নিত করা।
বাংলাদেশ জার্নাল: তালিকা থেকেও তো কেউ কেউ নেতৃত্বে এসেছেন...
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী: আসতে পারে। কিন্তু আমি যেটি বলছি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না, স্বাধীনতার মূল্যবোধকে ধারণ করে না, খুনি-অপরাধীদের সঙ্গে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদে সংশ্লিষ্টা রয়েছে, নিজেকে রক্ষা করার জন্য আওয়ামী লীগে ডুকেছে; এরা যদি কোনভাবে কোন পদের মধ্যে চলে যায়, তারা সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে স্যাকড হয়ে যাবে। এই ধরণেই কোন তথ্য বা প্রমাণাদি আসলেই এটা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত। এটার জন্য কোন দিকে তাকিয়ে থাকার বিষয় নেই।