বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদের প্রতীক যে পাঁচ বিক্ষোভকারী
চলতি বছরটি বিশ্ব জুড়ে গণবিক্ষোভের জন্য স্মরনীয় হয়ে থাকবে। হংকং থেকে চিলি, ইরান, ইরাক থেকে লেবানন, কাতালোনিয়া থেকে বলিভিয়া, একুয়েডর থেকে কলম্বিয়া-কোথায় হয়নি বিক্ষোভ। এখনও বহু দেশের লাখ লাখ মানুষ গণতন্ত্র, সুশাসন আর দুর্নীতিমুক্ত একটি সমাজ প্রতিষ্ঠার আশা নিয়ে বিক্ষোভ করে চলেছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে এসব বিক্ষোভে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো সংঘবদ্ধ নেতৃত্ব দেখা যায়নি। কেবল সমাজের প্রয়োজেনে কিছু মানুষ প্রতিবাদের প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে গেছেন। পরে তাদের পিছনে সারিবদ্ধভাবে জড়ো হয়েছে আরো হাজারও মানুষ, যারা সত্যিকার অর্থেই প্রচলিত শাসক শ্রেণির পতন চায়। আর প্রতিবাদ করতে করতেই কিছু বিক্ষোভকারী পরিচিতি পেয়ে গেছেন গোটা বিশ্বে। এখন তাদের দেখা হচ্ছে বিক্ষোভের প্রতীক হিসাবে। এমনই পাঁচ নেতাকে নিয়ে বিবিসি বাংলার এই আয়োজন।
চিলি: ড্যানিয়েলা কারাসকো, লা মিমো
কিছু কিছু মানুষ আছেন যারা জীবিত অবস্থার চেয়ে মৃত্যুর পর আরো ভয়াবহ হয়ে উঠেন। এমনই একজন হলেন চিলির বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেয়া নারী ড্যানিয়েলা কারাসকো। যিনি 'লা মিমো' বা দ্য মাইম নামেই বেশি পরিচিতি। ৩৬ বছর বয়সী এই শিল্পী চিলির গণবিক্ষোভে অংশ নেয়ার কারণে তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পরে ২০শে অক্টেবর তার প্রাণহীন দেহ খুঁজে পাওয়া যায় একটি পার্কের প্রাচীরে ঝুলন্ত অবস্থায়। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের দাবি, তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। বিক্ষোভে অংশ নেয়া অন্য নারীদের ভয় দেখাতেই তাকে এমন নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু তিনি এখন চিলিতে বিক্ষোভের প্রতীক। আর তার মৃত্যুকে ঘিরেই জমে উঠেছে আন্দোলনকারী অদম্য লড়াই, যা এখনও বহাল রয়েছে।
ইরাক: সাফা আল সারে
সাফা আল সারে ছিলেন ২৬ বছর বয়সী একজন গ্রাজুয়েট প্রকৌশলী। তিনি ছিলেন একই সঙ্গে একজন কবি এবং রাজনৈতিক কর্মী। ইরাকে রাজনৈতিক এবং নাগরিক অধিকারের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ সোচ্চার ছিলেন। ইরাকে তরুণদের বেকারত্বের সমস্যা নিয়ে তিনি ব্লগিং করতেন। গত অক্টোবরে যখন তিনি এক সরকার বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছিলেন তখন একটি টিয়ার গ্যাসের ক্যানিস্টার এসে আঘাত করে তার মাথায়। কয়েকদিন পর তিনি মারা যান।
হংকং : স্বেচ্ছাসেবী স্বাস্থ্যকর্মী
গত ১১ আগষ্ট হংকং এর বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় সিম শা সুই নামের এক তরুণী তার একটি চোখ হারিয়েছিলেন। পুলিশ তার মুখ লক্ষ্য করে 'বিন ব্যাগ পেলেট' ছুঁড়লে সেফটি গগলস ভেদ করে তা মেয়েটির চোখে আঘাত করে। এই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ার পর দেখা যায়, মেয়েটি মাটিতে পড়ে আছে, তার ডান চোখ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর সিম শা সুই আন্দোলনের অন্যতম প্রতীকে পরিণত হন।
কলম্বিয়া: ডিলান ক্রুজ
ডিলান ক্রুজ ছিলেন ১৮ বছর বয়সী এক কলম্বিয়ান ছাত্র। গত নভেম্বরে পুলিশ তার মাথা লক্ষ্য করে কিছু একটা ছুঁড়েছিল। হাই স্কুল থেকে পাশ করে বেরুনোর মাত্র কয়েকদিন আগে ডিলান ক্রুজ মারা যান।
ডিলান ক্রুজ ব্যবসায় প্রশাসন নিয়ে পড়াশোনা করতে হয়েছিলেন। কিন্তু এজন্যে তার একটা শিক্ষাবৃত্তির দরকার ছিল। রাজধানী বোগোটায় তিনি এক বিক্ষোভে যোগ দেন। তার মতো ছাত্ররা যেসব সমস্যায় ভুগছেন, সেগুলো তুলে ধরতে চেয়েছিলেন তিনি। তার মৃত্যু ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি করে।
লেবানন: আলা আবু ফাখের
লেবাননের প্রগ্রেসিভ সোশ্যালিস্ট পার্র্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আলা আবু ফাখের। রাজধানী বৈরুতের স্থানীয় সরকারে কাজ করতেন তিনি। ১২ নভেম্বর লেবাননের সরকারি সৈন্যরা তাকে গুলি করে। তিনি সরকার বিরোধী এবং দুর্নীতি বিরোধী এক মিছিলে অংশ নিচ্ছিলেন।
তার আগে আরও একজন বিক্ষোভকারী নিহত হন। কিন্তু আলা আবু ফাখের যেভাবে মারা যান, তা ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি করে। একটি রাস্তা অবরোধ করা লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করতে সরাসরি গুলি চালিয়েছিল সৈন্যরা। তার ওপর গুলির ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। বিক্ষোভকারীরা তাকে আন্দোলনের ‘প্রথম শহীদ’বলে বর্ণনা করেন।
এমএ/