ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২২ মিনিট আগে
শিরোনাম

একান্ত স্বাক্ষাতকারে আব্দুর রহমান

আওয়ামী লীগে একমাত্র অপরিহার্য শেখ হাসিনা

  তৌফিক ওরিন

প্রকাশ : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ২০:১৯  
আপডেট :
 ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ২০:৩৯

আওয়ামী লীগে একমাত্র অপরিহার্য শেখ হাসিনা
ফাইল ছবি

একজন পুরোদস্তুর রাজনীতিক আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান। জন্ম ও বেড়ে ওঠা ফরিদপুরে। তবে রাজনীতির হাতে-খড়ি ছাত্রলীগের মাধ্যমে। ১৯৬৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি দশম শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শামসুজ্জোহা হত্যার প্রতিবাদে স্কুলের বন্ধুদের নিয়ে ফরিদপুরে অনুষ্ঠিত মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। এটি ছিল তার জীবনের প্রথম রাজনৈতিক কর্মসূচি। পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালে গণঅভ্যুত্থান চলাকালীন সময়ে হাটে বাজারে প্রচার-প্রচারণা, ৭০ এর নির্বাচনে নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা, ৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, দেশ স্বাধীনের পর ফরিদপুর ইয়াসিন কলেজ ছাত্রসংসদে এজিএস-জিএস নির্বাচিত হন তিনি।

১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে যখন স্বপরিবারে হত্যা করা হয়, আদর্শিক পিতা হত্যার প্রতিশোধ নিতে রাজপথে নামেন আব্দুর রহমান। প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চলে যান প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে। সেখানে মানবেতর জীবন যাপনের মধ্যদিয়েও বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিয়ে সংগ্রাম চালাতে থাকেন। দেশে ফিরে গ্রেপ্তার হয়ে জেলে যান। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি। তারপর থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৮৬ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এই নেতা।

ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং আশির দশকের স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা আব্দুর রহমান ২০০২-এর সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আসেন। সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে তিনি খুলনা বিভাগের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০৯ সালের সম্মেলনে তাকে কার্যনির্বাহী সদস্য করা হয়। ২০১২ সম্মেলনেও তিনি কার্যনির্বাহী সদস্যই থেকে যান। সর্বশেষ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান আব্দুর রহমান। এছাড়া ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা ও বোয়ালমারী উপজেলা থেকে দুইবার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।

সাম্প্রতিক আওয়ামী লীগের কাউন্সিলসহ দলীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ জার্নালের সাথে কথা বলেছেন তিনি। সেই আলাপে উঠে এসেছে আসন্ন সম্মেলনের অজানা অনেক বিষয়। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বাংলাদেশ জার্নালের নিজস্ব প্রতিবেদক তৌফিক ওরিন।

বাংলাদেশ জার্নাল: আসন্ন সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বঙ্গবন্ধু পরিবারের অনেকের নাম আলোচনা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে এবারো কাউন্সিলররা পার্টির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করবেন এটা অনেকটা স্পষ্ট। এছাড়া সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামও বেশ আলোচনায় এসেছে। বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?

আব্দুর রহমান: বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাই তো দলের মূল নিয়ন্ত্রক শক্তি, আমাদের আশ্রয়ের জায়গা, আমাদের অভিভাবক। উনি সব কিছুই দেখভাল করেন এবং উনাকে ঘিরেই আমাদের সকল আবেগ-অনুভূতি, রাজনৈতিক ভাবনা। সুতরাং নতুন করে পরিবারের অন্য সদস্যরা আসবেন কিনা এটা তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এই ব্যাপারে আমাদের কোন মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তারা যদি রাজনীতিতে উৎসাহ প্রকাশ করে তাহলে তারা আসতেই পারেন, তাদের জন্য জায়গা সব সময়ই খোলা। তবে এই মুহূর্তে তারা এমন উৎসাহ প্রকাশ করছেন কিনা বর্তমানে আমার কাছে জানা নেই।

বাংলাদেশ জার্নাল: বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরীরা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসুক এমনটি প্রত্যাশা করেন কিনা আপনারা?

আব্দুর রহমান: নিশ্চয়ই করি এবং হাজার বার করি। বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরীরা দলের ভেতর থাকলে দল আরো সমৃদ্ধ হবে। এই দল গতিশীল হবে, দলের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার হবে এটা আমরা মনে করি। এখন তাদেরও নিজস্ব মতামতের বিষয় রয়েছে। সুতরাং সেই সিদ্ধান্ত তাদের উপর ছেড়ে দেয়া ভালো। তবে সব সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চায় যে বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরীরা দলের ভেতরে থেকে দলকে কন্ট্রিবিউট করুক। এটা আমাদের আন্তরিক প্রত্যাশা।

বাংলাদেশ জার্নাল: আওয়ামী লীগ সভাপতি এর আগের সম্মেলনেও অবসরের কথা বলেছেন। তবে এখনো পর্যন্ত শেখ হাসিনার বিকল্প আওয়ামী লীগে কেউ তৈরি হয়নি। ভবিষ্যতের চিন্তা থেকে আওয়ামী লীগ কী ভাবছে?

আব্দুর রহমান: আমাদের নেত্রী যখন দলের সভাপতি হয়েছেন তার আগে কি তিনি কোথাও কোন ইউনিটের সদস্য ছিলেন না। দুঃসময়ে তিনি দলের হাল ধরেছেন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের যে কারো আগামীকাল থেকেই নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা রয়েছে। সুতরাং প্রস্তুতির কিছু নাই। যেকোন সময়ে এই দলের কাজ শুরু করলে তাদের নেতৃত্বেই দল চলবে। তবে বিষয়টি একমাত্র পরিষ্কার করতে পারেন আমাদের দলের প্রধান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। কারণ কাউন্সিলরা সমস্ত ক্ষমতা তাকে অর্পণ করেছেন। মূললক্ষ্য দলকে গতিশীল করা, সুতরাং তিনি যদি মনে করেন, তারা অবশ্যই থাকবেন। কিন্তু আমাদের প্রত্যাশা একটাই, এই মুহূর্ত পর্যন্ত দলের জন্য একমাত্র অপরিহার্য ব্যক্তি শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ জার্নাল: সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে আলোচনা চলছে। কে হবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এটাই এখন টক অব দ্যা কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। এবারে কি সাধারণ সম্পাদক পদে কোন ধরণের পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে নাকি বর্তমান সাধারণ সম্পাদকই পুনঃদায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন?

আব্দুর রহমান: এখানে মূল জায়গাটিতেই যেতে হবে। কাকে দিয়ে তিনি সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করাবেন সে সিদ্ধান্তও নেত্রী নেবেন। এই জায়গায় কেউ প্রার্থী হয়ে লাভবান হতে পারবে না। সুতরাং ব্যক্তিগতভাবে কেউ যদি মনে করে যে প্রার্থীতা ঘোষণা করে আমি দলের সাধারণ সম্পাদক হব সেটি বোকামি হবে। আর বর্তমান ওবায়দুল কাদেরের ব্যক্তিগত শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে বলব, আসলে তার শারীরিক অবস্থা সবকিছু মিলিয়ে এত বড় বড় দুটি দায়িত্ব পালন করা, তার জন্য আসলেই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এছাড়া আমাদের দল পরিষ্কারভাবে মনে করছে, দলীয় প্রধানের মাথায়ও এই জিনিসটা আছে; সেটা হলো সরকারের যারা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় থাকবেন, দলের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তাদের স্থান করে দিলে দুইটি দায়িত্ব একই ব্যক্তি পালনের ক্ষেত্রে অনেক অসুবিধা হয় এবং দুইটি দায়িত্বের কোনটিই শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যায় না। এক ব্যক্তিকে একাধিক দায়িত্ব না দেয়া এটা একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত উনার (শেখ হাসিনা) মাথায় আছে বলেই জানি, বুঝতে পারি। সেই বিবেচনায় যদি কেউ মনে করেন যে আমি দলের সাধারণ সম্পাদক থাকেন তাহলে মন্ত্রীসভা থেকে তাকে রিজাইন করতে হবে বা পাদ পড়তে হবে। আর মন্ত্রীসভায় যদি থাকেন তাহলে দলের সাধারণ সম্পাদকের জায়গা থেকে বাদ পড়তে হবে। যদি এরকম নীতিমালা সত্যিকার অর্থেই যদি কার্যকর হয়। আমি মনে করি যে এটা দলের জন্য ইতিবাচক দিক। দলের সার্বক্ষণিক একজন সাধারণ সম্পাদক, যিনি কেবলমাত্র দলকে নিয়েই ভাববেন, যিনি তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে সমস্ত স্তরেই মৌলিক কাজগুলো আছে এবং এই দলের নেতাকর্মীদেরকে আদর্শিক ভিত্তির উপরে তাদেরকে দাড় করাবেন; এটা কিন্তু সহজসাধ্য কাজ নয়। এবং এটি একটি সার্বক্ষণিক কাজেই অংশ। সুতরাং এই ব্যাপারটা করতে হলে একজন সার্বক্ষণিক ফুলটাইমার সাধারণ সম্পাদক দলের জন্য প্রয়োজন বলে আমরা বোধ করি।

বাংলাদেশ জার্নাল: সরকার ও দল আলাদার বিষয়টা নিয়ে আগেও বেশ আলোচনা হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত কার্যকর হতে দেখা যায়নি। বিভিন্ন সূত্রে শোনা গেছে যে বিষয়টি নাকি কার্যকর হবে না?

আব্দুর রহমান: আমার ধারণা, যারা এটা চান না সূত্র তারাই হবেন। তবে এটা উনার (আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) মাথায় রয়েছে। সরকারের এক ব্যক্তিকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব না দেয়ার ক্ষেত্রে এবং কিভাবে দায়িত্ব বণ্টন করলে দল উপকৃত হতে পারে এরকম ধারণা উনার মাথায় শক্তভাবেই আছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত