ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

কেমন হবে বাংলাদেশ-পাকিস্তান টি২০ লড়াই?

  স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২০, ১৮:৩৮

কেমন হবে বাংলাদেশ-পাকিস্তান টি২০ লড়াই?

লাহোরে বাংলাদেশ ও পকিস্তানের মধ্যে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু হচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার। বহুল আলোচিত এই সিরিজে তিনটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের বাবর আজম ম্যাচ খেলেছেন ৩৬টি, রান তুলেছেন ১৪০৫, গড় ৫০। তার মধ্যে ১২টি অর্ধশতক। ওদিকে বাংলাদেশের তামিম ইকবাল ম্যাচ খেলেছেন ৭৫টি রান তুলেছেন ১৬১৩, গড় ২৩, অর্ধশতক ৬টি।

এই পরিসংখ্যান থেকেও টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের তফাৎটা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা করা যায়। বাবর আজম এই মুহূর্তে বিশ্বের এক নম্বর টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যান। আরো কিছু পরিসংখ্যান দিয়ে সেটা খোলাসা করা যাক। এই মুহূর্তে পাকিস্তান বিশ্বের এক নম্বর টি-টোয়েন্টি দল, আর বাংলাদেশ আছে নয় নম্বরে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে মুখোমুখি হয়েছে ১০বার। তার মধ্যে ৮টি ম্যাচে জয় পাকিস্তানের, আর দুটিতে বাংলাদেশ।

ব্যাটিংয়ে কারা এগিয়ে

বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের সংখ্যাই বেশি। তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত - এই চারজনই ওপেনার হিসেবে পরিচিত। তাদের মধ্যে দারুণ ফর্মে আছেন লিটন দাস। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে যদিও তামিম ইকবাল রান পেয়েছেন কিন্তু সেটা টি-টোয়েন্টিসুলভ স্ট্রাইক রেটে নয়। সৌম্য সরকার ব্যাটে ও বলে পারফর্ম করেছেন বিপিএলে। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ব্যাট হাতে দুজনকে বাংলাদেশ মিস করবে নিশ্চিত- মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান।

সাকিব শুধু পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯ ম্যাচে করেছেন ২৯২ রান। মুশফিক ছিলেন টি টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ফর্মে। ভারতের বিপক্ষে দিল্লিতে যে ম্যাচটিতে বাংলাদেশ জয় পায় সেখানে মুশফিক ৪৩ বলে ৬০ রানের একটি ইনিংস খেলেন। কিন্তু মুশফিক পাকিস্তানে খেলতে যান নি। পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন আপে এখন ফর্মে আছেন শুধু বাবর আজম ও শোয়েব মালিক। এছাড়া পাকিস্তানে খুব ভালো স্ট্রাইক রেটের ব্যাটসম্যান আপাতত নেই। তাদের মূল শক্তি লোয়ার মিডল অর্ডারের স্লগ ব্যাটিং। শেষদিকে তারা যে কোনো ম্যাচের গতিপথ পরিবর্তন করে দিতে পারেন। যেমন ইমাদ ওয়াসিম ৩৬ ম্যাচে মাত্র ২০১ রান করেছেন, কিন্তু তার স্ট্রাইক রেট ১৪০ এর ওপর।

পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যানঃ সাকিব ৯ ম্যাচে ২৯২, তামিম ৯ ম্যাচে ১৩১, নাজিমুদ্দিন ২ ম্যাচে ১২৩, আশরাফুল ৫ ম্যাচে ১০৪। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের অধিনায়ক মাহমুদু্ল্লাহ রিয়াদ ১০ ম্যাচে ৫৭ তুলেছেন পাকিস্তানের বিপক্ষে।

বাংলাদেশের বিপক্ষে পাকিস্তানের সেরা ব্যাটসম্যান যারাঃ মোহাম্মদ হাফিজ ৮ ম্যাচে ১৯৩, শহীদ আফ্রিদি ১০ ম্যাচে ১৮১, আহমেদ শেহজাদ ৩ ম্যাচে ১৮০, শোয়েব মালিক ৮ ম্যাচে ১৫০, ইমরান নাজির ৩ ম্যাচে ১৪৮। যাদের মধ্যে কেবল মোহাম্মদ হাফিজ ও শোয়েব মালিক আছেন বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে।

বোলিংয়েও এগিয়ে পাকিস্তান। পাকিস্তানের বোলিং লাইন আপের সবচেয়ে বড় চমক হারিস রওফ, যিনি অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগ বিগ ব্যাশে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন। মেলবোর্ন স্টার্সের হয়ে ৭ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ১৬টি। ২৬ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার এখনো জাতীয় দলে খেলেন নি। ২৫টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে নিয়েছেন ৩৫টি উইকেট। তার সবচেয়ে বড় অস্ত্র তিনি নিয়মিত ১৪০ কিলোমিটারের ওপর গতিতে বল করেত পারেন।

বাংলাদেশের বিপক্ষে বোলিংয়ে পাকিস্তানের যারা পারফর্ম করেছেন তাদের মধ্যে নিয়মিত বোলার কেউই এই স্কোয়াডে নেই। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এই কথা সত্য। তবে ব্যাটিং তালিকার মতো বোলিং তালিকাতেও মোহাম্মদ হাফিজ ও শোয়েব মালিক আছেন।

শুধু পেস বোলাররা নন, পাকিস্তানের স্পিনাররাও বাংলাদেশকে ভোগাতে পারে বলে মনে করেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম। তিনি বলেন, "গতি বাংলাদেশের জন্য খুব একটা সমস্যা হবে না। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা গতি সামলাতে পারেন। তবে সমস্যা হবে কী ধরনের উইকেটে খেলা হবে সেটা কেউ জানে না। স্পিন বোলিংয়ে রান তুলতে বাংলাদেশের সমস্যা হয়।"

পাকিস্তানের দুজন স্পিন বোলার ইমাদ ওয়াসিম ও শাবাদ খান আছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের টি-টোয়েন্টি র‍্যাঙ্কিংয়ের সেরা দশে।

সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের একমাত্র ক্রিকেটার যিনি ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগে খেলেছেন। নিষেধাজ্ঞার কারণে তিনি এখন মাঠের বাইরে আছেন। মুশফিকও খেলেছেন শ্রীলঙ্কা, ক্যারিবিয়ান লিগে। তিনিও এই সিরিজের দলে যোগ দেননি। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা বিদেশি টি-টোয়েন্টি লিগে পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের মতো জনপ্রিয় নন। একমাত্র ভারতের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ ছাড়া সবগুলো লিগেই পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা খেলছেন। তাই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাদের দক্ষতা খানিকটা বেশি।

তবে এই অভিজ্ঞতা পাকিস্তানকে খুব বেশি এগিয়ে রাখবে বলে মনে করেন না মি. ফাহিম। তিনি বলেন, "এই প্রথম বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি খেলার উপযোগী একটি দল নিয়ে গেছে। এই দলটি অনেকটাই তরুণ। অবশ্যই সাকিব ও মুশফিককে মিস করবে। কিন্তু এখন যারা আছেন তারাও ফর্মে আছে। তাদের শারীরিক ভাষা অন্যরকম হবে।"

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের গেম ডেভেলপমেন্টে সাবেক ন্যাশনাল ম্যানেজার নাজমুল আবেদীন ফাহিম মনে করেন পাকিস্তান এখন চাপে আছে। কারণ তারা শেষ ১০টি ম্যাচের মাত্র ১টিতে জিতেছে।

"আমরা দেখেছি সদ্য সমাপ্ত বিপিএলে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ভালো করেছে। পাকিস্তানের সাথে টি-টোয়েন্টিতে এই মোমেন্টাম কাজে দেবে। বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেটাররা আত্মবিশ্বাসী। পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা ভালো হলেও, এখন তারা ভালো খেলছে না।" পাকিস্তান শক্তিশালী দল হলেও মানসিকভাবে তারা পিছিয়ে থাকবে বলে মনে করছেন এই বিশ্লেষক।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত