ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

রাশিয়া বিশ্বকাপে ঘুচলো বড়-ছোটর ব্যবধান

  স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০১৮, ১২:২৩  
আপডেট :
 ১৮ জুলাই ২০১৮, ১২:২৬

রাশিয়া বিশ্বকাপে ঘুচলো বড়-ছোটর ব্যবধান

বিশ্বকাপ শুরুর আগের দিন পর্যন্ত সম্ভাব্য বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নের তালিকায় ছিল বেশ কিছু দলের নাম। গোল ডটকম থেকে শুরু করে শীর্ষ ফুটবল ম্যাগাজিনগুলোর তালিকায় বরাবরের মতোই আর্জেন্টিনা, স্পেন, ফ্রান্স, ব্রাজিল এবং ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানির নাম ছিল।

এই তালিকা থেকে ফ্রান্স বেশ দাপটের সাথে খেলেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কিন্তু মাঠের খেলা আসলে কী বলে?

এবারেরটিই সম্ভবত প্রথম বিশ্বকাপ, যেখানে বড় দল ছোট দলের পার্থক্য এতটাই ঘুচে গেছে যে, অনেক ক্ষেত্রে কে ফেবারিট আর কে ছোট দল, তা বুঝতেও দর্শক-সমর্থকদের হিমশিম খেতে হয়েছে।

গ্রুপ ‘এ'র কথাই ধরা যাক। উরুগুয়ের পাশাপাশি মোহাম্মদ সালাহ'র মিশরকে ধরা হচ্ছিলো এই গ্রুপের ফেবারিট। অথচ সেই মিশরকে একটিও পয়েন্ট না নিয়ে খালি হাতে ফেরত যেতে হয়। অন্যদিকে প্রথম ম্যাচ থেকেই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে রাশিয়া উঠে যায় শেষ ষোলতে।

গ্রুপ বি থেকে ফেবারিট স্পেন ও পর্তুগাল শেষ ষোলতে উঠে আসে ঠিকই, কিন্তু সে লড়াই ছিল ঘাম ঝরানো। ৫ পয়েন্ট করে সংগ্রহ করতে গিয়ে ইরানের সাথে ১-১ গোলে পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে হয় রোনালদোর পর্তুগালকে। অন্যদিকে, স্পেনের সাথে পাল্লা দিয়ে মরক্কো করে ২-২ গোলে ড্র।

গ্রুপ ‘সি’তে অবশ্য তেমন একটা ঝামেলা পোহাতে হয়নি ফ্রান্স ও ডেনমার্ককে। ফ্রান্স এক ম্যাচ এবং ডেনমার্ক দুই ম্যাচে ড্র করলেও শেষ ষোলতে ওঠা পড়েনি হুমকির মুখে। তেমন কোনো চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেনি পেরু ও অস্ট্রেলিয়া।

গ্রুপ ‘ডি’তে আর্জেন্টিনাকে ধরা হচ্ছিলো সবচেয়ে ফেবারিট। কিন্তু সেই আর্জেন্টিনাই শেষ পর্যন্ত প্রায় বাদ পড়তে বসেছিল গ্রুপ পর্ব থেকেই। শেষ ম্যাচের হিসেব-নিকেশে আইসল্যান্ড ও নাইজেরিয়াকে পেছনে ফেলে মাত্র ৪ পয়েন্ট নিয়ে শেষ ষোলতে যেতে পারে আর্জেন্টিনা। তবে রীতিমতো দাপট দেখিয়ে পূর্ণ ৯ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় ক্রোয়েশিয়া।

গ্রুপ ‘ই’ থেকে শেষ ষোলতে যেতে বেগ পেতে হয়নি ফেবারিট ব্রাজিলকে। তবে প্রথম ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের সাথে পয়েন্ট ভাগাভাগি কোচ তিতের কপালে যথেষ্ট চিন্তার ভাঁজ ফেলতে সক্ষম হয়। সুইজারল্যান্ডও শেষ ষোলতে ওঠে, কিন্তু তার আগে হারতে হয় সার্বিয়ার কাছে।

গ্রুপ ‘এফ’ এ ছিল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানি। এবারও জার্মানিকে বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদারই ধরে নেয়া হচ্ছিলো। কিন্তু সেই জার্মানিকেই কিনা মেক্সিকো ও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হেরে বিদায় নিতে হলো প্রথম পর্ব থেকেই, তাও টেবিলের তলানিতে থেকে। সুইডেন ও মেক্সিকো উঠে যায় শেষ ষোলর লড়াইয়ে।

গ্রুপ ‘জি’তে ফেবারিট হিসেবেই নক আউট পর্বে ওঠে বেলজিয়াম ও ইংল্যান্ড।

গ্রুপ ‘এফ’ এর পরিস্থিতি ছিল, কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান। শেষ ম্যাচ পর্যন্ত প্রতিটি দলেরই ছিল নক আউটে যাওয়ার সম্ভাবনা। শেষ পর্যন্ত শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে কলম্বিয়া ও জাপান যায় শেষ ষোলতে।

শেষ ষোলর লড়াইয়েই ফেবারিটতের দাপট কাজে লাগেনি। উরুগুয়ের কাছে পর্তুগাল, ফ্রান্সের কাছে আর্জেন্টিনা, রাশিয়ার কাছে স্পেন হেরে বিদায় নেয়। দুই গোলে জাপানের কাছে পিছিয়ে থেকেও কোনোরকমে জয় নিশ্চিত করতে পারে বেলজিয়াম। সেই বেলজিয়ামের কাছে হেরে কোয়ার্টার ফাইনালে বিদায় নিতে হয় ব্রাজিলকে।

ছোট দলগুলোর প্রচণ্ড শক্তিতে উঠে আসাকে খুব ইতিবাচক মনে করছেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক ফুটবলার ও কোচ গোলাম সারোয়ার টিপু। তিনি বলছেন, ‘ফুটবলের জন্য ভালো তো এটা। আরো এন্টারটেইনিং হলো আরকি। আপনি যদি প্রেডিকশন দেন, আর প্রেডিকশন মিলে যায়, তাহলে মজাটাই থাকলো না।’

গোলাম সারোয়ার টিপু বলছেন, ফুটবলপ্লেয়িং দেশগুলোতে ফুটবল নিয়ে সার্বিকভাবে চিন্তা-ভাবনা ও পরিকল্পনা আরো বেড়েছে। এর ফল দেখা যাচ্ছে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে। তিনি মনে করেন, এর ফলে নতুন দেশগুলোও অনুপ্রাণিত হবে।

সাবেক এই খেলোয়াড় বলছেন, ‘খেলায় ব্যবসায়িক ব্যাপারও অনেক কাজ করে। জার্সি নাম্বার থেকে শুরু করে অনেককিছুতেই। মিডিয়াও এতে অনেক ভূমিকা রাখে। ফলে এই জায়গাটা যে নতুনরা ভাঙতে পারলো, এটা ফুটবলের জন্য ভালো।'

তার সাথে একমত জাতীয় দলের আরেক সাবেক খেলোয়াড় ও কোচ, সাইফুল বারী টিটুও। খেলোয়াড় বাছাই থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণ ও কোচ নির্বাচনের ক্ষেত্রে এখন সব দেশই অনেক পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে এগুনোয় দলগুলো কাছাকাছি পর্যায়ে পৌঁছেছে বলেও মনে করেন তিনি। তিনি জানান, ‘তাদের যে জিনিসটা আছে, তা হলো ফুটবল কালচার। আমাদের দেশে যেমন একসময় ফুটবল অনেক জনপ্রিয় ছিল, কিন্তু খেলাটা কখনও কালচারের অংশ হয়নি।'

তিনি আরো বলেন, ‘মডার্ন ফুটবলে ভালো করতে হলে যে জিনিগুলোতে নজর দিতে হয়, ইন টার্মস অফ টেকনিক্যাল অ্যান্ড ট্যাকটিকেল এবং ফিজিক্যাল-সাইকোলজিক্যাল, সবদিকে তারা সাপোর্ট দেয়ার চেষ্টা করে।'

অনেক দল বড় তারকা না থাকলেও শুধু পরিকল্পিত স্ট্র্যাটেজির ফলে অনেকদূর এগিয়ে যাচ্ছে বলেও মনে করেন টিটু।

শুধু দলই নয়, নতুন নতুন দাপুটে খেলোয়াড়দেরও খুঁজে পেয়েছে রাশিয়া বিশ্বকাপ। ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপে ও বেনিয়ামিন পাভার্ড, রাশিয়ার আলেক্সান্ডার গোলোভিন, মিশরের হাকিম জিয়াচ, মেক্সিকোর হারভিং লোসানোর মতো তরুণ তারকারা বুঝিয়ে দিয়েছেন, আসছে দিনগুলোতে চলবে তাদেরই রাজত্ব।

গোলাম সারোয়ার টিপু বললেন, ‘অলরেডি যারা সুপার স্টার, ভালো খেলেও তাদের ছায়ায় থেকে অনেকে হারিয়ে যান।' কিন্তু এই বিশ্বকাপ তাদেরও সামনে নিয়ে এসেছে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘মেসি, রোনালদো, নেইমার, এদের ছায়ার ভেতরে ছিল অনেক খেলোয়াড়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, এদের অনেকেই এই তারকাদের কাছাকাছি মানের খেলোয়াড়। এই জিনিসটাই আমার কাছে ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে।' সূত্র: ডয়েচে ভেল

  • সর্বশেষ
  • পঠিত