ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

ব্যাটিং ব্যর্থতায় সিরিজ খোয়ালো বাংলাদেশ

  স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০১৮, ২০:৪৫  
আপডেট :
 ২২ ডিসেম্বর ২০১৮, ২১:৩৩

ব্যাটিং ব্যর্থতায় সিরিজ খোয়ালো বাংলাদেশ

চলতি বছর তিন ফরম্যাটে মোট ৪৪ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। জয়-পরাজয়ের ব্যবধান ২১-২২। শেষ ম্যাচটি ছিল বাংলাদেশের জয়ের পাল্লা ভারী করার শেষ সুযোগ। এই ম্যাচ জিতলে বাংলাদেশের অর্জনে যোগ হতে পারতো দারুণ একটি রেকর্ড। কোন দ্বিপক্ষীয় সিরিজে প্রতিপক্ষকে তিন ফরম্যাটেই সিরিজ হারানোর স্বাদ কখনো পায়নি বাংলাদেশ। এবারো হয়নি। দায়িত্বহীন ব্যাটিংয়ে সফরকারী ক্যারিবিয়দের বিপক্ষে ৫০ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। ফলে তিনম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজে ২-১ এ সিরিজ জিতে নিল লুইস-হোপরা।

সিরিজের শেষ ম্যাচে টস জিতে ক্যারিবিয়দের ফিল্ডিংয়ে পাঠিয়েছিলেন স্বাগতিক অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। শুরুতে ব্যাটিং তাণ্ডব চালালেও বাংলাদেশের কার্যকরী বোলিংয়ে ১৯.২ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলেছে ১৯০ রান। ফলে সিরিজ জিততে বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল ১৯১ রান। কিন্তু উচ্চভিলাসী খেলতে থাকা টাইগাররা থেমে যায় ১৪০ রানে। বাংলাদেশ হেরে যায় ৫০ রানে। ফলে ওয়ানডে ও টেস্ট সিরিজ জিতলেও টি-টোয়েন্টি সিরিজ জেতা হয়নি টাইগারদের। অন্যদিকে, টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের সুখস্মৃতি নিয়ে ক্যারিবিয়ানে পাড়ি দিবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই বাংলাদেশ বোলারদের তুলোধুনা করেছেন দুই ওপেনার শাই হোপ ও এভিন লুইস। ১৯ বলে দলীয় ফিফটি তুলে নেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ওপেনার এভিন লুইস ও শাই হোপ। পরে মাত্র ১৮ বলে হাফসেঞ্চুরির দেখা পান লুইস। এটি তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটি। কিন্তু নিজের প্রথম ওভারেই হোপের উইকেট তুলে নিয়ে ঝড়ের বেগ কিছুটা কমিয়ে দেন সাকিব আল হাসান। ১২ বলে ২৩ করা হোপকে বোল্ড করেন সাকিব। এরপর লুইসের সাথে ১৪ রানের জুটি গড়ে ব্যক্তিগত ২ রানে মোস্তাফিজের বলে আরিফুলের ক্যাচ হয়ে ফিরলেন কেমো পল।

এরপরে আরো দ্রুতগতিতে রান তুলছিলেন লুইস। অবশেষে দলীয় ১২২ রানে মাহমুদউল্লাহকে বোলিংয়ে আনলেন সাকিব। এসেই বাজিমাত। নিজের দ্বিতীয় বলে বোল্ড করলেন ভয়ঙ্কর লুইসকে। সাজঘরে ফেরার আগে ৩৬ বলে ৬ চার ও ৮ ছক্কায় নিজের ঝুলিতে পুরেছেন ৮৯ রান। এরপরের বলেই নতুন ব্যাটসম্যান হেটমেয়ারকে ফেরালেন এলবির ফাঁদে ফেলে।

দলীয় ১৫৯ রানে সেই মাহমুদউল্লাহর বলেই লিটন দাসের ক্যাচ হয়ে ফিরলেন পাওয়েল। সাজঘরের ফেরার আগে ১৬ বলে ১৯ রান তুলেছেন তিনি। দলীয় ১৭৬ রানে মোস্তাফিজকে মারতে গিয়ে রনির তালুবন্দী হন নিকোলাস পুরান। ২৪ বলে ২৯ রান করেছেন এই ব্যাটসম্যান। একই ওভারের শেষ বলে ফিজের দুর্দান্ত অফকাটারে পরাস্ত হলেন ব্রাথওয়েট। মিরাজের ক্যাচ হয়ে ফেরার আগে মাত্র ১ রান করেছেন টি-টোয়েন্টির মারমুখী এই ব্যাটসম্যান।

১৯তম ওভারে সাকিব ফিরিয়ে দেন ফ্যাবিয়ান অ্যালেনকে। স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়ে ৮ রানে বিদায় হন তিনি। একই ওভারে অভিষিক্ত শেরফানে রাদারফোর্ডকেও বিদায় করেন সাকিব। মাহমুদউল্লাহর করা শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে রানআউট হন ওশানে থমাস।

৪ ওভারে ৩৭ রানে সাকিব তিনটি উইকেট নেন। ৪ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে মোস্তাফিজ নিয়েছেন তিনটি উইকেট। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৩.২ ওভারে মাত্র ১৮ রান খরচ করে নিয়েছেন ‍তিনটি উইকেট। ৪ ওভারে ৩৬ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি সাইফউদ্দিন। মিরাজ ২ ওভারে ২৬ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। আবু হায়দার রনি ২ ওভারে ৩৯ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকেন।

শুরুতে লুইসের ব্যাটিং ঝড় ও পরে টাইগারদের কার্যকরী বোলিংয়ে ১৯.২ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ১৯০ রান। ফলে সিরিজ জিততে বাংলাদেশের দরকার ছিল ১৯১ রান।

জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ক্যারিবিয় পেস সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে ওপেনার তামিম ইকবালকে। তবুও সাবধানী খেলা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু দ্বিতীয় ওভারেই দ্রুত রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন তামিম(৮)।

তামিমের বিদায়ের পর হাত খুলতে মারতে শুরু করেছেন সৌম্য ও লিটন। সৌম্য-লিটনের তাণ্ডবে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে ক্যারিবিয় পেসাররা। এর মধ্যেই চতুর্থ ওভারে থমাসের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যারিবিয় ফিল্ডারের তালুবন্দী হন লিটন। কিন্তু পরক্ষণেই আম্পায়ার এটিকে নো বল ঘোষণা করেন।

টেলিভিশন রিপ্লেতে দেখা গেল টমাসের পা দাগ অতিক্রম করেনি। ক্যারিবীয় অধিনায়ক ব্রাথওয়েট সিদ্ধান্তটি চ্যালেঞ্জ করে রিভিউ চাইলে আম্পায়ার সেটি দেননি। এ নিয়ে চতুর্থ আম্পায়ার ও ম্যাচ রেফারির সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করতে দেখা যায় সফরকারীদের।

একপর্যায়ে তারা মাঠের শেষ প্রান্তেও চলে এসেছে। এতে কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ থাকে মিরপুর স্টেডিয়ামে। কিছুক্ষণ পর আম্পায়ারদের অনুরোধে ফের খেলা শুরু হয়েছে।

তবে বাংলাদেশি আম্পায়ার তানভীরের সিদ্ধান্তটি ছিল যথেষ্ট দৃষ্টিকটু। আম্পায়ার তানভীর একই ওভারে আরও একটি বাজে সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। সেটির বেলাতেও টেলিভিশন রিপ্লে দেখে লজ্জাই পেয়েছেন দর্শকেরা।

নো বল বিতর্কের পর পঞ্চম ওভারে ফাবিয়ান অ্যালেন মাঠে নামলে আঘাত হানেন লিটন-সৌম্য জুটিতে। সৌম্য মেরে খেলতে গিয়ে জমা পড়েন কটরেলের হাতে। পরের বলে নতুন নামা সাকিবকেও কটরেলের ক্যাচ বানান অ্যালেন। তাতে দারুণ শুরুতে অস্বস্তিতে পড়ে যায় বাংলাদেশ। পরের ওভারে কিমো পল বোলিংয়ে আসলে তুলে নেন মুশফিকুর রহিমকে। তার বিদায়ে বরং বিপদে পড়ে যায় স্বাগতিকরা।

ব্যর্থতার মিছিলে যোগ দিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিমো পলকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অনে ব্রাথওয়েটের হাতে ক্যাচ দেন ৯ বলে ১১ রান করা মাহমুদউল্লাহ। টাইমিংয়ে গড়বড় করে উইকেট হারিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ।

দশম ওভারে পলের বলে মিড অফে ব্রাথওয়েটের ক্যাচ হয়ে ফিরলেন লিটন দাস। দলীয় ৮৯ রানে ব্যক্তিগত ৪৩ রানে ফিরলেন তিনি। দলীয় স্কোরকার্ডে কোন রান যোগ না হতেই পলের বলে রাদারফোর্ডের ক্যাচ হয়ে ফিরলেন আরিফুল। এরপর হ্যাটট্রিকের চান্স ছিল কেমো পলের। কিন্তু সম্ভাবনা জাগিয়েও পাননি তিনি। নিজের পঞ্চম উইকেট তুলে নিতে এই পেসার ফিরিয়ে দেন সাইফউদ্দিনকে।

ব্যক্তিগত ৭ রানে ক্যাচ তুলে দিয়ে জীবন পান মেহেদি মিরাজ। আট উইকেট হারানোর পর কিছুটা জুটি গড়েন মিরাজ-আবু হায়দার রনি। নবম এই উইকেট জুটিতে ২১ বলে আসে ৩৩ রান। ইনিংসের ১৬তম ওভারের প্রথম বলে বিদায় নেন ১৯ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ১৯ রান করা মিরাজ।

পরের ওভারেই ব্রাথওয়েটের ইয়র্কার গতির বল সামলাতে পারেননি মোস্তাফিজ। ফলাফল ক্লিন বোল্ড। তিন ওভার বাকি থাকতেই সবকটি উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ থামলো ১৪০ রানে।

শেষ ম্যাচে সাকিব-তামিম-মুশফিকরা ৫০ রানে হেরে সিরিজ খোয়ায় ২-১ ব্যবধানে।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত