ক্যাসিনো নিয়ে নিশ্চুপ বাফুফে
স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৮:০২
অনেক আগে থেকেই স্পোর্টিং ক্লাবগুলোতে হাউজির প্রচলন। ক্লাবের দৈনন্দিন খরচ মেটাতে এবং বিভিন্ন খেলায় অংশ নেয়া দলগুলোর খরচ জোগাতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে হাউজি করার অনুমতি নিয়ে আসার চলটাও বেশ পুরনো ক্লাবগুলোর। কিন্তু গত এক দশক হাউজির আড়ালে ক্লাবগুলোয় চলেছে অবৈধ জুয়া, মাদক ব্যবসা। আর অবক্ষয়ের সর্বশেষ সংযোজন ক্যাসিনো স্থাপন।
কিন্তু এই ক্লাবগুলোর প্রধান কাজ ছিল খেলোয়াড় তৈরি করা। অথচ খেলোয়াড় তৈরী করা বাদ দিয়ে ক্লাবের মধ্যেই তারা খুলে বসেছেন ক্যাসিনোর জমজমাট ব্যবসা। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দেশের ক্রীড়াঙ্গন, বিশেষ করে ফুটবল। এসব ব্যাপারে আগে থেকেই সব জানে দেশের ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা বাফুফে। কিন্তু জেনেও অসহায়ত্ব প্রকাশ ছাড়া কিছুই যেন করার নেই। সাবেক ফুটবলারদের মতে, এমন অবস্থা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে এই খেলা থেকে পুরোপুরিভাবেই মুখ ফিরিয়ে নেবে সবাই।
মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে ব্যস্ত মতিঝিল পাড়ার ঝলমলে ক্লাবগুলোতে এখন ভর করেছে সুনশান নীরবতা। হঠাৎ অভিযানে শান্ত হয়ে গেছে নামীদামী ক্লাবগুলো। এর মধ্যে কয়েকটিতে আবার ঝুলছে বড় বড় তালা।
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে পুরানো ক্লাবগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। এই ক্লাব বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতে সুনাম কুড়িয়েছে ঐতিহ্যবাহী দলটি। কিন্তু খেলার মাঠে নাজুক অবস্থা এই দলের। এক যুগের অধিক সময় ধরে ফুটবল লীগে শিরোপাহীন তারা। ফুটবল তো নাজুল অবস্থা, ক্রিকেট-হকিতেও মোহামেডান আগের মত নেই। রেলিগেশনে টিকতেই লড়ে ঐতিহ্যবাহী এই দলটি।
আর্থিক অজুহাতে হ্যান্ডবল, দাবা লীগে অংশ নিচ্ছে না ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি। খেলার বদলে ক্লাবে অন্য খেলা হয় বলেই এমন করুণদশা নেমে এসেছে। দলের পেছনে অর্থ ব্যয় না করে কীভাবে অনৈতিক অবস্থায় কর্মকর্তারা নিজেদের পকেট ভারী করবে সে খেলাতেই মেতে ছিল।
আরেকটি ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স। আর্থিক অবস্থা খুবই নাজুক বিধায় ২০১৭ সালে প্রিমিয়ার লিগে উঠেও দেশের সর্বোচ্চ ঘরোয়া লিগে অংশ নেয়নি ক্লাবটি। অথচ র্যাবের অভিযানে এক রাতেই ক্লাবটির ক্যাসিনো থেকে পাওয়া গেলো বিপুল পরিমাণ অর্থ। হাউজির অভিযোগ আছে প্রিমিয়ার লিগের দল আরামবাগ ও মুক্তিযোদ্ধার বিপক্ষেও। দিলকুশা, আজাদ স্পোর্টিংও আছে এই তালিকায়।
ফুটবলের এমন ভংগুর দশার মধ্যে ক্লাবগুলোর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ। যা দেশের ফুটবলের জন্য একটা অশনী সংকেত, এমনটাই মনে করছেন সাবেক ফুটবলাররা।
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক বলেন, এটি খুব দুঃখজনক। পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই যে ক্লাবের অর্থের জোগান কোনো ক্যাসিনো থেকে আসবে বা কোনো জুয়ার আসর থেকে আসবে। ক্যাসিনো পৃথিবীর অনেক দেশেই আছে। কিন্তু সেটা কলাব পাড়ায় হতে হবে কেন? ক্লাব একটি পবিত্র জায়গা। যে বাবা-মায়েরা চিন্তা করেন যে আমার ছেলে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধূলা করুক, এরপরে কি তারা আর সেটা চাইবেন? তারা তো ভাববেন যে এখানে গেলে আমার ছেলে এই ধরনের পরিবেশে বড় হবে, তার চেয়ে খেলাধূলার দরকার নাই।
সাবেক ফুটবলার আবদুল গাফফার বলেন, এসব ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে একশ্রেণির লোভী সংগঠকের কারণে। আমি ভাগ্যবান যে, বঙ্গবন্ধু যে ক্লাবের অধিনায়ক ছিলেন সে ওয়ান্ডারার্সে আমিও খেলেছি। আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় ওয়ান্ডারার্স, মোহামেডান, মুক্তিযোদ্ধা যেখানে ক্রীড়াঙ্গনে ভূমিকা রাখবে সেখানে অনৈতিক সব কাজ করে খেলাধুলায় বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। আমি চাই সরকারি উদ্যোগে এসব ক্লাবে ত্যাগী ও যোগ্য সংগঠকদের দায়িত্ব দেয়া হোক।
ক্যাসিনো কাণ্ডে বাফুফেরও যেন কিছু বলার নেই। অনেকটা নিশ্চুপ দিন কাটাচ্ছে বাফুফে। নিজেরা কিছু করার তাগিদ না দিয়ে ফেডারেশন কর্তারা বল ঠেলে দিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কোর্টে। বাফুফে-র সহ সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মহি বলেন, এক্ষেত্রে আমি মনে করি বাফুফে’র কোনো দায় দায়িত্ব নেই। প্রতিটি ক্লাবের নিজস্ব পরিচালনা পর্ষদ আছে, কমিটি আছে। তাদের মাধ্যমে প্রতিটি ক্লাব তাদের নিয়মেই পরিচালিত হয়। কেউ যদি কোনো অন্যায় করে, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে।
তবে ফুটবল সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন এ ব্যাপারে ফেডারেশনকে হতে হবে আরো কঠোর। ক্যাসিনো ব্যবসার প্রমাণ পাওয়া গেলে ক্লাবগুলোকে নিষিদ্ধ করতে হবে ঘরোয়া ফুটবল থেকে। এতে যদি কিছুটা হলেও এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পায় দেশের ক্রীড়াঙ্গণ।