ঢাকা, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১২ মিনিট আগে
শিরোনাম

নড়াইল-ফুলতলা-খুলনা সড়কের কাজে ধীরগতি

  শরিফুল ইসলাম, নড়াইল প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২০, ১৪:৪১

নড়াইল-ফুলতলা-খুলনা সড়কের কাজে ধীরগতি

৭ মাস অতিবাহিত হলেও নড়াইল-গোবরা-ফুলতলা-খুলনা সড়কের ২৮ কিলোমিটার রাস্তা, ১টি ব্রিজ ১৯টি কালভার্টের কাজ নামমাত্র শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৭ কিলোমিটার রাস্তা খুঁড়ে বালু দেওয়া, মিশ্রিত বালু ও খোয়া দেওয়া এবং কয়েকটি পয়েন্টে রাস্তার পাশের মাটি দেওয়ার কাজ চলছে।

এখানে রাস্তার পাশে শক্ত মাটি দেওয়ার কথা থাকলেও নরম কাঁদা দেওয়া হচ্ছে। ১টি ব্রিজ ও ১৯টি কালভার্টের কাজ খোঁড়াখুঁড়ির পর্যায়ে রয়েছে। ১ কিলোমিটারের বেশি সংযোগ সড়কের জমি এখনও অধিগ্রহণ করা হয়নি।

তাছাড়া রাস্তা চওড়া করার জন্য নড়াইল-থেকে গোবরা পর্যন্ত প্রায় ৬ কি.মি. জায়গায় জেলা পরিষদের লাগানো প্রায় ৫শ’ গাছ এবং রাস্তার পাশের বৈদ্যুতিক খুটিও অপসারণ করা হয়নি।

এদিকে এ সড়কের ২০ কি.মি. রাস্তা সম্পূর্ণ চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বড় বড় গর্ত, ধুলো-বালি, অসহনীয় ঝাঁকি এখন যাত্রীদের নিত্যসঙ্গী হয়ে দাড়িয়েছে। এ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবার সময়সীমা রয়েছে ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত।

সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলা মহাসড়কে যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্পে সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতায় গত মে মাসের ৭ তারিখ এ সড়কে ২৭ কি.মি. ২ লেনের রাস্তা, ১ কিলোমিটারের বেশি সংযোগ সড়ক, ১টি ব্রিজ এবং ১৯টি কালভার্ট নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ পায় মইনুদ্দীন বাঁশি- জেভি ফার্ম। এ কাজের প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয়েছে ১১৭ কোটি ৮৮ লাখ ৫৭ হাজার টাকা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সাব কন্ট্রাক্ট নিয়ে অনবিজ্ঞ সিঙ্গাশোলপুর ইউপি চেয়ারম্যান উজ্জল শেখ সাব-কন্ট্রাক্ট নিয়ে গোবরা, বড়কুলা, আড়পাড়া, চাকই এলাকার রাস্তা খুঁড়ে বালু এবং কয়েকটি পয়েন্টে রাস্তার পাশের মাটি দেওয়ার কাজ করছে।

দেখা গেছে, রাস্তার পাশে শক্ত মাটি না দিয়ে অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছে তারা। পার্শ্বের জলাশয় থেকে নরম কাদামাটি এনে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দু-একটি রাস্তায় মিশ্রিত বালু ও খোয়া দেওয়ার কাজ শুরু করেছে।

এদিকে গোবরা খালের ওপর ব্রিজের কাজ শুরু হলেও নির্মাণসামগ্রী রাখার কোনো জায়গা নেই। এছাড়া এ সেতুর সংযোগ সড়কের জন্য সদরের গোয়াইলবাড়ি, কলোড়া এবং গোবরা বাজারে ১ কিলোমিটারের বেশি (৫.৮ একর) জমি এখনও অধিগ্রহণ সম্ভব হয়নি। এসব জায়গায় আনুমানিক ৫১টি পাকা ও আধপাকা বাড়ি, দোকান সরাতে এবং অনেক গাছ-গাছালি কাটতে হবে। এসব জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রায় ৬ মাস পূর্বে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনও ক্ষতিপূরণের পূর্ণাঙ্গ এক্টিমেট পাওয়া যায়নি।

এদিকে এ সড়ক দিয়ে এখন চলাচল করাই দায় হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেহাল অবস্থা কাড়ার বিল, বড়েন্দার, কলোড়া, গোবরা, মির্জাপুর, রুখালি এবং চাকই। এতটাই বেহাল অবস্থা যে হেটে চলাই কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

নড়াইল-ফুলতলা সড়কে চলাচলকারী রকিবুল ইসলাম বলেন, সড়টি দির্ঘদিন যাবৎ চলাচলের অনুপোযোগি থাকার কারণে আমাদের অনেক কষ্ট করে চলাচল করতে হয়। আর এখন কাজ শুরু হলেও ধিরগতীতে কাজ চলছে।

তাপসীরানী বিশ্বাস নামে এক জন বলেন, আমরা সাধারণ জনগণ, আমাদের দুর্ভোগের কথা কেউ চিন্তা করে না। চিন্তা করলে সড়কের কাজ দ্রুত শেষ করত কর্তৃপক্ষ। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার দাবিও জানান তিনি।

মইনুদ্দীন বাঁশি জেভি ফার্ম-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী সৈয়দ ইমতিয়াজ হোসেন রতন বলেন, নানাবিধ কারণে এ কাজ শুরু করতে একটু দেরি হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি যথাসময়ে কাজ শেষ করার জন্য।

নরম কাদামাটি দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, রাস্তা ঠেকাতে কিছু জায়গায় বাধ্য হয়ে প্রথম লেয়ারে নরম মাটি দেওয়া হচ্ছে। পরে শক্ত মাটি দেওয়া হবে। এছাড়া ব্রিজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। দু’পাশে এখনও জায়গা অধিগ্রহণ না করায় মালামাল রাখতে সমস্যা পোহাতে হচ্ছে। বিষয়টি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে।

নড়াইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৗশলী মোঃ ওমর আলী বলেন, রাস্তা চওড়া করার জন্য নড়াইল থেকে গোবরা পর্যন্ত ৭ কি.মি. জেলা পরিষদের প্রায় ৫শ’ বিভিন্ন বনজ ও ফলজ গাছ এবং রাস্তার পাশে বৈদ্যতিক খুটি অপসারণ সম্ভব হয়নি। এসব বিষয় সংশ্লিষ্ট অফিসকে জানানো হয়েছে।

তিনি বলেন, ব্রীজের দুই পাশে এখনও জমির অধিগ্রহণ সম্পন্ন না হওয়ায় ব্রিজের নির্মাণসামগ্রী রাখতে সমস্যা হচ্ছে। দোকানঘর, বাড়ি, গাছপালা ও জমির ক্ষতিপূরণের পরিমান সংক্রান্ত তথ্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানানো হলেও কোনো ফাইনাল রিপোর্ট এখনও আসেনি।

রাস্তায় নরম মাটি দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, রোলার দিয়ে কমপ্যাকশন করলে ঠিক হয়ে যাবে। তাছাড়া কাকে সাব-কন্ট্রাক্ট দেওয়া হয়েছে সেটা আমাদের জানার বিষয় নয়। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই কাজের গুণগতমান দেখা হবে বলে জানান তিনি।

নড়াইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৗশলী মোঃ ফরিদ উদ্দীন বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন না হবার আশঙ্কার কারণে আরও এক বছর সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া বারদ্দও কম পাওয়া গিছে। গত অর্থবছরে ১০ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। এ অর্থ বছরের জন্য আরও ৪০ কোটি টাকার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত