ঢাকা, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

মানবিক বাংলাদেশের গল্প

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৬:৩৫  
আপডেট :
 ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৬:২৭

মানবিক বাংলাদেশের গল্প

বাংলাদেশে এখনও এমন অনেকেই আছেন যারা তাদের জীবনের বড় সময়টাই কাটিয়ে দিচ্ছেন সমষ্টির জন্যে। তারা প্রমাণ করেদিয়েছেন মানুষ শুধু নিজের কথাই ভাবে না, ভাবে সমষ্টির জন্য। এমনই কিছু উদ্যোগের গল্প তুলে ধরা হলো.....

১.এক টাকায় আহার : সবার জন্য শিক্ষার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ২০১৩ সালে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন কিশোর কুমার দাশ। ২০১৬ সালে তারা চালু করে এক টাকার আহার৷ প্রকল্পটির আওতায় দরিদ্র শিশু ও বৃদ্ধরা এক টাকায় পেট ভরে খেতে পান। প্রায় দুই হাজার পথশিশুকে তারা প্রতিদিন খাবার দেন৷ এই খাবারের খরচ দিতে পারেন যে কেউ ৷ এজন্য যেতে হবে তাদের ওয়েবসাইটে।

২.পোস্টার থেকে স্কুলব্যাগ : ১৩টি শাখায় দুই হাজার পথশিশুকে পড়াশোনার সুযোগও করে দিয়েছে বিদ্যানন্দ ৷ আছে নারীদের জন্য বাসন্তি প্রকল্প। ৪০ একর জায়গার উপরে তাদের আছে ছয়টি এতিমখানা ৷ সেখানে ৪০০ শিশু থাকছছ। সম্প্রতি ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের পোস্টার দিয়ে শিশুদের জন্য তারা ব্যাগ তৈরি করেছে। এসব উদ্যোগের পাশাপাশি এবারের বইমেলায় তারা আলোচনায় এসেছে পুরনো মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও ওষুধের বিনিময়ে নতুন বই দিয়ে।

৩.প্রতি গ্রামে পাঠাগার : ‘প্রতি গ্রামে হোক একটি পাঠাগার,’ এমন লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে গ্রাম পাঠাগার আন্দোলন ৷ ২০০৬ সালে সাত তরুণ শুরু করেন এই উদ্যোগ। টাঙ্গাইলে ভূঞাপুরে তারা গড়ে তোলেন অর্জুনা অন্বেষা পাঠাগার। এরপর একে একে ৫৮টি পাঠাগার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এখানেই শেষ নয়। পাঠাগারের উদ্যোক্তা আর সদস্যদের নিয়ে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবিক বিভিন্ন কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

৪.পাঠাগার থেকে বিদ্যালয় : পাঠাগারের পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য স্কুল কলেজ গড়ে তুলছেন গ্রাম পাঠাগার আন্দোলনের কর্মীরা। সম্পূর্ণ নিজেদের উদ্যোগে ভূঞাপুর যমুনার কোল ঘেঁষা একটি গ্রামে গড়ে তুলেছেন হাজী ইসমাইল খাঁ কলেজ ও বঙ্গবন্ধু বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। রংপুরের গোবিন্দগঞ্জে প্রতিষ্ঠা করেছেন শ্যামল-মঙ্গল-রমেশ স্মৃতি বিদ্যা নিকেতন।

৫. পক্ষাগাতগ্রস্থদের ভরসা : ১৯৬৯ সালে বাংলাদেশে আসেন ব্রিটিশ সাইকোথেরাপিস্ট ভ্যালেরি টেইলর। ১৯৭৯ সালে স্থানীয় একটি দল নিয়ে গড়ে তোলেন সেন্টার ফর দ্য রিহেবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড৷ পক্ষাগাতগ্রস্তদের চিকিৎসায় সিআরপি এখন বাংলাদেশের মানুষের কাছে সবচেয়ে আস্থার নাম। যার পরিচিতি ছাড়িয়ে গেছে দেশের গণ্ডি। চিকিৎসা, থেরাপি,পুনর্বাসন, পক্ষাগাতগ্রস্থদের জন্য সহায়ক যন্ত্রপাতি তৈরি ছাড়াও সিআরপির রয়েছে ইনস্টিটিউট, নার্সিং কলেজ, স্কুল ৷

৬.প্রবীণদের আশ্রয় : শেষ বয়সে এসে অনেক প্রবীণই হয়ে যান একা। অনেকের দায়িত্ব নিতে চান না সন্তানেরা। তাদের জন্য ভরসা চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার। ২০১৫ সালে যা গড়ে তোলেন মিল্টন সমাদ্দার ও তার স্ত্রী মিঠু হালদার।মিরপুরে নিজের ভাড়া করা দুটি বাড়িতে এখন পর্যন্ত ৭৫ জন বৃদ্ধকে সেবা দিয়েছেন তারা ৷ ৭৫ জনের মধ্যে ১১ জন মারা গেছেন।

৫. ইশকুল যখন মজার : সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাঠদান করে মজার ইশকুল ৷ ২০১৩ সালে ঢাকার শাহবাগে ১৩ জন শিক্ষার্থী নিয়ে তাদের যাত্রা শুরু হয়। পরে তাদের স্কুল কার্যক্রম শুরু হয় ঢাকার বিভিন্ন জায়গায়। ২০১৮ সালে শিশুদের পড়ানোর পাশাপাশি খাবার কর্মসূচীও চালু করে তারা। বর্তমানে তাদের চারটি খোলা আকাশের নীচে, চারটি স্থায়ীসহ মোট আটটি স্কুল রয়েছে ৷ আছে ১৫০০-র বেশি শিক্ষার্থী৷

৮. অসহায়দের বন্ধু শওকত : যেসব মানুষের ধারে-কাছে কেউ ঘেঁষেন না, যারা ক্ষত হয়ে যাওয়া শরীর নিয়ে রাস্তায় ধুকে ধুকে মৃত্যুর প্রহর গুণেন, তাদের ত্রানকর্তা পুলিশ কনস্টেবল মুহাম্মদ শওকত হোসেন ৷ বছরের পর বছর ধরে তিনি এই কাজ করছেন।পরম আদরে মানুষগুলোকে তিনি রাস্তা থেকে তুলে আনেন। তাদের সেবা-যত্ন, চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। প্রতি মাসের বেতন, কিংবা উৎসব ভাতা নিজের জন্য নয়, খরচ করেন তিনি এই মানুষদের পেছনেই।

৯.মানুষ প্রাণীদের জন্যেও : আহত প্রাণীদের সহায়তা, প্রাণী অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার বা ‘প’ ফাউন্ডেশন। সংগঠনটির ফেসবুকে পেইজে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ২০১৫ স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাদের যাত্রা শুরু হয়।পরবর্তীতে তারা প্রাণীদের পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়ে তোলে। অসুস্থ প্রাণীদের চিকিৎসাসহ মানুষের মধ্যে পশু-পাখির প্রতি ভালোবাসার উদ্রেক ঘটাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে এখন তাদের কার্যক্রম রয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/ এমএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত