ঢাকা, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১০ মিনিট আগে
শিরোনাম

করোনা কত রকমের ও কী কী?

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২০, ১৭:৩৮  
আপডেট :
 ১৭ মার্চ ২০২০, ১৮:২৫

করোনা কত রকমের ও কী কী?

করোনাভাইরাস আসলে কী! বিশ্বস্বাস্থ্য সঙ্কটের এই পর্যায়ে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এখন এটাই। বিশ্বজুড়ে মহামারী যে মরণ জীবাণু সে কিন্তু একটা ভাইরাল স্ট্রেন। অর্থাত্‍ এমন এক ভাইরাস জিনোম যা জিনের গঠন বদলিয়ে প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে। করোনা কিন্তু একটামাত্র ভাইরাস নয়, বরং একটা গোত্র। এদের অনেক পরিবার আছে। সেই পরিবারের সদস্যেরা কেউ নিরীহ আবার কেউ আক্রমণাত্মক। এমনই একটি পরিবারের সদস্য আচমকাই তার স্বভাব বদলে মানুষের সমাজে মহামারী হয়ে উঠেছে। সেই ভাইরাস বা প্রকৃত অর্থে ভাইরাল স্ট্রেন এমনভাবে নিজেকে প্রতি মুহূর্তে বদলে চলেছে যে তার প্রকৃত চরিত্র বিজ্ঞানীদের ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।

এই স্ট্রেনের নাম সার্স-সিওভি-২। বিজ্ঞানীরা আগে যার নাম দিয়েছিলেন নোভেল করোনাভাইরাস। আর এই ভাইরাল স্ট্রেনের কারণে সংক্রামিত রোগের নাম সিওভিডি ১৯।

কে এই করোনা?

করোনা পজিটিভ-স্ট্র্যান্ডেড আরএনএ ভাইরাস। ইন্টারনেটে করোনাভাইরাসের যে ছবি দেখা যাচ্ছে সারা গায়ে কাঁটার মতো খোঁচা খোঁচা অংশ সেটা আসলে ভাইরাল প্রোটিন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের নীচে ফেললে মনে হয় এরা মুকুট পড়ে আছে। ল্যাটিন ভাষায় এগুলোকে বলে ‘করোনাম’। এই খোঁচাগুলো আসলে স্পাইক গ্লাইকোপ্রোটিন যাদের প্রধান কাজ মানুষের শরীরে তাদের বন্ধু প্রোটিন খুঁজে নেওয়া। বাহক কোষের (Host Cell) প্রোটিনের সঙ্গে জুটি বেঁধেই এরা কোষের মধ্যে ঢুকতে পারে। অর্থাত্‍ এই মুকুটের মতো খোঁচাগুলো অনেকটা চাবির কাজ করে, যার সাহায্যে তারা মানুষের শরীরের কোষে এন্ট্রি নিতে পারে।

করোনার যৌথ পরিবার

এ তো গেল করোনার পরিচয়। এবার চিনে নেওয়া যাক এদের পরিবারকে। করোনাভাইরাসের পরিবার অনেক বড়। বিজ্ঞানের ভাষায় এদের পরিবারের নাম ‘করোনাভিরিডি’। এদের চারটা ভাগ— আলফাকরোনাভাইরাস, বিটাকরোনাভাইরাস, ডেল্টাকরোনাভাইরাস এবং গামাকরোনাভাইরাস। এখানেই শেষ নয়। এই পরিবারের ডালপালা ছড়িয়ে আছে বহুদূর। আলফাকরোনা ও বিটাকরোনার জিন পাওয়া গিয়েছিল বাদুর ও ইঁদুরের মধ্যে। প্যাঙ্গোলিনের মধ্যেও বিটাকরোনার কিছু জিন পাওয়া গেছে। তাছাড়া উট, গবাদি পশুর মধ্যেও সময় সময় এই ভাইরাস পরিবারের সদস্যদের খোঁজ মিলেছে। আর বাকি ২ পরিবার গামাকরোনা ও ডেল্টাকরোনারা মূলত থাকে পাখিদের মধ্যে (Avian Species)।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই বিটাকরোনাভাইরাস হচ্ছে যত সর্বনাশের মূল। তাদের জেনাস আবার পাঁচটা সাব-জেনাসে বিভক্ত। যাদের স্ট্রেনগুলো লাগামছাড়া। এরা সকলেই মানুষকে আক্রমণ করতে ভালবাসে। কেউ শুধুমাত্র সর্দি-জ্বরেই সীমাবদ্ধ থাকে, আবার কেউ মহামারী হয়ে ওঠে।

মানুষকে আক্রমণ করে যে করোনারা

মানুষের শরীরে ছোবল বসাতে পছন্দ করে ওই বিটাকরোনারাই। কিছু আলফাকরোনাও আছে। এদের আবার বিজ্ঞানীরা বলেন, হিউম্যান করোনাভাইরাস। এরা দু’রকম। একপ্রকার সাধারণ ফ্লুয়ের মতো, অন্যপ্রকার এপিডেমিক বা মহামারী। কখনও বা প্যানডেমিক বা বিশ্বজুড়ে মহামারী। সাধারণ হিউম্যান করোনা— HCoV-OC43 এবং HCoV-HKU1 , এরা হলো বিটাকরোনার ‘এ’ লিনিয়েজ। HCoV-229E এবং HCoV-NL63, এরা আবার আলফাকরোনার বংশধর। এদের কাজ সর্দি-জ্বর-শ্বাসের সমস্যা তৈরি করা। শ্বাসযন্ত্রের সংক্রামক ব্যধিও ঘটাতে পারে এরা। মূলত বয়স্ক ব্যক্তিরা আক্রান্ত হন এদের সংক্রমণে।

মহামারী হতে পারে যে করোনারা

করোনা পরিবারের তুরুপের তাস এরাই। বিশ্বে যতবার ভাইরাস মহামারী হয়েছে তার জন্য দায়ী বিটাকরোনা পরিবারের এই সদস্য বা ভাইরাল স্ট্রেনা। এরা ৩ রকম সার্স-করোনাভাইরাস (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটারি সিন্ড্রোম), মার্স-করোনাভাইরাস (মিডল ইস্ট রেসপিরেটারি সিন্ড্রোম) এবং সার্স-সিওভি-২। এরা বিটা-করোনার ‘বি’ ও ‘সি’ লিনিয়েজ। ২০০২-২০০৩ সালে সার্স মহামারী হয়েছিল বিশ্বে। ২০১২ সালে আরবে, ২০১৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায়, ২০১৮ সালে সৌদি আরব ও অন্যান্য কয়েকটি দেশে প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছিল মার্স।

বিশ্বজুড়ে মহামারী সার্স-সিওভি-২

বিশ্বে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে যে করোনা সে হল এই সার্স-সিওভি-২। গোল এবং ডিম্বাকার, দু’রকম আকারই হয়। সার্সের সঙ্গে নিওক্লিওটাইডের মিল ৮৯ শতাংশ। এরা সিঙ্গল-স্ট্র্যান্ডেড আরএনএ জিনোম, যার মধ্যে ২৯৮৯১ নিউক্লিওটাইড এবং ৯৮৬০ অ্যামাইনো অ্যাসিড রয়েছে। সার্স-সিওভি২ ভাইরাল জিনোমের সঙ্গে ব্যাট করোনাভাইরাসের (bat-SL-Cov-ZC45 এবং bat-SL-Cov-ZXC21) বিস্তর মিল। ভয়ঙ্কর মার্স-সিওভি ভাইরাসের সঙ্গেও এদের জিনগত সাদৃশ্য আছে। তাই মনে করা হচ্ছে বাদুর বা প্যাঙ্গোলিনের থেকে এই স্ট্রেন ছড়িয়েছে, তবে নিশ্চিত নন বিজ্ঞানীরা।

বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, এই ভাইরাসের ২৭টি ভাইরাল প্রোটিনের ৩৮০ বার মিউটেশন হয়েছে বা জিনের গঠনে বদল হয়েছে। তাই এই জিনোম এখন প্রাণঘাতী। মানুষের শরীরের বিশেষ জিন খুঁজে নিয়ে এরা জোট বেঁধে সরাসরি কোষে এন্ট্রি নিচ্ছে। পরিমাণ ফুসফুসের সংক্রমণ, সেখান থেকে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ভেঙে পড়া, অঙ্গ বিকল এবং কোনও ক্ষেত্রে মৃত্যু। বয়স্ক ব্যক্তি বা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম অথবা আগে থেকেই কোনও ক্রনিক বা সংক্রামক ব্যধি রয়েছে তারাই মূলত এই ভাইরাসের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। এর ভ্যাকসিন বা অ্যান্টিবডি তৈরির কাজ চলছে। যদিও বিশ্বের সব দেশেই সেই কাজ এখনও গবেষণার স্তরেই রয়েছে।

আরএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত