ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

তাড়াশে বাউত উৎসবে মেতেছেন শৌখিন মৎস্য শিকারিরা

  তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৫:১৭  
আপডেট :
 ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৫:৪৫

তাড়াশে বাউত উৎসবে মেতেছেন শৌখিন মৎস্য শিকারিরা
গোমানী খালে শৌখিন মৎস্য শিকারিরা দল বেঁধে বিলে নেমে মনের আনন্দে মাছ শিকার করছেন। ছবি: প্রতিনিধি

চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বিলে মাছ শিকারে নেমেছেন শৌখিন মৎস্য শিকারিরা। আঞ্চলিক ভাষায় দল বেঁধে মাছ শিকারের এই আয়োজনের নাম ‘বাউত উৎসব’।

উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের শৌখিন মৎস্য শিকারিরা দল বেঁধে বিলে নেমে মনের আনন্দে মাছ শিকার করছেন। এ সময় অনেকেই বিলের পানি থেকে বোয়াল, শোল, রুই ও কাতল মাছ ধরছেন। আবার অনেককেই খালি হাতে ফিরে যেতেও দেখা গেছে। দলবেঁধে মাছ ধরার এ আয়োজনে মৎস্য শিকারিদের ডাকা হয় বাউত বলে। তাদের ঘিরেই উৎসবের নামকরণ করা হয়। হাজার বছর ধরে গ্রামীণ ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে হয়ে আসছে বাউত উৎসব। বর্ষার শেষে বিলের পানি শুকিয়ে যাওয়ার সময় এই উৎসব হয়ে থাকে।

তাড়াশ উপজেলার মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়নে দেখা যায়, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলনবিলের গোমানী খালে সারিবদ্ধভাবে মাছ শিকারে নেমেছেন অনেক মৎস্য শিকারি। ভোরের আলো ফোটার আগেই বিলপাড়ে হাজির হয় নানা বয়সী হাজারো মানুষ। সবার হাতে পলো, ঠেলা জাল, বাদাই জালসহ মাছ ধরার নানা উপকরণ। একসঙ্গে বিলে নেমে লোকজ রীতিতে মনের আনন্দে চলছে মাছ শিকার। দলবেঁধে মাছ ধরার এ আয়োজনে মৎস্য শিকারকে ডাকা হয় বাউত। তাদের ঘিরেই উৎসবের নামকরণ। চলনবিলাঞ্চলে এমন উৎসব চলছে যুগের পর যুগ ধরে।

জানা যায়, বিলে দল বেঁধে মাছ ধরার এই আয়োজনের নাম ‘বাউত উৎসব’। দেশের বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে উৎসবে অংশ নেন নানা বয়সী হাজারো মানুষ। তবে, এ বছর বিলে মেলেনি কাঙ্খিত মাছের দেখা। এতে হতাশ ও ক্ষুব্ধ মৎস্য শিকারিরা। তাদের অভিযোগ, অবৈধ জাল আর গ্যাস ট্যাবলেট দিয়ে মাছ ধরে নিয়ে যান প্রভাবশালীরা।

তাড়াশ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আবু হাসিম খোকন জানান, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর নভেম্বরের শেষ অথবা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে শুরু হয় মাসব্যাপী এই উৎসব। চলন বিল অঞ্চলে পূর্বনির্ধারিত এলাকায় দল বেঁধে মাছ শিকারে নামেন বাউতেরা।

মৎস্য শিকারী শাহিন আলম, লুৎফর রহমানসহ অনেকেই জানান, বাপ-দাদার আমল থেকে দেখে আসছি এই বাউত উৎসব। তাই আমরা এলাকার লোকজনের সঙ্গে শখের বসে বাউত উৎসবে আসি। সারা দিনে রুই, কাতল, বোয়াল,শোল, টাকিসহ নানা প্রকারের মাছ পাওয়া যায়। এতে সবাই খুশি।

উপজেলার মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান ম্যাগনেট বলেন, প্রকাশ্যে অবৈধ চায়না দুয়ারি ও কারেন্ট জাল ব্যবহার হচ্ছে। তাই আগামীতে দেশি মাছের সাথে বাঙালি সংস্কৃতির এই উৎসবও হারিয়ে যাবে। এছাড়া বাউত উৎসব বিলপাড়ের মানুষের একটি ঐতিহ্য। ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি যে বিলপাড়ের সৌখিন মৎস্য শিকারিরা দিন ঠিক করে একসঙ্গে বাউত উৎসবে মেতে ওঠে।

তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মজগুল আজাদ বলেন, তাড়াশ উপজেলার মধ্যে চলন বিলের যে অংশটুকু রয়েছে তা একটি বিস্তীর্ণ এলাকা। সেখানে মাছ শিকারের অবৈধ উপকরণের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। সবাইকে বিশেষ করে স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, জনপ্রতিনিধি ও মৎস্য শিকারিদের এ বিষয়ে আরও সোচ্চার হতে হবে।

শত শত নদী আর অসংখ্য খাল-বিল নিয়ে গঠিত সবুজ শ্যামল এই দেশে মাছ ধরার রয়েছে বহু পদ্ধতি এবং উৎসব। এর মধ্যে অন্যতম হলো বাউত উৎসব, যা মূলত পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসব নামে পরিচিত। এটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব হিসেবে বহুকাল ধরে এ দেশে চলে আসছে। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে মহাসমারোহে এই উৎসব হয়।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত