ঢাকা, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

ঠাকুরগাঁও

ভেঙ্গে পড়েছে কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা

  ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৩:০২

ভেঙ্গে পড়েছে কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা

ঠাকুরগাঁওয়ে কমর্রত স্বাস্থ্য সেবদানকারী ব্যাক্তিদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে জনগণকে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার কার্যক্রম ভেঙ্গে পড়েছে। এছাড়া কতিপয় স্বাস্থ্য কর্মী সিন্ডিকেট হয়ে ওষুধ সংকটের কথা বলে পড়ে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করছে রোগীদের।

বহু এলাকা থেকে স্থানীয় জনগণ অভিযোগ করেছে ইদানিং খুবই অল্প সময়ের জন্য খুলে তাড়াতাড়ি বন্ধ করে দিয়ে যেনতেনভাবে চলছে কমিউনিটি ক্লিনিক। আবার যেটুকু সময় খুলছে তাও সেবাদানকারী বিশেষ করে মহিলারা ক্লিনিকে থাকেননা। যার ফলে স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছে না জনগণ।

স্বাস্থ্য সেবা সাধারণ মানুষের নাগালে পৌঁছে দেয়ার লক্ষে ইউনিয়ন পর্যায়ে ৬ হাজার লোকের জন্য ১টি করে কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করে সরকার। ক্লিনিক গুলো সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকার কথা থাকলেও অধিকাংশ ক্লিনিক বন্ধ হয়ে যায় দুপুরের আগেই।

এদিকে জ্বর, মাথা ব্যাথা, ডায়রিয়াসহ বিনামূল্যে ৩১টি রোগের ওষুধ সরবরাহ করার কথা থাকলেও দেয়া হচ্ছে দু’একটি রোগের ওষুধ। এছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ক্লিনিক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসার জন্য রোগীদের যেতে হচ্ছে অন্য কোন ক্লিনিক বা হাসপাতালে। ফলে ভোগান্তির পাশাপাশি অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে তাদের।

চিকিৎসা নিতে আসা বিলকিস বেগম অভিযোগ করে বলেন, জ্বর, মাথা ব্যাথা নিয়ে ক্লিনিকে ওষুধের জন্য এসেছি কিন্তু তারা বলছে এখানে ওষুধ নাই তাই আমাকে এখন বাহির থেকে ওষুধ নিতে হবে।

সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ফেরসাডাঙ্গি এলাকার বিজয় মহন্ত নামের স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের কমিউনিটি ক্লিনিকটি প্রায় সময় বন্ধ থাকে। এলাকার অসংখ্য মহিলা বলেছেন সেখানে পার্শ্ববর্তী কমিউনিটি ক্লিনিকটিই আমাদের একমাত্র ভরসা সেটিও প্রায় সময় বন্ধ থাকে। যার ফলে বাচ্চাদের সর্দিকাশিসহ নানান রোগ ও মহিলাদের সমস্যা সংক্রান্ত রোগের কারণে উনাদের বেশ চিন্তিত থাকতে হচ্ছে। এমনকি অনেকের ঝুঁকি নিয়ে ঠাকুরগাঁও শহরে কোন ফার্মেসী বা ডাক্তারের কাছে যেতে হচ্ছে।

এলাকাবাসীর দাবি এই ক্লিনিকটি বর্তমানে সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এরপর বন্ধ হয়ে যায়। তাও খোলা থাকার সময় সেবাদানকারী কর্মচারীরা থাকেনা।

এদিকে এলাকাবাসীর বার বার এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে মোহাম্মদপুর ফেরসাডাঙ্গি কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে ক্লিনিকটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে পার্শ্ববর্তী এক মহিলার সাথে কথা বললে তিনি বলেন মূলত ক্লিনিকটি এভাবেই চলে। তবে এজন্য অনেক রোগী এসে প্রতিদিন ফিরে যায় বলেও জানান তিনি।

এ ব্যাপারে আলাপকালে ফেরসাডাঙ্গি কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রভাইটার সাইফুল ইসলাম বলেন নিয়মিত ক্লিনিকে আসা হয়। রোগী না থাকায় দুপুরের পর ক্লিনিক বন্ধ রাখা হয়।

এদিকে ঠাকুরগাঁও জেলার ১৩৭টি ক্লিনিকের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বেশির ভাগ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো একেবারেই অচল।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন ক্লিনিকের দায়িত্বে কমর্রত স্বাস্থ্য সেবদানকারী ব্যাক্তিদের স্বেচ্ছাচারিতায় কারণে গ্রামাঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা একেবারে নাজুক।

এলাকাবাসীর দাবি বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে বড় সফলতা হচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক সেটাকে ইচ্ছা করে কিছু কুচক্রি মহল নষ্ট করতে ষড়যন্ত্র করছে।

এদিকে মোহাম্মদপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো: সোহাগ হোসেন বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আর সে সময় শুনছি অনেক ক্লিনিক বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের নজরদারী বাড়ানো দরকার।

তবে ক্লিনিকগুলো বন্ধ থাকার কথা অস্বীকার করে সিভিল সার্জন ডা: আবু মো: খায়রুল করিব বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক এখন গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাতে বিশ্বের মডেল। তাছাড়া জেলার বেশির ভাগ কমিউনিটি ক্লিনিক খুবই ভাল সেবা দিচ্ছে। হয়তো দু’একটি কিছু সমস্যা থাকতে পারে, সেগুলোর ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়া হবে। ওষুধ সংকট সম্পর্কে বলেন, এটি একটি প্রকল্পের আওয়াতায় চলে। দুইমাস থেকে আমরা প্রকল্প হতে কোন ওষুধ পাই না তাই ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে।

উল্লেখ্য, ঠাকুরগাঁও সদর, পীরগঞ্জ, রানীশংকৈল, বালিয়াডাঙ্গী ও হরিপুর উপজেলায় ১৩৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত