ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

হলি আর্টিজান হামলার আদ্যপান্ত

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০১৯, ১৫:৫৪  
আপডেট :
 ২৭ নভেম্বর ২০১৯, ১৬:১৬

হলি আর্টিজান হামলার আদ্যপান্ত
ফাইল ছবি

তিন বছর আগে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় করা মামলার রায় দিয়েছেন আদালত। রায়ে ৮ আসামির মধ্যে ৭ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ১ জনকে খালাস দিয়েছেন আদালত।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসা‌মিরা হ‌লো- জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র‌্যাশ, আব্দুস সবুর খান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাদিসুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ। খালাস পেয়েছে মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান।

২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার গুলশানে ভয়াবহ ওই হামলার ঘটনা স্তম্ভিত করেছিল পুরো বাংলাদেশকে। একই সঙ্গে স্পষ্ট হয়েছিল জঙ্গিবাদের বিস্তারের এক বিপজ্জনক মাত্রা।

জঙ্গিরা হত্যা করেছিলেন ২০ জন দেশি-বিদেশি নাগরিককে; যাদের মধ্যে ৯ জন ইতালীয়, ৭ জন জাপানি, ১ জন ভারতীয় ও ৩ জন বাংলাদেশি।

পুলিশের তদন্তে এসেছে, এই হামলায় জড়িত গোষ্ঠীর নাম নব্য জেএমবি; যারা ঘটনার পর নিজেদের আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস (ইসলামিক স্টেট) বলে দাবি করেছিল।

ঘটনার দিন ১ জুলাই সন্ধ্যা নামতেই সেখানে চালানো হয় ইতিহাসের জঘন্যতম জঙ্গি হামলা। ভয়াবহ এ হামলায় নৃশংস হত্যাযজ্ঞ এবং প্রায় ১২ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস জিম্মি সংকটের ঘটনায় স্তম্ভিত করেছিল পুরো জাতিকে।

ওই দিন রাত আটটার পর কয়েকবার প্রস্তুতি নেওয়া স্বত্ত্বেও স্পর্শকাতর বিবেচনায় রাতে হলি আর্টিজানে অভিযান চালানো থেকে বিরত থাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরদিন সকালে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো সদস্যদের পরিচালিত ‘অপারেশন থান্ডারবোল্টে’ অবসান হয় জিম্মিদশার, নিকেশ হয় হামলাকারী ৫ জঙ্গি।

হলি আর্টিজানে হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ফোর্সসহ প্রথমে পৌঁছান গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রিপন কুমার দাস। মামলার এজাহারে ঘটনার বিবরণীতে তিনি উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন গুলশান থানার রোড নম্বর-৭১ থেকে ৯২ এবং এর আশপাশ এলাকায় পেট্রোল ডিউটির দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

রাত আনুমানিক পৌনে ৯টায় ওয়্যারলেসে ভেসে আসে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড বেকারিতে গোলাগুলির খবর। খবর পেয়েই ফোর্সসহ রাত আনুমানিক ৮টা ৫০ মিনিটে ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে পৌঁছান এসআই রিপন। হলি আর্টিজানের কাছে উপস্থিত হয়ে তারা দেখতে পান, রেস্টুরেন্টের ভেতরে কতিপয় সন্ত্রাসীরা ‘আল্লাহ্ আকবর’ ধ্বনি দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ ও বোমা নিক্ষেপ করছে।

পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ ও এলোপাথাড়ি গুলি বর্ষণ করতে থাকে। রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে রেস্তোরার ভেতর থেকে হামলাকারীরা হলি আর্টিজানের বাইরে থাকা র‌্যাব ও পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে দু’টি গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটান। এতে আহত হন বনানী থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এসি রবিউল। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তারা।

রাত ১১টার দিকে র‌্যাবের পক্ষ থেকে জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে ঘটনাস্থল থেকে জানান র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। তিনি ওই সময় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভেতরে অন্তত ২০ জন বিদেশিসহ কয়েকজন বাংলাদেশি আটকা পড়েছেন। ভেতরে যারা আছেন, তাদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য আমরা বিপথগামী হামলাকারীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি।’

রাত ১২টায় পুলিশ, র‌্যাব ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সঙ্গে অভিযানে অংশ নিতে ঘটনাস্থলে আসে সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীর কমান্ডোরা। ভয়াবহ এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সব বাহিনী সম্মিলিতভাবে ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। নিরাপত্তার স্বার্থে ঘটনাস্থলের পাশ থেকে সাধারণ লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে দেয়া হয়।

রাত দেড়টার দিকে খবর আসে, জঙ্গিরা ভেতরে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। জঙ্গিরা রাতেই ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করেন। এর মধ্যে নয়জন ইতালির নাগরিক, সাতজন জাপানের ও একজন ভারতীয় নাগরিক। বাকি তিনজন বাংলাদেশি। গুলি করে ও চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে এ হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। আর এরই মধ্যে আইএসের সঙ্গে জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতার খবর আসে।

পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তক্রমে ২ জুলাই সকাল আনুমানিক ৭টা ৪০ মিনিটে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন জিম্মিদের উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করার লক্ষ্যে অভিযান পরিচালনা করে। ১২ থেকে ১৩ মিনিটের মধ্যেই সব সন্ত্রাসীকে নির্মূল করে ওই এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হয়।

পরে জিম্মি থাকাবস্থায় সন্ত্রাসী কর্তৃক নৃশংসভাবে নিহত হওয়া ২০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে ৯ জন ইতালির নাগরিক, ৭ জন জাপানের, ১ জন ভারতের ও ৩ জন বাংলাদেশি। সিআইডি ক্রাইম সিন বিভাগের সহায়তায় ঘটনাস্থল থেকে সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্যাদিসহ ভিকটিমদের ব্যক্তিগত মালামাল সাক্ষীদের মোকাবেলায় জব্দ করে নিজ হেফাজতে নেয় পুলিশ।

উদ্ধার জিম্মিদের বয়ান অনুযায়ী তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, জঙ্গিরা হামলার প্রথম ২০ মিনিটেই নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায়। তারা দেশি-বিদেশিদের গুলি করে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে/গলাকেটে করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। হত্যার পর ছবি তুলে অ্যাপের মাধ্যমে বাইরে অবস্থানরত নব্য জেএমবির নেতা তামিম চৌধুরী ও মারজানের কাছে পাঠায় তারা। তারা এতটাই নিষ্ঠুর ছিলো যে, লাশের সারি মেঝেতে রেখেই খাবার খায়।

সিটিটিসির অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, প্রায় দেড় বছর আগে পরিকল্পনা এবং দীর্ঘ প্রস্তুতি শেষে নৃশংস এ হামলা সরাসরি বাস্তবায়নে দায়িত্ব দেয়া হয় আত্মঘাতি পাঁচ জঙ্গিকে। আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস’র ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে জেএমবির একটি গ্রুপ বিদেশিদের ওপর হামলার সিদ্ধান্ত নেয় ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে। পরবর্তীতে ‘নব্য জেএমবি’ নামে পরিচিতি পাওয়া এ গ্রুপটির কথিত শুরাকমিটি গাইবান্ধার সাঘাটায় বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত নেয়।

হামলার উদ্দেশ্য

দুই বছরের বেশি সময় ধরে তদন্তের পর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র দেন।

সেখানে বলা হয়, হলি আর্টিজানে হামলার পেছনে মূলত তিনটি উদ্দেশ্য ছিল জঙ্গিদের।

১) কূটনৈতিক এলাকায় হামলা করে নিজেদের সামর্থ্যের জানান দেয়া।

২) বিদেশি নাগরিকদের হত্যা করে নৃশংসতার প্রকাশ ঘটানো।

৩) দেশে বিদেশে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পাওয়া এবং বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা।

২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর ৩ ডিসেম্বর মামলার বাদী এসআই রিপন কুমার দাসের জবানবন্দি নেওয়ার মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচার শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষে সবশেষ সাক্ষ্য দেন তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির।

সাক্ষ্যে তিনি বলেন, হলি আর্টিজানে হামলার আগে জঙ্গিরা বাংলাদেশে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করে। এর অংশ হিসেবে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে গাইবান্ধার বোনারপাড়া বাজার এলাকার কলেজ মোড়ে একটি বাসায় মিটিং করে প্রথমে তারা হলি আর্টিজানে হামলার পরিকল্পনা করে।

নব্য জেএমবির জঙ্গিরা ছয় মাস ধরে ওই হামলার পরিকল্পনা করে জানিয়ে পরিদর্শক হুমায়ুন বলেন, তাদের উদ্দেশ্য ছিল, দেশকে অস্থিতিশীল করা এবং বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র বানানো।

রাষ্ট্রপক্ষে ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১৩ জনের সাক্ষ্য এবং আত্মপক্ষ সমর্থনে আসামিদের বক্তব্য শোনার পর উভয় পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শুনানি হয়। সব বিচারিক কার্যক্রম শেষে গত ১৭ নভেম্বর রায়ের দিন ধার্য করে দেন বিচারক মজিবুর রহমান।

রায়কে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার রাত থেকেই আদালতপাড়াসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় র‌্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্কতা বাড়ানো হয়। সকালে আট আসামিকে কারাগার থেকে নিয়ে আসা হয় আদালতে।

বিপুল সংখ্যক সংবাদকর্মী সকাল থেকেই উপস্থিত ছিলেন আদালত প্রাঙ্গণে। গুলশান হামলায় যেসব দেশের নাগরিকরা নিহত হয়েছিলেন, সেসব দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তারাও রায় শুনতে আদালতে এসেছিলেন।

এজাহারের সংক্ষিপ্ত বিবরণ

১ জুলাই

এই মামলার বাদী এসআই রিপন কুমার দাস গুলশান থানার ৭১ নং রোড থেকে ৯২ নং রোড এবং আশপাশ এলাকায় সকাল ৯টা থেকে পেট্রোল ডিউটি করছিলেন। তিনি রাত ৮টা ৪৫ মিনিটের দিকে বেতারযন্ত্রের মাধ্যমে জানতে পারেন, ৭৯ নম্বর রোডের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড বেকারিতে গোলাগুলি হচ্ছে। সংবাদ পাওয়ার পর তিনি ফোর্সসহ রাত ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে রেস্টুরেন্টের কাছে গিয়ে দেখতে পান, ভেতরে কিছু সন্ত্রাসী ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ও বোমা নিক্ষেপ করছে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তাদের ওপরও বোমা নিক্ষেপ ও এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে সন্ত্রাসীরা। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীদের গুলি ও গ্রেনেডের আঘাতে এসআই ফারুক হোসেন ও তার সঙ্গে থাকা কনস্টেবল প্রদীপ চন্দ্র দাস ও আলমগীর হোসেন গুরুতর আহত হন। আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এরপর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়াসহ ডিএমপির সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা ও ফোর্স ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তারা বেকারির চারপাশ ঘিরে রেখে সন্ত্রাসীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। তখন সন্ত্রাসীরা তাদের লক্ষ্য করে অনবরত গ্রেনেড ও গুলি করতে থাকে। এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে সন্ত্রাসীরা বেকারির পশ্চিম দিকের ৭৯ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাড়ির সামনে অবস্থানরত পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড নিক্ষেপ ও গুলি শুরু করে। এ সময় ৩০-৩৫ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও ফোর্স আহত হন। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা ছিল গুরুতর। তাদের সবাইকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৯টা ২০ মিনিটে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাহউদ্দিন খান মারা যান। এর কিছুক্ষণ পর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার মো. রবিউল করিমও মারা যান।

২ জুলাই

সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন অভিযান চালায়। সে সময় সন্ত্রাসীরা কমান্ডো বাহিনীর ওপর গ্রেনেড নিক্ষেপ ও গুলি করে। এ অভিযানে পাঁচ জঙ্গি এবং ওই বেকারির এক কর্মীসহ ছয়জন নিহত হয়। পাঁচ জঙ্গি হলো–মীর মোবাশ্বের (১৯), রোহান ইমতিয়াজ (২০), নিবরাস ইসলাম (২০), মো. খায়রুল ইসলাম পায়েল (২২), মো. শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ওরফে বিকাশ (২৬)। নিহত বেকারির কর্মীর নাম সাইফুল চৌকিদার। এ সময় প্যারা কমান্ডোরা দেশি-বিদেশি জিম্মিদের জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হন।

এছাড়া, নয়জন ইতালীয়, সাতজন জাপানি এবং একজন ভারতীয় ও তিনজন বাংলাদেশি (তাদের একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকার নাগরিক) নাগরিকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। অভিযানে ছয় সন্ত্রাসী নিহত হয়। নিহতদের মৃতদেহ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) পাঠানো হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মৃতদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। সিআইডি ক্রাইম সিন বিভাগের সহায়তায় গুলশান থানার এসআই রিপন কুমার দাস, এসআই মফিদুল ইসলাম, এসআই জয়নাল আবেদীন এবং এসআই হুমায়ুন কবির ঘটনাস্থল থেকে সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্যসহ অন্যান্য জিনিস এবং ভিকটিমদের ব্যক্তিগত মালামাল জব্দ করে হেফাজতে নেন।

নিহত যারা

নিহত ইতালির নয় নাগরিক হলেন- মার্কো টোনডাট, ভিনজেনজো ডি’অ্যালেস্ট্রো, সিমোনা মন্টি, মারিয়া রিবোলি, নাদিয়া বেনেভেট্ট, অ্যাডেলে পুগলিসি, ক্লদিও ক্যাপেলি, ক্রিশ্চিয়ান রসি ও ক্লদিয়া মারিয়া ডি’অ্যান্টোনা।

জাপানের সাত নাগরিক হলেন- হিডেকি হাশিমোটা, কোয়া ওগাসাওয়ারা, মাকোটো ওকামুরা, হেরোশি তানাকা, ইয়োকি সাকাই, নোবুহিরো কোরুসাকি ও রুই শিমোডাইরা।

ভারতীয় নাগরিক তারিশি জৈন, বাংলাদেশ-আমেরিকার দ্বৈত নাগরিক অবিন্তা কবির, বাংলাদেশি দুই নাগরিক ইশরাত জাহান আখন্দ ও ফারাজ আইয়াজ হোসেন এবং দুই পুলিশ কর্মকর্তা, সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. রবিউল করিম ও পুলিশ পরিদর্শক সালাউদ্দিন আহম্মেদ খান ভয়াবহ ওই হামলায় নিহত হন।

হলি আর্টিজানের দুজন স্টাফ সাইফুল চৌকিদার ও জাকির হোসেন শাওন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

সেদিন জঙ্গি হামলায় গুরুতর আহত হন ৩০ থেকে ৩৫ জন পুলিশ সদস্য। তবে যৌথ বাহিনীর কমান্ডো অভিযানে পাঁচ জঙ্গিও নিহত হয়।

গ্রেপ্তার ৮

১) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী ওরফে সুভাষ ওরফে শান্ত ওরফে টাইগার ওরফে আদিল ওরফে জাহিদ (৩২), বাবা–মৃত মাওলানা ওসমান গনি মণ্ডল, মা–মোছা. রাহেলা বেগম, সাং–পশ্চিম রাঘবপুর (ভুতমারা ঘাট), থানা–গোবিন্দগঞ্জ, জেলা–গাইবান্ধা। টাঙ্গাইল থেকে গ্রেপ্তার।

২) মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান (৬০), বাবা–মৃত হোসেন আলী, সাং–হাজারবিঘি চানপুর, থানা–শিবগঞ্জ, জেলা–চাঁপাইনবাবগঞ্জ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার।

৩) রাফিউল ইসলাম ওরফে রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান (২২), বাবা–মো. রেজাউল হক, মা–রোকেয়া আক্তার, সাং–ইসলামপুর জামিলনগর, থানা–বগুড়া সদর, জেলা–বগুড়া। কুষ্টিয়া থেকে গ্রেপ্তার।

৪) মো. আব্দুস সবুর খান ওরফে হাসান ওরফে হাতকাটা সোহেল মাহফুজ ওরফে মুসাফির ওরফে জয় ওরফে নসুরুল্লাহ (৩৩), বাবা–রেজাউল করিম শেখ, মা–মনোয়ারা বেগম, সাং–সাদিপুর (কাবলিপাড়া), পোস্ট–শিলাইদহ, থানা–কুমারখালী, জেলা–কুষ্টিয়া। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার।

৫) হাদিসুর রহমান সাগর, বাবা–হারুন রশিদ, মা–মোছা. আসিয়া বেগম, সাং–কয়রাপাড়া কাদোয়া, থানা–জয়পুরহাট, জেলা–জয়পুরহাট। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার।

৬) মো. আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ইসলাম ওরফে আবু জাররা ওরফে র‌্যাশ (২০), বাবা–মো. আব্দুস সালাম, মা–মোছা. নাসিমা বেগম, সাং–সাবাইহাট কাঞ্চনপুর, থানা–মান্দা, জেলা–নওগাঁ; বর্তমান ঠিকানা: মথুরান ওহাটা, থানা–পবা, জেলা–রাজশাহী। নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার।

৭) শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ (২৫), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র, বাবা–আবদুল হাকিম, গ্রাম–শ্রীপুর, থানা–বাগমারা, জেলা–রাজশাহী।

৮) মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন (৩০), বাবা–মৃত নাসির উদ্দিন সরদার, মা–কোহিনুর বেগম, সাং–শেকেরমারিয়া, পোস্ট–ভাটারা, থানা–নন্দীগ্রাম, জেলা–বগুড়া।

ঘটনার সময় নিহত জঙ্গি

১) রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, বাবা–এম এম ইমতিয়াজ খান বাবুল, মা–জেরিন ইমতিয়াজ, সাং–ব্লক-বি, প্লট-৭/৯ লালমাটিয়া, ঢাকা।

২) মীর মোবাশ্বের (১৭), বাবা–মীর হায়াৎ কবির, মা–খালেদা পারভীন, সাং–বাসা নং ৬৮/এ, রোড ৫, পুরাতন বনানী ডিওএইচএস, বনানী, ঢাকা।

৩) নিবরাস ইসলাম (২৪), বাবা–নজরুল ইসলাম, মা–লাইলা ইসলাম রিতা, সাং–বাড়ি ৫, রোড ১৬, সেক্টর ৩, উত্তরা, ঢাকা।

৪) শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ওরফে বিকাশ (২৬), বাবা–বদিউজ্জামান বদি, মা–আসিয়া খাতুন, সাং–চিথুলিয়া কৈয়াগাড়ী, থানা–ধুনট, জেলা–বগুড়া।

৫) খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল (২২), বাবা–আবুল হোসেন, মা–পিয়ারা বেগম, সাং–শ্রী কুষ্টিয়া, থানা–শাহজাহানপুর, জেলা–বগুড়া।

বিভিন্ন সময় অভিযানে নিহত

১) তামিম চৌধুরী, বাবা–শফিকুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে সফি আহমেদ চৌধুরী, সাং–সোয়াসং বড়গ্রাম, চৌধুরীপাড়া বিজিবি ক্যাম্পের পাশে, থানা–বিয়ানীবাজার, জেলা–সিলেট। বর্তমান ঠিকানা–পাইকপাড়া শাহসুজা, রোড–নুরুদ্দিন দেওয়ানের বাড়ি, বাড়ি নং ৪১০/১, থানা–নারায়ণগঞ্জ সদর, জেলা–নারায়ণগঞ্জ।

২) সারোয়ার জাহান ওরফে আব্দুর রহমান, বাবা–আব্দুল মান্নান, সাং–চামার মুরশী, থানা–ভোলাহাট, জেলা–চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

৩) তানভীর কাদেরী ওরফে জামসেদ ওরফে আবদুল করিম, বাবা–বাতেন কাদেরী, সাং–পশ্চিম বাটিকমারী, ৯ নং ওয়ার্ড, প্রফেসর কলোনি, থানা–গাইবান্ধা, জেলা–গাইবান্ধা। বর্তমান ঠিকানা–২০৯/৫ লালবাগ রোড, জনৈক হাজী কায়সারের পাঁচতলা বাড়ির দ্বিতীয় তলা।

৪) নুরুল ইসলাম মারজান, বাবা–নিজাম উদ্দিন, সাং–আফুরি পূর্ব পাড়া (হেমায়েতপুর), থানা–পাবনা সদর, জেলা–পাবনা।

৫) বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট, বাবা–সিরাজ মাস্টার, সাং–মাস্টার বাড়ি, থানা–তানোর, জেলা–রাজশাহী।

৬) মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান (২০), বাবা–আয়নাল হক, সাং–শাহাবাজপুর থানা, থানা–শিবগঞ্জ, জেলা–চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

৭) মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে জাহিদ ওরফে মেজর মুরাদ, বাবা–নূরুল ইসলাম, সাং–পশ্চিম চাঁদপুর, ইউনিয়ন পরিষদ নং ৫ পাঁচতুরি, থানা–কোতোয়ালি, জেলা–কুমিল্লা।

৮) রায়হান ওরফে রায়হানুল কবির ওরফে ফারুক ওরফে তারেক (২০), বাবা–শাহজাহান, মা–রাহেলা খাতুন, সাং–পশুয়া (টাঙ্গাইল পাড়া), থানা–পীরগাছা, জেলা–রংপুর।

এদিকে বিচার শুরু হওয়ার এক বছরের মাথায় আজ বুধবার বহুল আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা করলেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল।

ফাঁসির দণ্ড পাওয়া সাত আসামি হলেন রাকিবুল ইসলাম রিগ্যান ওরফে রাফিউল ইসলাম, রাজীব গান্ধী ওরফে জাহাঙ্গীর আলম, মোহাম্মদ আসলাম হোসেন ওরফে র‍্যাশ, আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ, মোহাম্মদ হাদিসুর রহমান সাগর ওরফে সাগর, মামুনুর রশিদ রিপন, শরিফুল ইসলাম খালেদ।

আর খালাস পেয়েছেন মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান। জানা যায়, ঘটনার সাথে মিজানের সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় আদালত তাকে খালাস দেন।

সূত্র জানায়, মিজানের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা যথাযথ প্রমাণ না হওয়ায় এবং ফাঁসিযোগ্য অপরাধ বিবেচিত না হওয়ায় আদালত তাকে খালাস দেন।

রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আসামি পক্ষের আইনজীবী দোলোয়ার হোসেন বলেন, ‘রায়ে আমরা সংক্ষুব্ধ। সাক্ষীদের নিয়ে আমাদের সন্দেহ আছে। এ রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।’

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে হলি আর্টিজান

বহুল আলোচিত হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার রায়ের খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো ফলাও করে প্রকাশ করেছে। তিন বছর আগের ওই হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় করা মামলার রায়ে ৮ আসামির মধ্যে ৭ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ১ জনকে খালাস দিয়েছেন আদালত। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল এই মামলার রায় ঘোষণা করেন।

বিবিসি হলি আর্টিজানের রায়ের খবরটি তাদের প্রধান সংবাদ হিসেবে ‘২০১৬ সালের ক্যাফে হামলায় ইসলামী চরমপন্থীদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে বাংলাদেশ’ শিরোনামে প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ‘২০১৬ সালে বেশিরভাগ বিদেশিসহ ২০ জন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাত জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে বাংলাদেশ ’।

বিবিসি বলছে, বাংলাদেশে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের ওই ভয়াবহ এই জঙ্গি হামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হামলা পরিকল্পনা ও পাঁচ হামলাকারীকে অস্ত্র যোগান দেয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তারপর থেকে বাংলাদেশ ব্যাপক জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরু করে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরারও ‘হলি আর্টিজান ক্যাফেতে হামলা, সাত জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ঢাকার আদালত’ শিরোনামে তাদের প্রধান খবর প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, ‘রাজধানী শহরের একটি জনপ্রিয় ক্যাফেতে হামলার ঘটনায় যুগান্তকারী রায় দিয়েছে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির প্রমাণ দিয়েছে বাংলাদেশ।’

মার্কিন সংবাদ সংস্থা এপি ‘ক্যাফে হামলায় সাত জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে বাংলাদেশ’ শিরোনামে হলি আর্টিজান মামলার রায়ের খবর প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, বাংলাদেশের একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ২০১৬ সালের ঢাকায় বোমা হামলার ঘটনায় নিষিদ্ধগোষিত একটি জঙ্গি সংগঠনের সাত সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্স শিরোনাম করেছে, ২০১৬ সালের ক্যাফে হামলার দায়ে সাত জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে বাংলাদেশ। তারা বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির অন্যতম ভয়াবহ এই হামলায় বেশিরভাগ বিদেশিসহ অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। আদালতে এক আসামি ‘আল্লাহু আকবর’ বলার ঘটনাটিও তারা উল্লেখ করেছে প্রতিবেদনে।

আরেক ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানও ‘২০১৬ সালের ক্যাফে হামলায় বাংলাদেশে সাতজনের মৃত্যুদণ্ড’ শিরোনামে রায়ের খবর প্রকাশ করেছে। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচেভেলেও, ‘বাংলাদেশ : ক্যাফেতে হামলার ঘটনায় সাত ইসলামি জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেছে। ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল এই রায় দেন।

ভারতের প্রথম সারির জাতীয় দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক অনলাইন প্রতিবেদনে হলি আর্টিজান মামলার রায়ের খবর প্রকাশ করেছে। ‘২০১৬ সালের ক্যাফে হামলায় সাতজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে বাংলাদেশ’ শিরোনামে রায়ের খবর জানিয়ে তারা বলছে, হামলার সঙ্গে জড়িত এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট শিরোনাম করেছে, ‘২১০৬ সালে ঢাকায় বিদেশিদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা মামলার রায়ে সাতজন ইসলামী চরমপন্থীর মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে বাংলাদেশ।’ মার্কিন সংবাদমাধ্যম ইউএস নিউজ শিরোনাম করেছে, ‘২১০৬ সালের ক্যাফে হামলার দায়ে সাতজনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে বাংলাদেশ।’

এছাড়াও ভারতীয় প্রায় সব সংবাদমাধ্যম, মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক কিছু গণমাধ্যম ও সংবাদ পর্যবেক্ষণ সংস্থা, ইউরোপ আর আমেরিকার গণমাধ্যম, পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ছাঁড়াও অসংখ্য গণমাধ্যমে বুধবারের হলি আর্টিজান মামলার রায়ের খবর প্রকাশিত হয়েছে।

সন্তুষ্ট রাষ্ট্রপক্ষ

রাজধানী ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ হামলা ও হত্যা মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। খালাসপ্রাপ্ত এক আসামির বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানান তারা।

বুধবার দুপুরে রায় ঘোষণার পর মহানগর দায়রা আদালতের প্রধান কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু একথা জানান।

রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। একজনের খালাসের বিষয়ে আমরা পর্যালোচনা করে যদি মনে করি, আপিল করা যাবে।’

সন্তুষ্ট নিহত ওসি সালাউদ্দিনের পরিবার

রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলার ঘটনায় সাত আসামির ফাঁসির আদেশ দেয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন গোপালগঞ্জের সন্তান বানানী থানার সাবেক ওসি নিহত সালাউদ্দিন খানের পরিবারের সদস্যরা।

রায়ে সন্তুষ্ট সরকার

তিন বছর আগে ঢাকার কূটনীতিকপাড়া গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন জঙ্গি হামলায় ২০ জনকে হত্যার দায়ে নব্য জেএমবির সাত সদস্যের ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত। এ রায়ে সরকার সন্তুষ্ট বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এছাড়া আইএসের টুপিসহ এজলাসে আসামির প্রবেশের ঘটনাটি তদন্ত করা হবে বলে ঘোষণা করেছেন আইনমন্ত্রী।

আপিল করবেন আসামিরা

তিন বছর আগে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন জঙ্গি হামলায় ২০ জনকে হত্যার দায়ে সাত জনের ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন আসামিরা।

আসামি পক্ষের অন্যতম আইনজীবী দেলোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা মনে করি সাক্ষ্যগুলো ডাউটলেস না। অনেক কন্ট্রাডিকশন আছে, অনেক ইনকসিসটেন্সি আছে, লেক অব কোলাবেরশন আছে। আমরা এ নিয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করব।

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত