ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

পাঁঠা

  রা জী ব কু মা র দা শ

প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:৫৯

পাঁঠা
রাজীব কুমার দাশ। ফাইল ছবি

সকল প্রাণীর বিশিষ্ট বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মেছে মানুষ। সে দোষ গুণ ভরপুর করে হাঁটছে মানব জীবন। সে যাপিত জীবনেও থাকে কিছু মানব কিছু পশুমানব। থাকে কিছু মানুষের অফুরান কান্না, থাকে পশু মানবের নির্মম অট্টহাসি।

মানুষ মানে জানোয়ার, মানুষ মানে

চিড়িয়াখানা। মানুষ মানে দেবতা দেবদূত। মানুষেতে নিত্যবাস ঈশ্বর খোদা। ত্রিকালদর্শী সহজিয়া বাউল

গোঁসাই সূফী দরবেশ বৈষ্ণব সন্ন্যাসী।

কামারপুর গ্রামের যুবক সজল পদ্মলোচন । সরকারের টাকা ও নিজের কিছু টাকায় গড়ে তোলেছেন ছাগলের খামার। এ নিয়ে প্রশ্ন করা সাংবাদিক মোহসীন কামালকে ব্যাখ্যা মুখে বলেন,' সবাই লাভের মুখ দেখতে চায়। আমি না হয় লস প্রজেক্ট শুরু করলাম। অপ্রেমিক হাতে ছুঁড়ে ফেলা মানব পাঁঠা কষ্টের মতন আমিও না হয় পাঁঠা ছাগল পোষা শুরু করলাম। '

ভাবা কাজ এক মনে যুবক সজল পদ্মলোচন চালু করে দিলেন পাঁঠা খামার।

দলে দলে বদ্বীপের নপুংসক দল কিনতে চাইলেন পাঁঠার অণ্ডকোষ ভ্যাঁ ভ্যাঁ পৌরষালি সম্পন্ন শিশ্ন খসখসে জলে ভরা কামাতুর জিহ্বা,হিম্মত সাহস। যুবক পদ্মলোচনের তর তর করে লাভের অঙ্ক বেড়ে চলেছেন।

অধিক লাভের আশায় যুবক পদ্মলোচনের মনে এবার দুষ্টুবুদ্ধি খেলে যেতে লাগলেন। পাঁঠা প্রজেক্ট মনে সে গোপনে পাঁঠার মতন মানুষ পাঁঠা প্রজেক্ট চালু করে দিলেন। একজন হ্যাকার নিয়োগ দিলেন। খু্ঁটিতে বাঁধা পাঁঠার মতন সেও নির্জন স্হানে বেকার যুবক প্রশিক্ষণের আড়ালে তাগড়া জোয়ান যুবকদের রিক্রুট করে পৌরষালি পরীক্ষার পরে অস্হায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দিলেন। মানব পাঁঠাগুলো ছাগল পাঁঠার আদলে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করেনা ঠিকই; তারাও পাঁঠাদের মতন নিয়মিত মানব ছাগীর গোপন ভাষা শিখে নিতে লাগলেন।

পশু ছাগীরা মৌসুমসেরা যৌনসুখ প্রজনন মেটাতে যেভাবে ভ্যাঁ ভ্যাঁ উন্মত্ত যৌবনের উতলা ডাকে

গৃহস্হের রাত দিনের ঘুম হারাম করে দেন। সে কামাতুর অস্হির ডাকে গৃহস্হের বৌ ঝি ছেলে মেয়ে উতলা হয় আতঙ্কিত মনে পাঁঠা মালিকের খোঁজ নেন, না পেলে মন খারাপ করেন । তারা পারেন না ঠিকমতোন খেতে ঘুমোতে, না পারেন ছাগিকে কাঁঠাল পাতা দিয়ে

নিবৃত্ত করতে। হন্য হয়ে বন্য মেজাজে পাঁঠা খোঁজার তাগিদ প্রতিযোগীতা বিজ্ঞাপনে নেমে যান

যে যার মতোন।

পাঁঠা মালিকের ফরমায়েশ মনে পাঁঠা সঙ্গমের যৌনঘুষ হিশেব মনে কচি ঘাস চাল ভূষি টাকার আবদার মেটানের পরে পাঁঠা মালিক উন্মত্ত উতলা ছাগীকে সঙ্গমের কাছাকাছি এনে দেন। মানুষের অবুঝ মনের সামনেও ছাগী পাঁঠার গোপনে চলে একান্ত আলাপন। তারা বলেন আগের জনম পরজনমের কথা। পাঁঠা অভিমান করেন। ছাগীটা ক্ষমা চান,মানব ছাগীর মতন আগের দেয়া কথা না রাখার কারণ।

পাঁঠা মালিক পদ্মলোচন মিছেমিছি ছাগীর পাঁঠা কথন বন্দনা দেখে মনে পড়ে,একসময় তারও একজন উতলা ছাগী মানবী প্রেমিকা ছিলো। নাম তার দশমিতা। যে দিনের পর দিন এক নপুংসক মানবের ঘর করেছিল। তাতানো যৌবনের দিশেহারা আগুনে ছাগীর মতন দিশেহারা জীবনে ভ্যাঁ ভ্যাঁ জিহ্বা কালো না করে মানবী কন্ঠে কখনো মা কখনও আন্টি কখনো বান্ধবীদের বলেছিল,' আমি আর পারিনা। করবনা ওর সংসার। এ জীবন আমার অন্তঃসারশূন্য। '

সে হাপিত্যেশ আক্ষেপপোড়ান কষ্ট মনে দশমিতার মা সর্বপূজা, আন্টি হৃদয়ভূজা পরামর্শ দিয়ে বলেছিল,' বাছা আমার। এমনটি করোনা। তুমি সুন্দর ড্রেস-আপ নিয়ে ঘুরবে নিত্য নতুন। শরীরে মাখবে নতুন পারফিউম। দেখতে পাবে অনেক তাগড়া মানব পাঁঠা তোমার পিছনে ফ্যাঁত ফ্যাঁত করছে। যুতসই পৌরষালিসম্পন্ন মানবপাঁঠার সঙ্গ নিলে তোমার নিভে যাবে বাড়তি কামাতুর কামের বহুমুখী আগুন। নতুন মনে সংসার করবে আগের মতন। বাড়তি ঝামেলার দরকার নেই বাছাধন। '

যেমন পরামর্শ তেমন কাজ মনে মাস বছর ধরে ছাগী মানবী দশমিতা পাঁঠা খামার মালিক তাগড়া পৌরষালি পদ্মলোচনের নিরষ্কুশ যৌবন উপভোগ করে একেবারে নিজেকে শান্ত করে নিয়েছিলেন উন্মত্ত উতলা যৌবনবতী চরম কামাতুর ছাগীর মতন।

মানুষেরও ভয়ঙ্কর অশান্ত কামাতুর মন প্রাণ যৌবন। সে কাম ধোঁকায় পড়ে সর্বস্ব হারায় মানুষ। খুনোখুনি করে। কাম দহনের তৃপ্তির সরোবরে স্নান সেরে হেসে হেসে ফাঁসি মঞ্চের দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে যান মানুষ। তৃপ্তির শেষ হাসিতে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত্যেও বলে উঠেন, ' এইত বেশ করেছি। এ না হলে হয় বুঝি তৃপ্তির মহাজীবন। '

ছাগী মানবী দশমিনারও হয়েছিল সে দশা। চরম পৌরষালি পাঁঠা বিজ্ঞাপন মনের আহ্বানে না করতে পারেননি প্রেমিকা দশমিনা। অশান্ত ছাগির মতন প্রাণীমনে সেও বলেছিল প্রচণ্ড কাম দহনে -

' হে মানব মহাদেব! বড়োই অশান্ত এ দেহ মনের কাম দহন।

আপন করে শান্ত করে দাও তৃষিত যৌবন। '

পশু ছাগী পাঁঠা আর যৌবনবতী নারীর এক রূপ এক চরিত্র। প্রচণ্ড পৌরষালি সম্পন্ন পুরুষ পাঁঠার মতন খালি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করেন। ছাগীর মতন তাতানো যৌবনের খইফোটা মুখে নারীরা বলেন না এমন

একটি কথাও নাই। বানিয়ে তুনিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে অনেক কথা বলেন। সে কারণে প্রেম ভালোবাসার বিরহ বিজ্ঞাপনেও ওয়ান টাইম প্রেমছাগী নারী মুখে বলতে শোনা যায়,' বাবু খাইছো?তোমায় ছেড়ে যাবোনা কারোর বুকে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তোমার জন্য অপেক্ষা করব। স্বর্গ নরক পাপ পূণ্য শূন্য ভরা জীবন কাটাবো তোমার সনে। এ দেহ মন কবরে যাবে মাটি হবে। শ্মশানে ছাই ভষ্ম হবে,তবুও তুমি ছাড়া পাবেনা দেহ মন কেউ এ জীবনে। '

সে হতে পশু ছাগী ভরসা ব্যেপে পশু পাঁঠার মতন মানব পাঁঠাগুলোও সবকিছু বিশ্বাস করে দিকে দিকে নির্মম সময়ের বলি হতে লাগলেন।

পশু ছাগি পাঁঠা সঙ্গম সুখে চরম তৃপ্ত। মালিকের সাথে মুচকি হাসিতে চলে আসতে দেখে প্রেমিক পাঁঠা সকরুণ চিৎকারে বলছেন, ' যেওনা মালবিকা পারমিতা। আমায় ছেড়ে যেওনা নীলা। তুমি না বলেছিলে ছেড়ে যাবেনা কখনি? '

ছাগি পারমিতা নীলা হেসে হেসে বলে চলেছেন,' দুঃখ পেয়োনা। দেখা হবে তোমার সাথে পরের জনমে। আমি চুড়ান্তভাবে তৃপ্ত হয়েছি। তোমার জীবনে আমি আসবনা কখনি এ জীবনে। '

পাঁঠা মালিক সজল পদ্মলোচন তার পাঁঠার অফুরান বিচ্ছেদী শোকে চিন্তিত। এ ক'দিন তার প্রিয় পাঁঠা মুখে তুলে নেননি একটাও খড়কুটো কলা দানাপানি। ভ্যাঁ ভ্যাঁ করা চঞ্চল পাঁঠার চোখে মৌনতার জল। কারবালা কষ্টের মতন প্রিয় পাঁঠার

দুচোখের নীচে বয়ে চলেছে ফোরাত

বেদনার নীল জল রাশি। প্রিয় পাঁঠার শোকে কাঁদছে পদ্মলোচন সজল।

সজলও প্রেমিকা নীলা চলে যাবার সময় ছাগি প্রেমিকার মতন কথাগুলো শোনেছিল। আজ নতুন করে কানে বাজে নীলার মা বাবা আন্টির কথা। কানে বাজে নপুংসক নীলা স্বামীর কথা। তারাও সমস্বরে বলেছিল, ' নীলা, বছরত পেরিয়ে গেল। চলে আসো। তোমার তাপিত অবদমিত কামাসুর মেরে শান্ত করে দিয়েছে তোমার মানবপাঁঠা প্রেমিক স্বামী পদ্মলোচন সজল বাহাদুর। তুমি নির্বাণ প্রেমিকা মনে সামলে নিতে পেরেছো নিজেকে শান্ত পশু ছাগির মতন।

নীলার নপুংসক স্বামী বাবা মা আন্টি আত্নীয় স্বজন সবাই খুশি। সে এখন নির্ভার সুখি শান্ত। বিশ্বস্ত মনে ফিরে এসেছে রশি হাতে মালিকের হাতে। পশু ছাগির মতন সেও পাচ্ছেন মালিকের হাতের মতন সন্মান। নীলা এখন ছাগির মতন লক্ষীমন্ত।

নপুংসক স্বামীর টেনশন নেই একদম। সে ছেড়ে যাবেনা নপুংসক স্বামী পরিবার পরিজন। ওয়ারেন্টি গ্যারান্টি কার্ড দুটোই পেয়েছে। চরম পৌরষালি সম্পন্ন মানব প্রেমিক মহাদেব স্বামী পাঁঠা সজল পদ্মলোচন শান্ত করে দিয়েছেন দেহ মন চিরদিনের মতন। অবশ্য সে জন্যে সজল ধন্যবাদ পেয়েছেন নপুংসক স্বামী পরিবার পরিজনের।

মানব চরিত্রের মতন পাঁঠা ছাগী চরিত্র একই রকম জেনে সজল পদ্মলোচন থিথিস পেপার হাতে হেঁটে চলেছেন।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও কবি। পুলিশ পরিদর্শক, বাংলাদেশ পুলিশ। মেইল: [email protected].

  • সর্বশেষ
  • পঠিত