ঢাকা, রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ আপডেট : ৩ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

বিএনপি ধ্বংস করে, আওয়ামী লীগ তৈরি করে : শেখ হাসিনা

  রাজশাহী প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৭:০৭  
আপডেট :
 ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৮:৫০

বিএনপি ধ্বংস করে, আওয়ামী লীগ তৈরি করে : শেখ হাসিনা

প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা আপনাদের জন্য উপহার নিয়ে আসি। বিএনপি আপনাদের লাশ উপহার দিয়েছে। আমরা মানুষের কল্যাণ করেছি। আমরা তৈরি করি, তারা ধ্বংস করে। বিদ্যুৎ দিতে পারে না, বিদ্যুতের টাকা মেরে খায়, আর আন্দোলনের নামে আগুন দিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়।

বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহীতে মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ এই জনসভার আয়োজন করে।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আমরা দুই বোন পৈত্রিক সম্পত্তি হিসেবে যে বাড়ি পেয়েছিলাম তা-ও জনগণের জন্য দিয়ে দিয়েছি। কই আমরা তো টাকা আত্মসাৎ করিনি! আমরা ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছি, ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং’ প্রকল্পের আওতায় আপনাদের ছেলে-মেয়েরা ঘরে বসে টাকা আয় করতে পারছে। আজ বই কেনার চিন্তা আপনাদের করতে হয়, বই কিনি আমরা। কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছি, ৩০ প্রকাশ ওষুধ বিনামূল্যে দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে এখানে যে অত্যাচার করেছিল। আপনাদের মনে আছে, বিএনপি সন্ত্রাসীদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কিভাবে মানুষ কষ্ট পেয়েছে। ছয় বছরের মেয়েকে গ্যাঙ রেপ করেছিল, কারণ তার বাবা-মা আওয়ামী লীগ করত। আপনাদের দিয়েছিল লাশ উপহার, বিধবা করেছিল। আমাদের অনেক নেতাদের নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। শিবির ক্যাডাররা হাত পায়ের রগ কেটে দিত। উন্নয়ন তারা করতে পারেনি, পেরেছে বোমাবাজি। ৫শ’ জায়গায় একবারে হামলা। কেবল তাই নয়, পুলিশকে কিভাবে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। মানুষের কল্যাণ তারা করতে পারেনি।

আরও পড়ুন : সংবিধান রক্ষায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী

শেখ হাসিনা বলেন, আজ খালেদা জিয়ার জেল হয়েছে। আপনারা জানেন, এতিমের টাকা লুট করেছে। ১৯৯১ সালে এতিমখানার কথা বলে বিদেশ থেকে টাকা এনে আত্মসাৎ করেছে। এখন বলছে, টাকা আছে- সুদে-আসলে বেড়েছে। এই মামলা সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দায়ের হওয়া, সেই মামলায় তার সাজা হয়েছে। আমার প্রশ্ন, এতিমখানা কোথায়? কেউ এর উত্তর দিতে পারেনি। এই টাকা যদি থাকে তাহলে লাভবান হয়েছে জিয়া পরিবার- বিএনপি নেতাকর্মীরা। এতিমরা কি একটা টাকাও পেয়েছে- প্রশ্ন রাখেন শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আরো বলেন, আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছিলাম, বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর সেই বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছিল। খালেদা জিয়ার ছেলে খাম্বার ব্যবসা করত, সবাইকে খাম্বা কিনে দিয়েছে। রাস্তার পাশে শুধু খাম্বা পড়ে আছে। বিদ্যুতের খুঁটি আছে, বিদ্যুৎ নাই। খুঁটি তো আর বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে না! আমরা কথা দিয়েছি, সব ঘরে আলো জ্বালব। আমরা রাজশাহীতে গ্যাসের লাইন এনে দিয়েছি, যেন এখানে শিল্পের বিকাশ হয়। আমরা মোবাইল ফোন এনে দিয়েছিলাম, বিএনপির আমল ছিল ধরলেও দশ, করলেও দশ- এই ছিল বিএনপি’র আমল। আমরা সেই অবস্থার পরিবর্তন করেছি। আমরা থ্রি-জি থেকে ফোর-জি জগতে প্রবেশ করেছি। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করব বলেছিলাম, কৃষক ভর্তুকির টাকা সরাসরি পাচ্ছে। মোবাইলে সব সুবিধা এনে দিয়েছি। আজ দেশের মানুষ ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা ভোগ করছে।

বিকেল পৌনে ৪টায় তিনি ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানের জনসভাস্থলে পৌঁছান। এরপর প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীর ২৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রী যে ২০টি উন্নয়ন প্রকল্পগুলো উদ্বোধন করেছেন তার মধ্যে রয়েছে- ১৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ে পুঠিয়ায় বারনই নদীতে ড্যাম নির্মাণ, ২ কোটি ৮৭ লাখ ৫৬ হাজার টাকা ব্যয়ে রাজশাহী (নর্থ) ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন নির্মাণ, ১ কোটি ৫১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা ব্যয়ে নওহাটা ফায়ার স্টেশন নির্মাণ, ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভে ইনস্টিটিউট নির্মাণ।

এছাড়াও বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজের ৫ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ, শহীদ কামারুজ্জামান সরকারি ডিগ্রি কলেজের ৫ তলা একডেমিক ভবন নির্মাণ, দামকুড়া হাট কলেজের ৪ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ, আড়ানী ডিগ্রি কলেজের ৪ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ, তানোর আব্দুল করিম সরকার ডিগ্রি কলেজের ৪ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ, বাগমারা কলেজের ৪ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ, বিড়ালদহ কলেজের ৪ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ, রাজশাহী মহানগরীর নবনির্মিত ৮টি থানা ও গোদাগাড়ী উপজেলায় প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী যে ৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তার মধ্যে রয়েছে- ১ হাজার ৫শ’ কোটির টাকা ব্যয়ে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, প্রায় ৯শ’ ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কাশিয়াডাঙ্গা ও মেহেরচণ্ডীতে জিআইএস বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণ, প্রায় ১৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ, ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারি মহিলা কলেজের ৬তলা ভিত বিশিষ্ট ছাত্রী নিবাস নির্মাণসহ বড়াল নদীর ওপর গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ, গোদাগাড়ী ও চারঘাটে ভূমি অফিস নির্মাণ, মাড়িয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ ও শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজের একাডেমিক ভবন নির্মাণ।

জনসভায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।

জনসভায় বক্তব্য দেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলির সদস্য প্রফেসর ড. আবদুল খালেক ও প্রফেসর ড. সাইদুর রহমান খান, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, মাহবুব উল আলম হানিফ, আবদুর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মণি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী সাইফুজ্জামান শেখর, রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন, রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, রাজশাহী-৫ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ দারা, রাজশাহী সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য আকতার জাহান, আওয়ামী লীগেরর কেন্দ্রীয় সদস্য নূরুল ইসলাম ঠাণ্ডু, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ প্রমুখ।

চলতি মেয়াদে এটি প্রধানমন্ত্রীর রাজশাহীতে দ্বিতীয় সফর। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে, তিনি আকাশপথে ঢাকা থেকে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার দয়ারামপুরের কাদিরাবাদ সেনানিবাসে পৌঁছান। সেখান থেকে রাজশাহী যান প্রধানমন্ত্রী। নাটোরে সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজে সালাম ও অভিবাদন গ্রহণ করেন তিনি।

/এসকে/

আরও পড়ুন :

সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের পুনর্মিলনীতে প্রধানমন্ত্রী

জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি: হাসিনা

  • সর্বশেষ
  • পঠিত