ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

যমুনায় সবুজের সমারোহ: আশায় বানভাসিরা

  বগুড়া প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০১৭, ১৮:১০

যমুনায় সবুজের সমারোহ: আশায় বানভাসিরা

বগুড়ায় ভয়াবহ বন্যার পর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে বানভাসিরা। সব হারিয়ে সব পাওয়ার আশায় চোখে মুখে তাদের স্বপ্ন উঁকি দিচ্ছে। সামনে তাদের সুদিন। এমন লালিত স্বপ্নগুলো বুকের সাথে বেঁধে যমুনার বুকে জেগে ওঠা চরে ধান চাষ করেছে সারিয়াকান্দি উপজলোর বন্যায় সব হারানো মানুষগুলো। যমুনার চরগুলো এখন পলি পড়ে চাষ যোগ্য হয়ে ওঠায় সবুজ রঙ ধরেছে। আর ধান চারার সবুজ রঙ ধরায় এখন ফলনের আশায় রয়েছে।

জানা যায়, চলতি বছরের গত জুলাই মাসের শুরুতে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় যমুনা নদীর পানি বেড়ে ৮০ সেন্টিমিটার বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। জুলাই মাসের প্রথম দফা বন্যায় প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়। বন্যার পানি কমে যাওয়ার পর কৃষক চাষমুখি হয়ে উঠতেই আবারো বন্যা তলিয়ে দেয় আমন চাষিদের স্বপ্ন। আগস্ট মাসের বন্যায় জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলায় যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১০০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বন্যায় ঘরবাড়ি ছাড়াও আমন চাষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বন্যার পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথে সারিয়াকান্দি উপজেলার বানভাসি ও ক্ষতিগ্রস্থ চাষিরা ধান চাষ শুরু করে। সারিয়াকান্দির চরাঞ্চলে এখন যতদূর চোখ যায় শুধুই সবুজ। বন্যার পর সবুজের সমারোহ এখন যমুনার উর্বর চরাভূমিতে। কিছু দিন পূর্বেই যেখানে পানিতে থৈ থৈ আর আহাজারীর কান্না, সেখানে আজ চারিদিকে সবুজ ফসল। সবুজ রঙ। আর এই সবুজ রঙে মিশে আছে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের স্বপ্ন। এখন কৃষকদের বুকে দানাবাঁধতে শুরু করেছে বেঁচে থাকার নতুন স্বপ্ন।

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, উপজেলা ১২ টি ইউনিয়নের মধ্যে অধিকাংশ এলাকা যমুনা ও বাঙ্গালী নদীর চরাভূমি। চরের এসব জমিতে এমন কোন ফসল নেই যে তার চাষ হয়না। চরের জমি শস্য ভান্ডার নামে পরিচিত। বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ী ঢলের পানিতে হাবু-ডুবু খেলেও চরের জমি থেকে ওই সোনালী ফসল যখন ঘরে ওঠে তখন সে কষ্ট আর মনে থাকে না কৃষকের। ছোট বড় সবাই আনন্দ জোয়ারে ভাসতে থাকে। এবারের বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরপরই চরের চাষিরা নাওয়া- খাওয়া ছেড়ে জমিতে স্থানীয় জাতের গাইঞ্জা ধানের চাষ সহ মাসকালাই, মরিচ, চিনাবাদাম অন্যান্য শাক-সবজি চাষে সময় দিচ্ছে। কাকডাকা ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে তাদের এই ব্যস্ততা। পুরুষ- মহিলারা ছাড়াও পরিবারের উপযোগী সদস্যরাও হাত লাগিয়েছে জমি চাষাবাদের কাজে। অনেক জমিতে পলি মাটির আস্তরণ পড়ায় জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অল্প পরিমান সার ব্যবহার করেই অধিক পরিমান ফসল ঘরে তোলার উজ্জল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে এলাকার চাষীরা ৩ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে উফসি জাতের রোপা আমন, চর এলাকার চাষীরা ৪ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে গাইঞ্জা ধানের (স্থানীয় ধানের জাতের নাম) চারা রোপন করেছেন। দেরি হলেও চাষ শেষ করেছে। কোন কোন চাষী আবার গাইঞ্জা ধানের জমিতে নিড়ানী দিয়েছে। জৈবসার ছিটিয়ে এখন ফলন পাওয়ার আশায় বুক বেঁধে আছেন।

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটশেরপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া চরের ফজলুল করিম শেখ জানান, তিনি এরই মধ্যে ২বিঘা জমিতে গাইঞ্জা ধান ও ৪ বিঘায় মরিচ চাষ করেছেন। গত বছর গাইঞ্জা ধান বিক্রি হয়েছে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা মন। প্রতি বিঘা প্রতি ৮ থেকে ৯ মন করে ধান পাওয়া যায়। বন্যায় সব হারানো কৃষকদের এই ধানই ভরসা। নভেম্বর মাসের মধ্যে ধান কাটা মারাই শুরু হলে, এলাকার মানুষের মধ্যে বন্যার দুঃখ ভুলে যাবে। বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চন্দবাইশা এলাকার মোঃ সোহেল জানান, স্থানীয় কিছু কৃষক উফসি জাতের রোপা আমন চাষ করেছে। আবার কিছু কৃষক গাইঞ্জা ধান চাষ করেছে। এই ধান আগামী নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে কাটা শুরু হবে। বন্যার পানি কমে যাওয়ার পরই এই ধান চাষ শুরু হয়। ৭০ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে গাইঞ্জা ধানের ফলন পাওয়া যায়। এলাকার বানভাসি মানুষগুলোর জন্য এই ধান চাষ বেঁচে থাকার একটা অবলম্বন।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি রোপা আমন মৌওশুমে বগুড়া জেলায় ১লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে বগুড়ায় এবার ৬ হাজার ৯৮৭ হেক্টর জমিতে বেশি রোপা আমন চাষ হয়। ভাল ফলন পাওয়ার আশা করা হলেও হঠাৎ করে বন্যায় আমন চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বগুড়া জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা শাহারুল ইসলাম মোঃ আবু হেনা জানান, এবারের বন্যায় জেলায় ৩৯ হাজার ১৭০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। এর মধ্যে রোপা আমন তলিয়ে যায় ৩৬ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমি। শাকসবজি ৮১০, কলা ৪০ হেক্টর, আমন বীজতলা ৮৫ হেক্টর। আউশ ১ হাজার ৬৬৫ হেক্টরন বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর কৃষক তাদের ক্ষতি হওয়া ফসলের জমিতে নতুন করে চাষাবাদ শুরু করেছে।

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসার মো: শাহাদুজ্জামান জানান, সারিয়াকান্দিতে বন্যায় কৃষি জমি ও ক্ষেতের ক্ষতিসাধিত হয়েছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষকদের বীজ, সার, চাষের নিয়ম, তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করে চাষমুখি করা হয়েছে। বন্যার পর উপজেলায় ৮ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে আমন ও গাইঞ্জা ধানের চাষ হয়েছে। বন্যায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমরা কৃষকদের বিভিন্ন সযোগিতা পর্যায়ক্রমে প্রদান করবো। গাইঞ্জা ধান ৯০ দিনের মধ্যে ফলন পাওয়া যাবে। গাইঞ্জা ধান স্থানীয় একটি জাত। এই গাইঞ্জা ধান চাষ বেশি হয়েছে। যমুনা নদীর চরগুলো এখন সবুজ রং হয়ে উঠেছে। কৃষকরা এখন ফলন পাওয়ার আশা করছে।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত