ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

ভাবিকে হত্যা: জাপা নেতার বিরুদ্ধে ‘মামলা নিলো না’ পুলিশ

  জয়পুরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৮:১৯  
আপডেট :
 ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৮:২৮

ভাবিকে হত্যা: জাপা নেতার বিরুদ্ধে ‘মামলা নিলো না’ পুলিশ

জয়পুরহাটে ভাবি বিলকিস বানুকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে দেবর জয়পুরহাট সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও দোগাছী ইউপি সদস্য আবু বায়েজীদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার বাদী জানান, থানায় মামলা করতে গিয়ে পুলিশের সহযোগিতা না পেয়ে আদালতে মামলা করা হয়েছে।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি জয়পুরহাট জেলা বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে মৃত বিলকিস বানুর বড় বোন মর্জিনা বেগম বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় জাপা নেতা ও ইউপি সদস্য আবু বায়েজীদ ও তার স্ত্রী ফাতেমাকে আসামি করা হয়েছে।

এদিকে আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইকবাল বাহার মামলাটি আমলে নিয়ে জয়পুরহাট সদর থানায় এজাহারভুক্ত করার নিদের্শ দিয়েছেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মৃত বিলকিস বানুর স্বামী খুব গরীব হওয়ায় সে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে তিন সন্তানকে নিয়ে খুব কষ্টে জীবন-যাপন করছিলেন। বিলকিস বাবার বাড়ির সম্পত্তি বিক্রি করে বসতবাড়ির পাশে একখণ্ড জমি ক্রয় করেন। দেবর জাপা নেতা ও ইউপি সদস্য আবু বায়েজীদ ও তার স্ত্রী ফাতেমা ওই জমি গ্রাস করার উদ্দেশ্যে প্রায়ই বিলকিস বানুকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছিল। বায়েজীদ প্রভাবশালী হওয়ায় বিলকিসের স্বামীও তাকে কিছু বলতে পারতো না। বিলকিস নিরুপায় হয়ে গত ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলাটি করার পর আবু বায়েজীদ ক্ষিপ্ত হয়ে এ বছরের গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিকেলের দিকে বিলকিসকে বাড়ির সামনের কলা বাগানে নিয়ে পূর্ব পরিকল্পনামতো বেদম মারধর করে। দেবরের মারধরে বিলকিস অজ্ঞান হলে প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় তাকে জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে পরের দিন ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল ৫টার দিকে বিলকিস মারা যায় এবং লাশটি তার পরিবার নিয়ে আসে।

মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, লাশের শরীরে আঘাতে চিহ্ন দেখে জয়পুরহাট থানা পুলিশকে খবর দেয় ও থানায় লিখিত অভিযোগ করেন এবং পুলিশ বিলকিসের পরিবারকে ভুল বুঝিয়ে লাশের সরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেন। ময়নাতদন্ত শেষে তাকে মায়ের বাড়ি ধামইরহাট নিয়ে যাওয়ার পথে বায়েজীদের নেতৃত্বে অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জন তাদের পথরোধ করে এবং লাশের সঙ্গে থাকা লোকজনদের পিটিয়ে লাশ ছিনতাই করে নিয়ে বায়েজীদের নিজ এলাকায় দাফন সম্পন্ন করেন।

পরে থানায় খবর নিয়ে জানা যায়, আগের দেওয়া অভিযোগটি মামলা রেকর্ড করা হয়নি। এ ব্যাপারে আবু বায়েজীদ এবং তার লোকজন বাদী মর্জিনা বেগমকে মোবাইলে হুমকি দেয় ও মামলা করলে বাদীর মেয়েকে অপহরণ করারও হুমকি দেয়।

মামলার বাদী মর্জিনা বেগম, তার পরিবার ও এলাকাবাসীরা বলেন, প্রভাবশালী বায়েজীদের বিরুদ্ধে বিলকিস নিরাপত্তা চেয়ে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১০৭/১১৭ ধারায় মামলা দায়ের করেন। প্রভাবশালী বায়েজীদ কৌশলে বিলকিসকে ভয়ভীতি ও প্রভাবিত করে ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন ও পরের দিন ১০ ফেব্রুয়ারি তাকে মারধর করে গুরুতর আহত করে এবং ১১ ফেব্রুয়ারি বিলকিস বানু মারা যান।

তিনি বলেন, এরপর থানায় অভিযোগ করে বায়েজীদসহ তাদের আসামি করতে বললে পুলিশ আমাদেরকে সহযোগিতা করে না। বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা করা হয়েছে। মামলার পর থেকে বায়েজীদ ও তার লোকজন আমাদের পরিবারকে নানা রকম ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া নিহত বিলকিসের ছেলেদের বায়েজীদ নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে তাদের লেলিয়ে পুলিশকে দিয়ে হয়রানি করার চেষ্টা করছে। সুষ্ঠু তদন্ত করে এই হত্যাকারীদের বিচার চান তারা।

এ ব্যাপারে জাপা নেতা ও ইউপি সদস্য আবু বায়েজীদকে একাধিকবার মুঠোফোনে তার বক্তব্য নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে গত ২০ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিকরা সন্ধ্যায় থানায় মামলার তথ্য নিতে গেলে, থানা চত্ত্বরে তাকে দলবলসহ দেখা যায়। সেখানে তার বক্তব্য নিতে চাইলে তিনি এসব সত্য নয় বলে বক্তব্য না দিয়ে দ্রুত চলে যান।

জয়পুরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ শাহরিয়ার খান বলেন, আদালতের এজাহারটি এসেছে কিনা তা দেখতে হবে। অবশ্যই আদালতের নির্দেশ অনুয়ারি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত