ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

তারা এমপির লোক!

  ​নরসিংদী প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৭:৪৫  
আপডেট :
 ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৭:৫২

তারা এমপির লোক!

রাজনীতির অন্তরালে অস্ত্র, মাদক ও দেহব্যাবসায় জড়িত থাকার দায়ে নরসিংদী জেলা যুব মহিলালীগের সাধারণ সম্পাদক পাপিয়া চৌধুরী ও তার স্বামী শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন ওরফে মতি সুমন র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর নরসিংদীজুড়ে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল বাইজি সর্দারনী বেশে পাপিয়ার ভিডিও। নারী নেত্রীর অন্তরালে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কথা বের হতে শুরু হয়েছে। মুখ খুলতে শুরু করেছে সাধারণ মানুষ।

সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও পতিতা ব্যবসার পাশাপাশি ব্ল্যাকমেইল করে গড়ে তুলেছেন কোটি কোটি টাকার সাম্রাজ্য। অনৈতিক কার্যকলাপের ভিডিও ধারণ করে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়াই তাদের প্রধান পেশা। পাপিয়া ও সুমনের নেপথ্যের কাহিনী গণমাধ্যমে প্রকাশের পর সন্ত্রাসী দম্পতির কথা এখন 'টপ অফ দ্যা টাউন'।

এরই মধ্যে রোববার র‌্যাবের একটি দল তাদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও বিপুল পরিমান মাদক উদ্ধার করেছে। অনৈতিক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়া যুব মহিলী লীগের শামীমা নুর পাপিয়াকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগ।

আরও পড়ুন: হোটেল ভাড়া করে চলতো পাপিয়ার অনৈতিক ব্যবসা

স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তি ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০০০ সালের দিকে নরসিংদী শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমনের উত্থান শুরু। শৈশব থেকেই চাঁদাবাজি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ব্ল্যাকমেইল ছিল সুমনের প্রধান পেশা। দূরদর্শী চতুর ও মাষ্টারমাইন্ড সুমন রাজনীতিবিদদের সাথে আতাত গড়ে তোলেন। ২০০১ সালে পৌরসভার কমিশনার মানিক মিয়াকে যাত্রা প্যান্ডেলে গিয়ে হত্যার পর সে আলোচানায় আসে। এরই মধ্যে পাপিয়া চৌধুরীকে বিয়ে করে সুমন। এরপর তার স্ত্রী পাপিয়াকে রাজনীতিতে কাজে লাগায়।

প্রয়াত মেয়র লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ডের পর দুরবৃত্তায়ন রোধকল্পে বর্তমান মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল সন্ত্রাসী সুমন ও তার স্ত্রী পাপিয়া চৌধুরীকে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে আসতে নিষেধ করেন। পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের বিভাজনকে কেন্দ্র করে পাপিয়া চৌধুরী ও তার স্বামী সুমন সদর আসনের এমপির বলয়ে যোগ দেয়। পাশাপাশি তারা ঢাকা সংরক্ষিত আসনের মহিলা এমপি সাবিনা আক্তার তুহিনের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে।

আরও পড়ুন: মহিলা লীগ নেত্রী থেকে পতিতা ও মাদক সম্রাজ্ঞী

এরই মধ্যে ২০১৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর জেলা যুব মহিলা লীগের সম্মেলনে তৌহিদা সরকার রুনা সভাপতি ও পাপিয়া চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রয়াত নেতা আসাদোজ্জামানের স্মরণসভায় বিশাল শোউাউন আর শত শত লোকজন নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতিটি মিছিল, সভায় তারা যোগ দেয়। এছাড়াও স্থাণীয় এমপির সভা-সমাবেশে তাদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। রাজনীতিতে তারা স্থানীয় এমপির সমর্থক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাবসায়ী জানায়, ব্ল্যাকমেইলই তাদের প্রধান পেশা। তারা প্রথমে সুন্দরী নারীদের পাঠায়। তারপর কৌশলে ধনাঢ্য ব্যক্তিরে ভিডিও ধারণ করে। পরে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়।

জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসিবুল ইসলাম মিন্টু বলেন, খারাপ লোকের ব্যক্তিগত দায় ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগ কেন নিবে। তারা এমপি’র লোক। তিনি ভাল বলতে পারবেন।

নরসিংদী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভুইয়া বলেন, তারা স্থানীয় এমপি নজরুল ইসলামের লোক হিসেবে পরিচিত। অনেকদিন ধরেই পাপিয়া নানা অপকর্মে জড়িত। এমপি হঠাৎ তাকে যুব মহিলালীগে ভিড়িয়েছেন। এর দায় তাকেই নিতে হবে।

এদিকে অসামাজিক কার্যকলাপ, অবৈধ কর্মকাণ্ড ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার পাপিয়াকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। দুপুরে যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আকতার ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অপু উকিল স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ কথা জানানো হয়।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত