ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫১ মিনিট আগে
শিরোনাম

আম্পানের তাণ্ডবে সর্বস্বান্ত মৎস্য চাষি ফরিদুল

  কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৪ মে ২০২০, ২০:২৩

আম্পানের তাণ্ডবে সর্বস্বান্ত মৎস্য চাষি ফরিদুল

ফরিদুল ইসলাম। বয়স সবে ৩৫। সংসারে সুখ আনতে পেশা পরিবর্তন করে মাছ চাষ শুরু করেন তিনি। ছিলেন নির্মাণ শ্রমিকের সহকারী। ২০১৩ সালে তিনি বর্গা নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। তরুণ উদ্যোক্তা এরশাদ নামের এক মৎস্য চাষির সাথে দু'জন বর্গায় মাছ চাষ করছেন।

এ বছর তাদের পুকুরে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ মণ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মজুদ ছিলো। প্রাকৃতিক খাদ্যে পরিপূর্ণ থাকায় প্রতিবছরই ভালো লাভ হয়। তবে ঘূর্ণিঝড় আম্পাণের প্রকোপে টানা বৃষ্টিতে পুরো এলাকা পানিতে একাকার। ধানক্ষেত আর মাছের পুকুর পানিতে সবই এখন জলাশয়ের রুপ নিয়েছে। টানা বৃষ্টির পানিতে পুকুরের মাছ সাঁতার দিয়েছে পুরো এলাকায়। এদিকে ফরিদুল-এরশাদের স্বপ্ন গুলো পানিতেই ভেসে গেলো প্রায়।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নের কচুবাড়ীয়া এই দুই মৎস্য চাষি ধার-দেনা করে পুকুরে মাছ মজুদ করেছিলো। রোজার পরে বাজারজাত করার আশা ছিলো। এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে টানা দু'দিন বৃষ্টি।

মাছ চাষি ফরিদুল ইসলাম জানান, নির্মাণ শ্রমিকের সহকারী হিসাবে কাজ করতাম। এর পরে স্থানীয় যুবক এরশাদের সাথে পুকুর বর্গা নিয়ে মাছ চাষ শুরু করি। প্রথমে ২০১৩ সালে বিঘাপ্রতি সাড়ে ৭ হাজার টাকা হিসাবে ৫ বিঘা পুকুর বর্গা নিয়ে মাছ চাষ শুরু করি। রুই, মৃগেল, গ্রাসকার্প, সিলভার কার্প, কাতলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের মিশ্র চাষ করি। এতে বেশ ভালো লাভ হয়। এর পরে আর পেছনে তাকায়নি।

তিনি বলেন, এ বছর ১২ বিঘা পুকুর বিভিন্ন মেয়াদে চুক্তিভিক্তিক ও বর্গা নিয়ে মাছ চাষ করেছি। এরশাদ ও আরো একজনের সহায়তা নিয়ে তিনজন মিলে মাছ চাষ করেছি। ব্যাংক ও এনজিও থেকে ৯০ হাজার টাকা লোন নিয়েছি। ধার-দেনা করে মাছ দিয়েছি পুকুরে।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৩৩ মণ মাছের পোনা দেয়া হয়েছিলো পুকুরে। এর মধ্যে দশ মণ রুই, দুই মণ মৃগেল, পাঁচ মণ গ্রাসকার্প, সাত মণ জাপানি (মিনারকার্প), দুই মণ কাতলা ও দুই মণ মনোসেক্স তেলাপিয়া। গত বছর ৭৫ হাজার টাকার মাছ দিয়েছিলাম। মাছ বিক্রি করেছিলাম ২ লাখ টাকার বেশি। এ বছর ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার মাছ ৪ মাস আগেই দিয়েছি। ৩ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করবো বলে আশা করেছিলাম।

আরেক মাছ চাষি এরশাদ বলেন, কচুরিপানার, টোপা পানাসহ পুকুরে প্রচুর পরিমানে প্রাকৃতিক খাদ্য রয়েছে। এ জন্য আমাদের এখানে দ্রুৎ মাছ বাড়ে। এছাড়া বাড়তি খাবারও দেওয়া লাগে না। এ বছর মাছের বেশ ভালো বৃদ্ধি হয়েছে। চার মাস আগে মাছ দিয়েছিলাম। এখন সেগুলো বেশ বড় বিক্রির উপযোগী হয়েছে।

তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে টানা দুইদিন বৃষ্টি। বুধবার (২০ মে) সারারাত ঝড় আর বৃষ্টি। এলাকায় পানি নিস্কাশনের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় পুকুরের চারপাশ পানিতে তলিয়ে গেছে। মাছ পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। এতে ব্যপক ক্ষতি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ঝড়ের রাতে মানুষ যখন বাড়িতে সারারাত আমরা দুজন পুকুরের পাড়ে, চোখের সামনে চারিদিক থেকে পানি বৃদ্ধি পেয়ে পুকুরের পাড় তলিয়ে যায়। ধানক্ষেত, পুকুর সব একাকার হয়ে যায়। ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ বের হতে দেখেও কিছুই করার ছিলো না।

মিরপুর উপজেলা মৎস্য অফিসার রাজিবুল ইসলাম জানান, সরকারিভাবে এখনো কোন নির্দেশনা আসেনি। যদি নির্দেশনা আসে তাহলে ক্ষতিগ্রস্থ মৎস্য চাষিদের সহযোগিতা করা হবে। আমরা ইতিমধ্যে এলাকা জরিপ করে ক্ষতিগ্রস্থদের তথ্য সংগ্রহ করছি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত